পোলিয়োর প্রতিষেধক দিচ্ছেন আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ক্যানিং ১ নম্বর ব্লকে। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আকাশের মুখ আচমকা ভার। গতিক ভাল নয় দেখে বেগুনি রঙের শাড়ি পরা প্রৌঢ়া হাঁক ছাড়লেন, ‘‘কই গো, গেলে কোথায়? বাচ্চাকে বের করো...!’’
কিন্তু ক্যানিং ১ ব্লকের রবীন্দ্রনগর দিয়ে বয়ে চলা ঘুটিয়ারি শরিফ খাল আর তার পাশের রাস্তা তো মিলেমিশে একাকার। তাই তিন বছরের নাতিকে নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন মনরা মোল্লা। তাঁকে আসতে বারণ করে জল ঠেলে এগিয়ে গেলেন প্রৌঢ় আশাকর্মী মণিকা বিশ্বাস দাস। জলের গভীরতা ক্রমশ বাড়ছে। তা কতটা, ঠাহর করতে না পেরে মণিকার সঙ্গী লতা হালদার মাথায় তুলে নিলেন পোলিয়ো টিকার বাক্স। দিদিরা বাড়ির কাছে যেতেই কোমর সমান জলে এগিয়ে গেলেন মনরা-ও। প্রতিষেধক খাওয়ানো শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি। মনরা বললেন, ‘‘সাবধানে যাও গো দিদি, তোমরাই তো আমাদের ভরসা।’’ ভিজে চুপচুপে শাড়ির আঁচলে মাথা ঢাকার ফাঁকেই মণিকা বললেন, ‘‘ঠিক মতো হাঁটতে পারি না, হাই ব্লাডপ্রেশার। কিন্তু মা-বাচ্চাগুলোকে বড্ড ভালবেসে ফেলেছি। তাই না এসে পারি না।’’
রাজ্য জুড়ে চলছে পাঁচ দিনের পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচি। মঙ্গলবার ছিল তারই তৃতীয় দিন। এ দিন শুধু কোমর সমান নয়, প্রায় গলা পর্যন্ত জলে নেমেও বাচ্চাদের প্রতিষেধক খাওয়াতে পিছপা হননি ক্যানিং-১ ব্লকের আশাকর্মী, এএনএম (অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ)-রা। রবিবার প্রকাশ্যে এসেছিল ক্যানিং-২ ব্লকের সিংহেশ্বর গ্রামে জলের মধ্যে হাঁড়িতে শোওয়ানো সদ্যোজাতকে আশাকর্মীর প্রতিষেধক খাওয়ানোর ছবি। মঙ্গলবার ক্যানিং-১ ব্লকের রবীন্দ্রনগর নবপল্লি সাব সেন্টার, পিয়ালি ছাটুইপাড়া ঘুরে চোখে পড়ল একই দৃশ্য।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জলমগ্ন সব জায়গায় এমন ভাবেই কাজ চলছে বলেই জানালেন এক স্বাস্থ্য আধিকারিক। ‘‘এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি, পারিশ্রমিক কত জানেন?’’ প্রশ্ন করলেন রবীন্দ্রনগরের আশাকর্মী ফাল্গুনী পাত্র মণ্ডল। ‘‘পোলিয়ো টিকা খাওয়ানোর জন্য দৈনিক ৭৫টা বাড়ি ঘুরে পারিশ্রমিক ৭৫ টাকা। তা-ও পাব দু’মাস পরে!’’ উত্তর দিয়েই হাঁক পাড়লেন ফাল্গুনী, ‘‘চাঁদনি, ভেলাটা নিয়ে আয়...’’ কথা শেষ হতেই প্লাস্টিকের বোতল আর কাঠের পাটাতনের ভেলা নিয়ে হাজির সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া চাঁদনি। জলে নিজেদের যাতায়াতের জন্যই ভেলাটা তৈরি করেছে সে। ‘আশা-দিদি’রা এলেই ভেলা নিয়ে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে সে।
টিকার বাক্স নিয়ে ভেলায় চেপে বসলেন ফাল্গুনী পাত্র মণ্ডল। ভেসে-ভেসেই পৌঁছলেন সালমা বিবির বাড়ি। হাঁক শুনেই দেড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এলেন তরুণী মা। বললেন, ‘‘এত জলে বাচ্চা নিয়ে দূরে যাওয়া যাবে না। দিদিরা কষ্ট করে বাড়ির সামনে আসছেন, তাই আমরাও জলে নামছি।’’ আর ফাল্গুনী বলছেন, ‘‘হাতে মাত্র দুই দিন রয়েছে। বাচ্চাগুলোকে টিকা খাওয়ানো তো শেষ করতে হবে।’’
এত ঝুঁকি নিয়ে কাজের পরেও, তাঁরা বঞ্চিত বলেই আক্ষেপ ‘পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন’-র রাজ্য সম্পাদক ইসমত আরা খাতুনের। তিনি জানালেন, ‘‘সাড়ে চার হাজার টাকা ফিক্সড। এ ছাড়া, মা-শিশু সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য মেলে ইনসেনটিভ। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তা-ও বাকি। পুজোর বোনাসও মেলেনি এখনও। কোভিডের কাজ থেকে পোলিয়ো টিকাকরণ, সব কাজই করতে হয়।’’ একই আক্ষেপ শোনা গেল এএনএম (২) অনিতা ছাটুইয়ের গলাতেও।
পিয়ালির ছাটুইপাড়া সাব সেন্টার এলাকার ধান জমি এখন জলের তলায়। সেই ‘জলাশয়ে’ নেমে পড়লেন অনিতা ও সঙ্গী আশাকর্মী। দিদিদের দেখে বাচ্চাদের নিয়ে প্রায় গলা সমান জল ঠেলে একে একে এগিয়ে আসতে লাগলেন মা, দাদুরা। তাঁদেরই এক জন বিশ্বজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘‘বাড়ির সামনে আরও বেশি জল আছে। তাই দিদিরা কিছুটা আসছেন, আমরাও কিছুটা এগিয়ে আসছি।’’ এত জলে নেমে কাজ করছেন? প্রশ্নের করতেই সহজ উত্তর এল। ‘‘কী আর করা যাবে! জল বলে তো বাচ্চাদের টিকা বন্ধ রাখা যাবে না। চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করি। ফিক্সড বেতন আছে, সেটা চাকরির মেয়াদের সঙ্গে বাড়ে। ওই পর্যন্তই।’’ বললেন অনিতা। টিকাকরণ পর্যবেক্ষণে ছিলেন সিনিয়র পাবলিক হেলথ নার্স (পিএইচএন) উমা বিশ্বাস, পিএইচএন আরতি মিস্ত্রি, এএনএম (১) তিথি মণ্ডলেরাও। একই রকম ভাবে অনিতাদের সঙ্গে জলে নামলেন তাঁরাও।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, নিষ্ঠা আজ সারা দেশের নজর কেড়েছে। ওঁরা স্বাস্থ্য দফতরের গর্ব। এত দুর্যোগের মধ্যেও ওঁদের পরিষেবার খবর শুনে প্রশংসা করেছেন মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবও।’’ বোনাস এবং উৎসাহ-ভাতার সমস্যার যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এত ঝুঁকি নিয়ে কাজের পরেও, তাঁরা বঞ্চিত বলেই আক্ষেপ ‘পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়ন’-র রাজ্য সম্পাদক ইসমত আরা খাতুনের। তিনি জানালেন, ‘‘সাড়ে চার হাজার টাকা ফিক্সড। এ ছাড়া, মা-শিশু সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য মেলে ইনসেনটিভ। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তা-ও বাকি। পুজোর বোনাসও মেলেনি এখনও। কোভিডের কাজ থেকে পোলিয়ো টিকাকরণ, সব কাজই করতে হয়।’’ একই আক্ষেপ শোনা গেল এএনএম (২) অনিতা ছাটুইয়ের গলাতেও।
পিয়ালির ছাটুইপাড়া সাব সেন্টার এলাকার ধান জমি এখন জলের তলায়। সেই ‘জলাশয়ে’ নেমে পড়লেন অনিতা ও সঙ্গী আশাকর্মী। দিদিদের দেখে বাচ্চাদের নিয়ে প্রায় গলা সমান জল ঠেলে একে একে এগিয়ে আসতে লাগলেন মা, দাদুরা। তাঁদেরই এক জন বিশ্বজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘‘বাড়ির সামনে আরও বেশি জল আছে। তাই দিদিরা কিছুটা আসছেন, আমরাও কিছুটা এগিয়ে আসছি।’’ এত জলে নেমে কাজ করছেন? প্রশ্নের করতেই সহজ উত্তর এল। ‘‘কী আর করা যাবে! জল বলে তো বাচ্চাদের টিকা বন্ধ রাখা যাবে না। চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করি। ফিক্সড বেতন আছে, সেটা চাকরির মেয়াদের সঙ্গে বাড়ে। ওই পর্যন্তই।’’ বললেন অনিতা। টিকাকরণ পর্যবেক্ষণে ছিলেন সিনিয়র পাবলিক হেলথ নার্স (পিএইচএন) উমা বিশ্বাস, পিএইচএন আরতি মিস্ত্রি, এএনএম (১) তিথি মণ্ডলেরাও। একই রকম ভাবে অনিতাদের সঙ্গে জলে নামলেন তাঁরাও।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, নিষ্ঠা আজ সারা দেশের নজর কেড়েছে। ওঁরা স্বাস্থ্য দফতরের গর্ব। এত দুর্যোগের মধ্যেও ওঁদের পরিষেবার খবর শুনে প্রশংসা করেছেন মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবও।’’ বোনাস এবং উৎসাহ-ভাতার সমস্যার যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy