শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘দিন ঘোষণা’র হুঙ্কার নিয়ে এ বার বিজেপির মধ্যেই মতের অমিল ফুটে উঠল। স্পষ্ট হল বিরোধী দলের দুই নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষের মধ্যে বিভাজনরেখাও।
বেশ কিছু দিন ধরে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, ডিসেম্বরে ‘বড় চোর’ ধরা পড়বে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি ১২, ১৪, ২১ তিনটি তারিখের দিকে নজর রাখার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, “অপেক্ষা করুন আর দেখতে থাকুন।” সোমবার তৃতীয় দফায় আরও কিছুটা সরে এসে শুভেন্দু যা জানালেন, তার মূল কথা হল, কয়লা পাচার মামলার সূত্রে সুপ্রিম কোর্টে এ দিন যে শুনানি ছিল, তা ১৩ জানুয়ারি পিছিয়ে গিয়েছে। শুভেন্দুর আশা, ওই দিন আদালত কিছু একটা রায় দেবে। সোমবার হাজরার সভা থেকে তিনি বলেন, “১২ ডিসেম্বরটা ১৩ জানুয়ারি হতে পারে কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারি হবে না। এই রাজ্যের ধেড়ে ইঁদুরকে খাঁচার ওপারে যেতেই হবে।” আজ, মঙ্গলবার শুভেন্দুর সভাস্থলে পাল্টা সভা করার কথা তৃণমূলের। সূত্রের খবর, সভায় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর উপস্থিত থাকার কথা।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের বক্তব্য শুভেন্দু আসলে অভিষেককে দিল্লিতে ডেকে জেরা করতে চাওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ওপর যে ভাবে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হচ্ছে সেদিকে তাকিয়েই বড় চোর ধরা পড়া সংক্রান্ত মন্তব্যগুলি করে চলেছেন। এ দিন তিনি আরও বলেন, “কয়লা পাচারে ২৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তার হাজার কোটি টাকা বাবুসোনা নিয়েছে। যিনি কথায় কথায় বলেন এক টাকা নিয়েছি প্রমাণ করতে পারলে নিজেই ফাঁসির দড়ি গলায় পরব। তিনি তদন্ত বাধা দিতে কেন বার বার আদালতে যাচ্ছেন? সাহস থাকলে তদন্তের মুখোমুখি হন।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “সুদীপ্ত সেন আদালতে জানিয়েছেন শুভেন্দু সাত কোটি টাকা নিয়েছে। ওকে ক্যামেরার সামনে নারদায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। সিবিআইয়ের এফআইআরে নাম থাকা প্রতিষ্ঠিত চোর। ও যা বলবে, তার উত্তর দিতে হবে নাকি!”
এ দিকে শুভেন্দুর এই ‘দিন ঘোষণা’-র রাজনীতিকে আমল দিতে রাজি নন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দিলীপ এ দিন দিল্লিতে বলেন, “১২ তারিখ কি হবে জানি না। আমার তো কিছু মনে হচ্ছে না। ১২, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর সম্ভবত তিনটি মামলার দিন ছিল বলে আমি জানি। আদালতে কী ফয়সালা হবে জানি না। তাই আদালতের উপর ভিত্তি করে কিছু বলা যায় না। রাজনীতিতে এই তারিখের কোনও গুরুত্ব নেই।” সুকান্তর বক্তব্য, “শুভেন্দুদা তারিখ বলেছেন। আমি ওঁর মতো কোনও দিন বলতে চাই না। তবে বলতে চাই সবার দিন আসবে।”
অন্য দিকে, হাজরার সভা থেকে দিলীপের উদ্দেশে নাম না করে কটাক্ষ ছুড়ে শুভেন্দুর শ্লেষ, “আমি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গিমিকে বিশ্বাস করিনা। আমি মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে মিডিয়াতে বাইট দিয়ে বেড়াই না। আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলি।” দিলীপ অবশ্য আর কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আর কোনও কথাও বলেননি। তবে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বিষয়টিকে স্বাভাবিক কারণেই আড়াল করতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, “শীত পড়বেই। নিম্নচাপের কারণে কয়েক দিন হয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের সময় যাঁরা উঁচু বাড়িতে থাকেন, তাঁদের কষ্ট হবে। তবে সেখানেই শেষ নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে বসন্তও আসবে।”
কুণালের পাল্টা বক্তব্য, “ভাঙা কাচ কি সেলোটেপ দিয়ে জোড়া যায়? ডিসেম্বরের সার্কাস চলছে! এখন তো বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী বাঘ, সিংহ নিয়ে সার্কাস হয় না। তাই এক জোকার আর দুই তোতা খেলা দেখাচ্ছে।” লালন শেখের মৃত্যুর তদন্তে ‘ডেড লাইন’-এর প্রসঙ্গ টেনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গ্রেফতারও দাবি করেছেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা ১২ তারিখের যে উল্লেখ করেছিলেন, তার সঙ্গে এই মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক আছে কি না তা জানতে শুভেন্দুকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy