Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Petrol

পেট্রল-ডিজেল নিয়ে ভোটের আগে ‘চমক’ চায় প্রচারে জ্বালানি-জ্বালায় নাজেহাল বিজেপি

দুই জ্বালানিকে জিএসটি-র আওতায় আনলে দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে বরাবরই দাবি বিজেপি তথা কেন্দ্রের।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:০১
Share: Save:

১০০ টাকা ছুঁই-ছুঁই পেট্রলের লিটার প্রতি দাম। পাল্লা দিচ্ছে ডিজেলও। দুই জ্বালানির দামই বেড়েই চলেছে। বিরাম নেই। একই অবস্থা রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রেও। বুধবার মধ্যরাতে ফের ২৫ টাকা দর বেড়েছে বাড়িতে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের। এই নিয়ে চলতি মাসে তিন বারে মোট ১০০ টাকা দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে এর জবাব দিতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল বিজেপি নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ডাকতে চাইছে বিজেপি। তারা মরিয়া চেষ্টা সেই বৈঠকে জ্বালানিকে জিএসটি-র আওতায় আনার জন্য। নিয়ম অনুযায়ী, এর জন্য জিএসটি কাউন্সিলের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন। সেই ব্যবস্থা যাতে করা যায়, তার জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ‘বিশেষ তৎপরতা’ শুরু করেছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।

দুই জ্বালানিকে জিএসটি-র আওতায় আনলে দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে বরাবরই দাবি বিজেপি তথা কেন্দ্রের। পাশাপাশিই তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যের বাধাতেই তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, এখনকার নিয়মমতো পেট্রল-ডিজেলের উপরে কেন্দ্র নির্দিষ্ট হারে শুল্ক নিলেও বিভিন্ন রাজ্য আলাদা আলাদা হারে ‘ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স’ (ভ্যাট) বসায়। এর ফলে বিভিন্ন রাজ্যে এই দুই জ্বালানির দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেটা সব থেকে বেশি মহারাষ্ট্রে এবং সবচেয়ে কম আন্দামান-নিকোবরে। কিন্তু জিএসটি চালু হলে দেশের সর্বত্র একই দাম থাকবে।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। এর মধ্যে বিজেপি-র কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বাংলায়। নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে রাজ্য জুড়ে প্রচারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্য নেতাদের। এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হল রান্নার গ্যাসের দামও। রাজ্য নেতারা এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের দর কিংবা রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির টাকার কথা বললেও জনগণ সেটা কী ভাবে নিচ্ছে, তা নিয়ে দলের ভিতরেই আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ই-স্কুটারে চেপে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবান্ন-যাত্রা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে বিজেপি-র উপর। পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর ওই অভিনব কর্মসূচি রাজ্য জুড়ে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। শুক্রবার থেকে গোটা রাজ্য জুড়ে ওই বিষয়ে তৃণমূলের আন্দোলনে নামার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। ফলে চাপ আরও বেড়েছে বিজেপি-র। ক’দিন আগেই দুই জ্বালানি থেকে লিটার পিছু ১ টাকা করে সেস কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে রাজ্য। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।

রাজ্য বিজেপি অবশ্য কেন্দ্র চাইলেও এতদিনেও পেট্রল, ডিজেলে জিএসটি চালু না হওয়ার জন্য অমিতকেই দায়ী করছে। ১ টাকা সেস কমানো বা মমতার ই-স্কুটারে চাপাকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জিএসটি-র বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং সহর্ষ অনুমোদন সর্বজনবিদিত। কিন্তু সোনা, মদ এবং পেট্রোপণ্যকে জিএসটি-র আওতায় আনার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অবস্থান সকলেরই জানা। মুখ্যমন্ত্রী ১ টাকা ছাড় দিয়েছেন। আমরা তো শুনি ওঁর অনেক বড় হৃদয়। উনি তো ১ টাকা নিজে রেখে বাকিটা অন্যদের দিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু কার্যত তিনি সেটা করেননি।’’ শমীকের এই বক্তব্যই রাজ্য বিজেপি তাদের ভোটের প্রচারেও বলছে। তবে সূত্রের খবর, খুব তাড়াতাড়ি জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে ‘চমক’ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে কেন্দ্র। ক’দিন আগেই ভোটমুখী তামিলনাড়ুতে গিয়ে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। চেন্নাইয়ে নাগরিক ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘‘জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকারই এর থেকে রাজস্ব আয় করে। তবে, পেট্রোপণ্যকে জিএসটি-র আওতায় আনার কথা ভাবা যেতে পারে।’’ জ্বালানির মুল্যবৃদ্ধি রুখতে সেটিই একমাত্র সম্ভাব্য সমাধান বলেও দাবি করেন নির্মলা।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্মলাই জিএসটি কাউন্সিলের প্রধান। গত মঙ্গলবার পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও ওই ব্যাপারে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র প্রথম থেকেই পেট্রল-ডিজেলকে জিএসটি-র আওতায় আনার পক্ষে। সাধারণ মানুষও এতে উপকৃত হবেন। তাই পেট্রোপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে লাগাম টানতে দ্রুতই তাকে জিএসটি-র আওতায় আনা হতে পারে।’’ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্রর ওই বক্তব্য জানার পরে আশায় রয়েছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারাও। আশাবাদী গলায় অনেকেই বলছেন, ‘‘এ বার বড় পদক্ষেপ হবে। বড় চমক দেখা যাবে ভোটের আগেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Petrol West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE