Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

Draupadi Murmu: বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর ‘দলীয়’ বৈঠকে বিতর্ক

যাঁরা প্রার্থী হন, তাঁরা সব দলের কাছেই ভোটের আবেদন জানান। কিন্তু দ্রৌপদী বাংলায় এসে শুধু বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গণ্ডি টেনে দিলেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৬:১০
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার কলকাতায় বিজেপি সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করলেন এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। তবে তিনি রীতি মেনে সব দলের কাছে ভোট দেওয়ার আবেদন না জানানোয় উঠছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক পদ। সেই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয় না। তাই যাঁরা প্রার্থী হন, তাঁরা সব দলের কাছেই ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু দ্রৌপদী বাংলায় এসে শুধু একটি দলের সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে গণ্ডি টেনে দিলেন।

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দ্রৌপদী মুর্মু জানেন, তিনি তৃণমূলে একটি ভোটও ভাঙাতে পারবেন না। তাই তিনি সময় নষ্ট করেননি। তিনি নিশ্চিত নন যে, তাঁর দলের সব কটা ভোট পাবেন কি না! তাই তাঁকে হোটেলে গিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে।” যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘উনি ২৯৪ জন বিধায়ক (যদিও এখন রাজ্যে ২৯৩ জন বিধায়ক রয়েছেন, সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পরে মানিকতলায় উপনির্বাচন হয়নি) ও ৪২ জন সাংসদেরই সমর্থন চেয়েছেন। তৃণমূল বিধায়কেরা যদি দেখা না করতে চান, কী করা যাবে? উনি তো মুখ্যমন্ত্রীকেও ফোন করে সমর্থন চেয়েছিলেন।” বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা চিঠি লিখে সব বিধায়ক, সাংসদদের সমর্থনের আবেদন করেছিলাম। কেউ তাই নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, কেউ প্রত্যাখ্যান করেছেন, কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা কী করতে পারি?”

হাওড়ায় এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি আবার দ্রৌপদীর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সাংসদ বা বিধায়কের সাক্ষাৎ না-হওয়া নিয়ে বলেন, ‘‘এই ধরনের সৌজন্যবোধ কি তৃণমূলের থেকে আশা করেন? এক জন গরিব, জনজাতি মহিলাকে কি মমতাদি সমর্থন করতে পারেন না? উনি কি গরিব, জনজাতিদের বিরুদ্ধে?’’

গেরুয়া শিবির যা-ই দাবি করুক না কেন, এ দিনের বৈঠক কার্যত ‘দলীয় সভা’তে পরিণত হয়। দলীয় পদাধিকারীরাও বৈঠকে যোগ দেন। যাঁদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানের অধিকারই নেই, তাঁরা কেন বৈঠকে থাকলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “বৈঠকেআমি আমন্ত্রিত ছিলাম না। তাই মন্তব্য করব না।”

সোমবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, জি কিষান রেড্ডি, সর্বানন্দ সোনওয়াল প্রমুখ। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিংহ, শুভেন্দুরা। সকালে সিমলা স্ট্রিটে বিবেকানন্দের বাসভবনে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান দ্রৌপদী। পরে বাইপাসের ধারে হোটেলে বৈঠক করেন। সেখানে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রও। দেবী দুর্গার মুখের আদলে ছৌয়ের মুখোশ, কালী প্রতিমার ছবি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হলেও দুই সাংসদ ও পাঁচ বিধায়ক বৈঠকে ছিলেন না। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার, দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বা তামাং, কার্শিয়াঙের বিধায়ক বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা বৈঠকে ছিলেন না।। দলীয় সূত্রের খবর, কবি ভানু ভক্তের জন্মদিন উপলক্ষে পাহাড়ে কর্মসূচি থাকায় উত্তরের বিধায়কেরা আসতে পারেননি। ছিলেন না রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীও। অসুস্থ থাকায় না আসার কথা আগে জানিয়েছিলেন বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ী। পবন সিংহকে তৃণমূলের মঞ্চে দেখা যাওয়ায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিজেপি।

এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর গলায় এ দিন হঠাৎই শোনা যায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। যা এ রাজ্যে তৃণমূল ব্যবহার করে। দলীয় প্রার্থীর গলায় তৃণমূলের স্লোগান শুনে বেশ ঘাবড়ে যান বিজেপি নেতারা। সূত্রের খবর, বৈঠকে দ্রৌপদী বলেছেন, বাংলা এবং ওড়িশার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। চৈতন্য মহাপ্রভু সেই সম্পর্ককে সুদৃঢ় করেছেন। তাঁর বাড়ি বাংলা লাগোয়া একটি গ্রামে। তিনি চান, বাংলার সব বিধায়ক এবং সাংসদ তাঁকে সমর্থন করুন। তার পর এক সময়ে তিনি বলেন, ভারত মাতা কি জয়, জয় ভারত, জয় বাংলা। শমীক বলেন, ‘‘বৈঠকে ছিলাম না। তবে যদি তিনি এমন কিছু বলেও থাকেন... উনি তো বাংলা ভাষায় সড়গড় নন। পশ্চিমবঙ্গ নামের তাৎপর্য, তার ইতিহাস এবং তার সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কী সম্পর্ক, সেই নিয়ে আসমুদ্র হিমাচল বিজেপি কর্মীদের বোঝাপড়া আছে।” কুণালের পাল্টা কটাক্ষ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগানই বাংলার স্লোগান। এটা বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকেও স্বীকার করতে হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির নেতারা ভবিষ্যতে যেন এই স্লোগান নিয়ে প্রশ্ন না তোলেন!”

বৈঠক শেষে বেরিয়ে দিলীপ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছেন, আগে জানলে ভেবে দেখতাম। আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে ওঁর দলের অনেক বিধায়ক-সাংসদই দ্রৌপদীকে ভোট দেবেন।” পাল্টা কুণালের দাবি, “যশবন্ত সিন্হাকে যিনি প্রথম ভোট দেবেন, তাঁর নাম দিলীপ ঘোষ! বিজেপির জনবিরোধী নীতিতে বিরক্ত হয়ে বিজেপির অনেক সাংসদ-বিধায়কই যশবন্তকে ভোট দেবেন।”

দ্রৌপদীর জন্য ‘বিবেক ভোট’ দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু, তার পাল্টা এ দিন বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘যদি বিবেকের রাজনীতি থাকত, তা হলে এই দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন হত না। যে দল দেশের মানুষের বিবেকের খবর রাখে না, তাদের এই আবেদন অর্থহীন বলে মনে হয়!” জনজাতি ভাবাবেগের কথা ভেবে দ্রৌপদীর পুরোপুরি বিরোধিতা করতে পারছেন না তৃণমূল নেত্রী, আবার জাতীয় স্তরে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্য থেকেই যশবন্তকে প্রার্থী করেছেন— এই উভয় সঙ্কটের কথা বলে মমতাকেও বিঁধেছেন অধীরবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Presidential Election Draupadi Murmu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE