দে পরিবারের দুই বধূরই গলা এবং হাতের শিরা কাটা হয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে সুদেষ্ণা দে এবং রোমি দে-র। প্রশ্ন উঠছে, দুই বধূর গলা, হাতের শিরা কেটেছিলেন কে? প্রসূন দে দাবি করেন, ওই মহিলারা নিজেরাই নিজেদের হাত কেটেছিলেন। প্রণয় দে-র দাবি, হাত কাটার পরিকল্পনা ছিল প্রণয়ের। তিনি ভয়ে নিজের হাত কাটতে পারেননি। মহিলাদের যখন হাত কাটা হয়, তখন তিনি বাড়ির অন্যত্র ছিলেন। দুই ভাইয়ের এই বয়ানই ধন্দ তৈরি করছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পাশাপাশি, কিশোর প্রতীপ দে-র বয়ানও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সে দাবি করেছে, তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন কাকা প্রসূন। তার বয়ানে কিছু ‘খটকা’ রয়েছে পুলিশের। সে সত্যি বলছে কি না, যাচাই করে দেখা হচ্ছে। প্রণয়, প্রসূন এখন কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি। দিন কয়েকের মধ্যে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে হাসপাতাল থেকে। তার পরে তাঁদের গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ময়নাতদন্ত করার সময়ের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছিল প্রসূনের কিশোরী মেয়ে প্রিয়ম্বদা দে-র। তিন মহিলার ময়নাতদন্ত হয়েছিল ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে। সেই হিসাবে, ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল বা দুপুরের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল তার। অর্থাৎ, দে পরিবারে নিহত তিন মহিলার মধ্যে তারই প্রথম মৃত্যু হয়। সুদেষ্ণা এবং রোমির মৃত্যু হয়েছিল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে। তাঁদের গলা এবং হাতের শিরা কাটা হয়েছিল। সেই কাজ কে করেছিলেন? প্রসূন পুলিশি জেরায় দাবি করেছেন, নিহত দুই বধূ নিজেরাই নিজেদের হাতের শিরা কেটেছিলেন। এই প্রসঙ্গে প্রণয়ের দাবি, মহিলারা যখন হাত কেটেছিলেন, তিনি তখন বাড়ির অন্য দিকে ছিলেন। তাই জানেন না। তবে হাত কাটার পরিকল্পনা প্রসূনের ছিল, এমনটাই দাবি করেছেন প্রণয়। তাঁর আরও দাবি, ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। সেই পরিকল্পনা যখন ভেস্তে যায়, তখন আর নতুন করে কোনও পরিকল্পনা করেননি তিনি। ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে দে পরিবারের ছ’জনই ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়েছিলেন।
ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস, হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার পরিকল্পনা যখন ব্যর্থ হয়, তখন গাড়িতে চেপে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন প্রণয়, প্রসূন। সঙ্গে ছিল কিশোর। তাঁরা দাবি করেছেন, রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মরতে চেয়েছিলেন তিন জন। প্রণয়ের দাবি, ওই পরিকল্পনা দুই ভাই মিলেই করেছিলেন। এর মধ্যে কিশোরের কিছু দাবি নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। সে শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে দাবি করেছে, তাকে মুখে বালিশ চেপে ধরে মারার চেষ্টা হয়েছিল। সেই চেষ্টা করেছিলেন কাকা প্রসূন। তার এই বয়ান খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ট্যাংরার অটল শূর রোডে দে পরিবারের বাড়ি থেকে জিমের কিছু সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, সেগুলি দুই ভাই ব্যবহার করতেন। যদিও প্রতীপ দাবি করেছে, সে শরীরচর্চা করত। তার শক্তি বেশি ছিল। সেই কারণে তার মা, কাকিমা, দিদিকে খুনের পরে তাকেও বালিশ চাপা দিয়ে মারতে এসেছিল কাকা প্রসূন। কিন্তু শক্তি বেশি থাকায় মারতে পারেনি। পারিবারিক ব্যবসায় মন্দার কথাও সে আঁচ করেছিল বলে দাবি করেছে কমিশনের কাছে। প্রতীপ এ-ও দাবি করেছে, দাবা খেলে টাকা রোজগার করে পরিবারের অনটন দূর করতে চেয়েছিল সে। প্রতীপ কোথাও যোগ বা জিম করতে বা দাবা শিখতে যেত কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ সব প্রশ্নের জবাব পেতে নথি-প্রমাণ সংগ্রহ করছে পুলিশ। দে বাড়িতে বসানো রয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। তার ফুটেজও খতিয়ে দেখতে চাইছে পুলিশ। যদিও ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফুটেজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দে ভাইদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, যবে থেকে তাঁরা আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছিলেন, তবে থেকে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
- সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
-
ট্যাংরাকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কিশোর প্রতীপের বয়ান! গোপন জবানবন্দি নিতে নির্দেশ কোর্টের
-
কাকে কখন খুন? সব ঠিক বলছেন কি? প্রসূনকে ট্যাংরার বাড়িতে নিয়ে গেল পুলিশ, হল ঘটনার পুনর্নির্মাণ
-
কন্যা প্রিয়ম্বদার পা চেপে ধরেছিলেন মা রোমি, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেন তিনিই! দাবি প্রসূনের
-
আইনজীবী রাখতে চাইছেন না ট্যাংরাকাণ্ডের প্রসূন! বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠাল আদালত
-
স্ত্রী, মেয়ে ও বৌদিকে খুন! দে বাড়ির ছোট ছেলে ট্যাংরাকাণ্ডে গ্রেফতার, সোমেই ছাড়া পান হাসপাতাল থেকে