Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
rape

Police inaction: তরুণী ‘নিগ্রহ’, প্রশ্নে পুলিশ

অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও এন্টালির এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা।

প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা। প্রতীকি ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৫:০৮
Share: Save:

এক মূক ও বধির তরুণীকে নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিয়েছিল পুলিশ। সেই ঘটনায় তরুণীর গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা হল অভিযোগ দায়ের হওয়ার চার মাসেরও বেশি সময় পরে! একজন ‘ইন্টারপ্রিটারের’ উপস্থিতিতে আদালতে সেই তরুণীই দাবি করলেন, নিগ্রহ নয়, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও এন্টালির এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

আইনজীবীদের বড় অংশের দাবি, ফৌজদারি কার্যবিধিতে এমন ধরনের অভিযোগ পুলিশের কাছে পৌঁছনো মাত্র গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করার নির্দেশ রয়েছে। সেখানে গোপন জবানবন্দির দিন পেতে এত দেরি হল কেন? সেইসঙ্গেই প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা না জানাতে পেরেই কি তরুণীকে আদালতে গিয়ে এ কথা জানাতে হয়েছে? তরুণী প্রথম যে দিন থানায় গিয়েছিলেন, সে দিন কি কোনও ইন্টারপ্রিটারের সাহায্য পেয়েছিলেন?

ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্তার দাবি, গত ২ জুলাই ওই তরুণী এন্টালি থানায় গিয়ে নিগ্রহের কথা জানান। সেই সময় অভিযুক্ত এক যুবকের নাম করে তিনি বুঝিয়েছিলেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেছেন ওই যুবক। অভিযোগে আরও তিন জনের কথা জানালেও, তরুণী ধর্ষণের কথা বোঝাননি। এরপর কেটে যায় প্রায় সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময়। গত সোমবার আদালতে তরুণীর গোপন জবানবন্দির দিন ধার্য হয়। সেখানেই এক ইন্টারপ্রিটারের উপস্থিতিতে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তরুণী দাবি করেন। এরপরই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণ মামলা রুজু করে পুলিশ। সোমবার বিকেলেই থানায় ডেকে পাঠানো হয় চার অভিযুক্তকে। ওই চার জনও মূক ও বধির। সন্ধ্যায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে পুলিশ গণ-ধর্ষণ হয়নি বলে দাবি করেছে।

থানায় অভিযোগ জানাতে যাওয়া যে কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের (এ ক্ষেত্রে মূক ও বধির) তো শুরু থেকেই ইন্টারপ্রিটার বা স্পেশাল এডুকেটরের সাহায্য পাওয়ার কথা! এ ক্ষেত্রে হয়তো তরুণীর বক্তব্য বোঝার দায়ই পুলিশ অনুভব করতে পারেনি।
জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, আইনজীবী

লালবাজারের এক কর্তার দাবি, তরুণী যে ধৃতদের পূর্ব পরিচিত তা বোঝা গিয়েছে। ঘোলার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রথম বন্ধুত্ব হয়। এরপর পরিচয় হয় বাকি তিন জনের সঙ্গে। তবে অভিযুক্তেরা এবং অভিযোগকারিণী মূক ও বধির হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রে জানাচ্ছে, প্রথম যে দিন তরুণী থানায় গিয়েছিলেন সে দিন কোনও ইন্টারপ্রিটার সঙ্গে ছিলেন না। এমনকি, গোপন জবানবন্দির জন্য একজন ইন্টারপ্রিটারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছে পুলিশের। সেই কারণেই গোপন জবানবন্দির দিন ধার্য করতে দেরি হয়েছে। পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে শহরে বেশ কিছু স্পেশাল এডুকেটর বা ইন্টারপ্রিটার থাকলেও যাকে-তাঁকে তো ধরে আনা যায় না! এ ক্ষেত্রে ইন্টারপ্রিটারের অভিজ্ঞতা যেমন একটা ব্যাপার তেমনই পরে মামলা চলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ইন্টারপ্রিটারকে আদালতে হাজির করানোর ব্যাপার থাকে। জবানবন্দির পুরোটাই ভিডিয়ো রেকর্ডিংও করতে হয়। পরে ইন্টারপ্রিটার কোনও ভুল বার্তা দিয়েছেন প্রমাণ হলে মামলা বিগড়ে যেতে পারে। ফলে সব দিক দেখেই ইন্টারপ্রিটার খুঁজতে হয়।’’

আইনজীবীরা বলছেন, ‘‘এ সমস্ত বাধ্যবাধকতার কথা বলে দায় এড়ানো যায় না। পর্যাপ্ত তদন্তের আগেই অভিযুক্তেরা তরুণীর পূর্ব পরিচিত বলা কি যুক্তিসঙ্গত?’’ আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘থানায় অভিযোগ জানাতে যাওয়া যে কোনও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের তো শুরু থেকেই এক জন ইন্টারপ্রিটার বা স্পেশাল এডুকেটরের সাহায্য পাওয়ার কথা! এ ক্ষেত্রে হয়তো তরুণীর বক্তব্য বোঝার দায় পুলিশ অনুভব করতে পারেনি। পারলে, আদালতে পৌঁছে তার পরে আসল অভিযোগ সামনে আসত?’’ এ প্রসঙ্গে লালবাজারের কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি। জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ হলে তবে তা করার প্রশ্ন।

অন্য বিষয়গুলি:

rape Physically disabled Entally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE