হাল ছাড়লে চলবে না। বিপদের মুখে বুদ্ধি স্থির রেখে এগোতে পারলে উদ্ধার পাওয়া যে অসম্ভব নয়, সেটা দেখিয়ে দিল পাচার হয়ে যাওয়া কিশোরী জাহানারা খাতুন (নাম বদল)। পাচার চক্রের হাতে পড়েও নিজের বুদ্ধি আর পুলিশের তৎপরতায় বেঁচে গিয়েছে ওই কিশোরী। আপাতত দিল্লির এক হোমে ঠাঁই হয়েছে তার। নতুন বছরেই পুলিশ আর পরিবারের সদস্যদের হাত ধরে সে ফিরে আসছে বা়ড়িতে।
পুলিশি সূত্রের খবর, ১৪ নভেম্বর ভাঙড় থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় দশম শ্রেণির পড়ুয়া জাহানারা। মোবাইলে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়েছিল ওই কিশোরী। আর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না-পেয়ে দ্বারস্থ হন পুলিশের। কিন্তু প্রথম দিকে কোনও লাভ হয়নি।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দাদাকে ফোন করে বলে, ‘‘দাদা, বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই।’’ সে জানায়, ওসমান নামে যুবক তাকে দিল্লিতে এনে এক মহিলার কাছে বেচে দিয়ে পালিয়েছে। তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ওই মহিলার অনুপস্থিতিতে সেই মোবাইল হাতে পেয়ে ফোন করছে সে। ফোন পেয়েই জাহানারার দাদা দৌড়ন ভাঙড় থানায়। থানার এক অফিসারকে পুরো বিষয়টি জানালে তিনি জাহানারাকে ফোন করেন এবং তাকে কোনও রকমে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে জনবহুল জায়গায় পৌঁছতে বলেন। সেই অনুসারে মেয়েটি কোনও মতে পালিয়ে গিয়ে পৌঁছয় পুরনো দিল্লি স্টেশনে। সেখান থেকে এক অচেনা ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে ফের ফোন
করে দাদাকে।
আর দেরি করেননি ভাঙড় থানার আধিকারিক। তিনি দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ফোন করে মেয়েটির কথা জানান। তার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে পুরনো দিল্লির স্টেশন থেকে জাহানারাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, এই ধরনের আর-পাঁচটা মেয়ের থেকে জাহানারার ভাগ্য একটু ভাল। ভিন্ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে বেচে দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। তবে কোনও যৌন পল্লিতে পৌঁছে দেওয়ার আগেই তাকে উদ্ধার করা গিয়েছে। পুলিশের তৎপরতাতেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুলিশকর্তা এবং দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের দাবি। দু’পক্ষই বলছে, স্বয়ংসিদ্ধার জন্য পুলিশের নিচু তলায় সচেতনতা বাড়ছে। তারই দৌলতে এত তাড়াতাড়ি জাহানারাকে উদ্ধার করা গিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ঋষিকান্ত বলেন, ‘‘এই ধরনের সংগঠিত অপরাধ দমন করতে আন্তঃরাজ্য সংস্থাগুলির সহযোগিতা সব সময়েই দরকার। এই ঘটনায় সেই সমন্বয় ও সহযোগিতা ছিল বলেই মেয়েটিকে উদ্ধার করা গিয়েছে। এটিই স্বয়ংসিদ্ধার সুফল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy