Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Poster Controversy

লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ বড়, মনীষীর চেয়ে বড় রাজনীতিক, ছবি কথা বলে, ঠিক বলে কি?

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রায়ই বাংলায় আসতেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই পর্যায়েই এক বার বোলপুর এসেছিলেন তিনি। সে বার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি বিশেষ ধরনের হোডিং তৈরি করা হয়।

মনীষীদের চেয়ে রাজনীতিকদের ছবির গুরুত্ব পাচ্ছে।

মনীষীদের চেয়ে রাজনীতিকদের ছবির গুরুত্ব পাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:০৪
Share: Save:

অনেকে বলছেন, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়! অনেকে আওড়াচ্ছেন প্রচলিত চার লাইন, ‘মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী’। তাঁরা ভুল করছেন না। গত কয়েক বছর ধরে বাংলায় এমনই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেখানে মনীষীর চেয়ে পোস্টার, হোর্ডিংয়ে বড় আকারে আবির্ভূত হচ্ছেন রাজনীতিকেরা। বাংলার শাসক তৃণমূল বা প্রধান বিরোধী বিজেপি— কেউই এই ‘ব্যাধি’ থেকে মুক্ত নয়।

এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। বৃহস্পতিবার, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে আরও এক বার ঘটল। স্বামীজির জন্মদিনে তাঁর বসতবাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কারও নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘স্বামীজির জন্মভিটেয় আসার সময় দেখলাম, একজন কার্বাইডে পাকানো নেতাকে স্বামীজির থেকেও বড় করে দেখানো হচ্ছে। এই সংস্কৃতি ভাল না।’’ শুভেন্দু নাম করেননি। কিন্তু ‘কার্বাইডে পাকানো নেতা’ বলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। শুভেন্দুর দাবি, কলকাতা শহরের রাস্তায় স্বামীজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি-সম্পৃক্ত এমন হোর্ডিং তিনি দেখেছেন, যেখানে অভিষেকের ছবি স্বামীজির চেয়ে বড় আকারে রয়েছে। অর্থাৎ, লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, অভিষেকও বৃহস্পতিবার স্বামীজির বসতভিটেয় গিয়েছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁর ফেসবুক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, স্বামীজি ছিলেন উচ্চতম আদর্শের মানুষ। বিশেষত, যুব সম্প্রদায়ের জন্য। ‘জাতীয় যুবদিবস’ উপলক্ষে সারা দেশের যুবসমাজকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। সেখানে অবশ্য এই ধরনের কোনও বিতর্ক দেখা দেয়নি।

শুভেন্দু বৃহস্পতিবার বিতর্ক তুলেছেন বটে। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিভিন্ন সময়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বাংলার বিজেপিও। যেমন দেখা গিয়েছিল গত বছর বাংলায় বিধানসভা ভোটের সময়।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রায়ই প্রচারের জন্য বাংলায় আসতেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই পর্যায়েই একবার বোলপুরে এসেছিলেন তিনি। শাহের সফর উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি বিশেষ ধরনের হোডিং তৈরি করা হয়েছিল। হোডিংয়ে রবীন্দ্রনাথের স্কেচ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু সেটির চেয়ে অমিতের ছবি ছিল অনেক বড় আকারে। এহ বাহ্য। অমিতের ছবির চেয়ে ছোট রবীন্দ্রনাথের ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল অমিতের ছবির নীচে। সেই হোর্ডিংয়ের নীচে আবার দেওয়া হয়েছিল বোলপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অনুপম হাজরার ছবি। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং। সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বেরও কড়া সমালোচনা করেছিল তৃণমূল। বিতর্ক চাপা দিতে শেষ পর্যন্ত যাবতীয় ‘বিতর্কিত’ হোর্ডিং সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল বিজেপি।

বৃহস্পতিবার পৃথক সময়ে স্বামীজির সিমলার বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার পৃথক সময়ে স্বামীজির সিমলার বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

তার পরেও বিভিন্ন সময়ে যুযুধান উভয় দলের তরফেই এমন প্রবণতা দেখা গিয়েছে। কোনও মনীষীর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোকে উপলক্ষ করে আসলে নেতা-মন্ত্রীরা নিজেদের জনসংযোগ প্রক্রিয়াতেই আরও খানিকটা শান দিয়ে নেন। এ সব ক্ষেত্রে দলের ‘অত্যুৎসাহী’রা নেতাদের হোর্ডিং বা পোস্টারের দায়িত্বে থাকেন। অনেক সময় তাঁদের বাড়াবাড়ি উৎসাহের ফলেই বিপত্তি ঘটে। যেখানে আক্ষরিক অর্থেই বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় হয়ে যায়। কারণ, দলের ওই উৎসাহীদের কাছে আসল ‘মনীষী’ হলেন সংশ্লিষ্ট নেতা। তিনিই লক্ষ্য। মনীষী উপলক্ষ মাত্র। বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও অত্যুৎসাহীরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। কিন্তু এই প্রবণতা বন্ধ করা যায়নি। অনেক সময় রাজনীতিকদের অগোচরেও তাঁদের অনুগামীরা এমন ঘটনা ঘটিয়ে বসেছেন।

তবে যখনই এই ধরনের কোনও ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, তখনই পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তোলার চেষ্টা হয়েছে বলে খেদ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। তাঁর মতে, ‘‘নব্বইয়ের দশকের পর থেকে যে সব রাজনীতিক রাজ্য রাজনীতিতে এসেছেন, তাঁদের মধ্যেই মূলত এই প্রবণতা দেখা যায়। ষাট-সত্তরের দশকে এমন ব্যানার বা হোডিং দেওয়ার কথা নেতা-নেত্রীরা ভাবতেই পারতেন না। নেতারা এখন জগদ্বিখ্যাত মনীষীদের দিয়ে নিজেদের প্রচার করতে চাইছেন। নিজেকে গৌরবান্বিত করার চেষ্টা করছেন। এতে মনীষীদের অসম্মান হচ্ছে।’’

বর্তমান রাজনীতিকদের এমন আচরণে বিরক্ত রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া কংগ্রেসের নেতা কুমুদ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও রাজনীতি করেছি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটাইনি বা দেখিওনি। এখনকার রাজনীতিকরা প্রচারের জন্য মনীষীদের ব্যবহার করেন। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হল নিজেকে তুলে ধরা। এই ধরনের ঘটনাকে নোংরা রাজনীতি হিসেবে দেখি। এ সব নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Suvendu Adhikari TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy