স্বামী বিবেকানন্দই নবরূপে নরেন্দ্র মোদী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছেন দাবি করলেন সৌমিত্র খাঁ। নিজস্ব ছবি।
নামের যোগসূত্রে আবারও ‘এক বন্ধনীতে’ স্বামী বিবেকানন্দ এবং নরেন্দ্র মোদী! স্বামী বিবেকানন্দই নবরূপে নরেন্দ্র মোদী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে এ বার মন্তব্য করলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। স্বামীজির ১৬০তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিজেপি সাংসদের এমন মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তা নিয়ে রসসিক্ত কটাক্ষও চলছে। তৃণমূল এক ধাপ এগিয়ে যাঁরা এমন বলেন, তাঁদের ‘মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছে।
‘দুই নরেন্দ্র’কে এক করে বিজেপি নেতাদের ‘প্রচার’ অবশ্য নতুন কিছু নয়। অতীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে দাবি করেছিলেন, “…আমাদের গর্ব, নরেন্দ্র দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ) নরেন্দ্র মোদীর আত্মায় প্রবেশ করেছেন। ভারত একবিংশ শতাব্দীর অগ্রণী দেশ হয়ে ওঠার চৌকাঠে।” আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের মন্তব্য, ‘‘এক নরেন্দ্র (দত্ত) যে একবিংশ শতকের ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করছেন আর এক নরেন্দ্র (মোদী)।’’ মোদী-বন্দনার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন সৌমিত্র।
বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুরের মাড়ুইবাজার এলাকায় স্বামীজির মূর্তিতে মালাদান করেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ। তার পর তিনি বলেন, ‘‘স্বামীজি আমাদের কাছে ভগবানতুল্য। উনি যুব সমাজের নয়নের মণি। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদী নিজের মাতৃবিয়োগের পরেও যে ভাবে দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, তাতে আমার মনে হয়, আধুনিক ভারতে স্বামীজি নবরূপে নরেন্দ্র মোদী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছেন।’’
যা শুনে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে নরেন্দ্রনাথ দত্তকে দেখতে পান, তাঁদের মস্তিষ্ক মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিরল মস্তিষ্ক। তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। তাঁদের মস্তিষ্ক কোন দিকে যাচ্ছে, তার অভিব্যক্তি আর অভিযোজন খতিয়ে দেখা উচিত।’’
বিরোধীদের দাবি, ভোট-রাজনীতির কথা মাথায় রেখে মোদীর জন্য সংসারত্যাগী, নির্লোভ, সৎ, অনলস কর্মযোগীর ভাবমূর্তি সযত্নে রেখে দিয়েছে তাঁর দল। মোদীও প্রায়ই দাবি করেন, তাঁর নিজের কোনও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই। দেশসেবাতেই তাঁর জীবন নিয়োজিত। মোদীকে ‘আজকের নরেন্দ্র’ বলে বর্ণনা করার এই প্রবণতাও বিজেপির সেই রাজনৈতিক কৌশলেরই অঙ্গ বলেই দাবি করে বিরোধীরা।
সৌমিত্রের মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্যের খাদ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন, ‘‘সাংসদের মানসিক বিকৃতি ঘটেছে। উনি কখন কোন দলে থাকেন, কখন কী বলেন, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। উনি কখনও প্রধানমন্ত্রীকে স্বামীজি হিসাবে দেখতে পাচ্ছেন তো কখনও রামকৃষ্ণ দেব হিসাবে দেখেন! এ বার না বলে বসেন যে, প্রধানমন্ত্রী শাহরুখ খান হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই ধরনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেওয়াই বৃথা।’’
দল নির্বিশেষে ক্ষমতাবানের ভজনা ও স্তুতি এ দেশের রাজনীতিতে গা-সওয়া। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, এডিএমকে থেকে বিএসপি— শীর্ষ নেতা বা নেত্রীর বেলাগাম স্তুতি বার বার শোনা যায় প্রত্যেক দলের নেতা-কর্মীদের মুখে। ঘটনাচক্রে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মা সারদা রূপে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে দাবি করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা চিকিৎসক নির্মল মাজিও। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘‘...মা সারদা বলেছিলেন, মৃত্যুর এত দিন পরে কালীঘাটের কালীক্ষেত্রে মানুষ রূপে জন্ম নেব। ত্যাগ, তিতিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যাব। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে মা সারদার মৃত্যুর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মের সময়টা সেই অঙ্ক মিলিয়ে দিচ্ছে।’’ নির্মলের আরও দাবি ছিল, ‘‘তিনিই (মমতা) মা সারদা, তিনিই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, সিস্টার নিবেদিতা, খড়ের দুর্গা। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে তাঁর জন্ম, তাই মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু সবেতেই তিনি পাশে রয়েছেন।’’
নির্মলের এমন মন্তব্য ঘিরে সেই সময়েও বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। বিবৃতি জারি করে বিধায়কের দাবি খণ্ডন করতে হয়েছিল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনও। বলা হয়েছিল, নির্মলের বক্তব্যে সারদাদেবীর মর্যাদাহানি হয়েছে। তৃণমূলও নির্মলের বক্তব্যকে তখন ‘কুৎসিত চাটুকারিতা’ বলে অভিহিত করেছিলেন কুণাল। এ বার সৌমিত্রের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যে চর্চায় উঠে আসেন নির্মলও। সেই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার কুণাল শুধু বলেন, ‘‘ওটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, এক জনের কাজের সঙ্গে আর এক জনের কাজের তুলনা হতেই পারে। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও তুলনা নির্লজ্জ চাটুকারিতা ছাড়া আর কিছু নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy