Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Kalyani University

ছাড়া পেলেন সহ-উপাচার্য, জারি তরজা

রেজিস্ট্রারকে সরানো নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে।

—ফাইল ছবি

—ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানে বসে অসুস্থ হয়ে পড়া সহ-উপাচার্য গৌতম পাল আপাতত অনেকটাই ধাতস্থ। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্তচাপ ওঠানামা করা ছাড়াও ঠান্ডা মেঝেতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে তাঁর শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু শনিবার সারা দিনেও উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ তাঁকে দেখতে না আসায় তাঁর বিরোধীরা সমালোচনায় সরব।

রেজিস্ট্রারকে সরানো নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। শুক্রবার পছন্দসই ঘরে বৈঠক করার অনুমতি না পেয়ে উপাচার্যের সামনেই করিডরে অবস্থানে বসে পড়েন সহ-উপাচার্য। বিকেলে ওই জায়গাতেই তিনি অসুস্থ হন। রক্তচাপ ওঠানামা করতে থাকে। ওই সন্ধ্যা থেকেই হাসপাতালে ভিড় করে রয়েছেন তাঁর অনুগামী শিক্ষক ও আধিকারিকেরা। সারা দিন তাঁর অধীনে গবেষণারত পড়ুয়ারাও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবকুপা ইউনিটের নেতারাও সারাক্ষণ ছিলেন।

উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যের দ্বন্দ্ব ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনীতির প্যাঁচ কষা চলছে। এ দিন বিকেলে তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র এক প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে এসে সহ-উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের বক্তব্য, এক জন সহ-উপাচার্য মেঝেতে বসতে বাধ্য হলেন। তবু উপাচার্য কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করলেন না। এই অবস্থা চলতে পারে না। পুরো বিষয়টি উচ্চ শিক্ষা দফতরে তাঁরা জানাবেন। সংগঠনের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক সুজয়কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘এত কিছুর পরেও উপাচার্য দেখতে আসেননি। এটা মানবিকতার কাজ হল কি না, তা ভাবার বিষয়।’’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের তরফে সহ-উপাচার্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন করা হচ্ছে। ওয়েবকুপা সরাসরিই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সদস্যদের একটা বড় অংশ আবার বামমনস্ক। সমিতির প্রায় সব পদেই তাঁরা রয়েছেন। তাঁরাই পুজোর ছুটির আগে বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই ক্ষেত্রে তাঁরা এখনও প্রকাশ্যে কারও পক্ষ নেননি। তবে বাম শিক্ষক ও কর্মচারীদের একাংশের দাবি, কাল, সোমবার তাঁরা অচলাবস্থা কাটাতে পদক্ষেপ করবেন।

শুক্রবাই উপাচার্য জানিয়েছিলেন, সোমবার দীর্ঘ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে, কী ভাবে পুরো আইন-বিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো হচ্ছে। তা জানার পরে সহ-উপাচার্যের শিবিরও প্রস্তুতি নিচ্ছে পাল্টা শ্বেতপত্র প্রকাশ করার। সুজয় মণ্ডলের দাবি, ‘‘এই উপাচার্যের আমলে নিয়োগে বহু স্বজনপোষণ হয়েছে। সরকারের অনুমতি ছাড়া বহু কাজ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দিনের পর দিন নেমে গিয়েছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মসমিতিকে অন্ধকারে রেখে অনেক কাজ করা হয়েছে। সে সব শ্বেতপত্রে প্রকাশ করা হবে।’’

এ দিন সহ-উপাচার্যকে দেখতে হাসপাতালে যান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর প্রামাণিক। তাঁদের এই যাওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রবীর বলেন, ‘‘স্যর তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁকে দেখতে যাওয়া আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।’’ তবে বাম শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তথা সিপিএমের পরিচিত নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম শিক্ষকদের উপাচার্যের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। শিক্ষক সমিতির এক নির্বাচিত বাম সদস্যের দাবি, ‘‘ওই নেতা বেশ কিছু শিক্ষককে বলেছেন এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যের পাশে থাকতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের সমীকরণ যা তাতে সকলেই নেতার কথা শুনবেন বলে মনে হয় না।’’

দুপুরে সহ-উপাচার্য দাবি করেন, ‘‘আইন মেনেই আমি কাজ করছি। কোন ধরনের কাজ আইন সমর্থন করে না তা আমি আমার দীর্ঘ অধ্যাপনা জীবনে জানি।’’ উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে হাসপাতালে দেখতে না যাওয়া বা অন্য অভিযোগ বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়াও মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Kalyani University Protest Pro VC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy