ডিএ নিয়ে গ্রেফতার হওয়া সরকারি কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এবং ‘পুলিশি অত্যাচারের’ প্রতিবাদে ক্ষোভ সরকারি কর্মীদের। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কামড়-কাণ্ডের পরে পুলিশ আবার তীব্র সমালোচনার মুখে তো পড়লই। পর্যবেক্ষকদের বড় অংশের বক্তব্য, ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে বুধবার আন্দোলন করতে গিয়ে মার খেয়ে যাঁদের গ্রেফতার হতে হয়েছিল, তাঁদের জামিনে জনমানসে রীতিমতো অপদস্থ হলেন উর্দিধারীরাই। এই নিয়ে বেধে গিয়েছে জোরদার বিতর্ক। ধৃত ৪৭ জন সরকারি কর্মীকে বৃহস্পতিবার কোর্টে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল লালবাজার। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে সকলকেই জামিনে মুক্তি দিয়েছেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক শৌনক মুখোপাধ্যায়।
আদালতের এ দিনের নির্দেশের পরে কর্মীদের অনেকেই কটাক্ষ ছুড়েছেন পুলিশের দিকে। তাঁদের বক্তব্য, কর্মীরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। পুলিশই মারধর করে গ্রেফতার করে। তার পরে হেফাজতেও নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ হওয়ায় মুখ পুড়ল পুলিশেরই। বাহিনীর অন্দরেও ক্ষোভ রয়েছে। এ দিন আদালতে পুলিশকর্মীদের অনেকে কবুল করেন, ন্যায্য ডিএ না-পাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে তাঁদেরও। কিন্তু পেটের টানে চাকরি বাঁচানোর তাগিদেই লাঠি হাতে আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে। বুধবার সরকারি কর্মীদের বিধানসভা অভিযানে পুলিশ ৪৭ জনকে গ্রেফতার করেছিল। রাতভর হাজতবাসের পরে এ দিন তিনটি পুলিশ ভ্যানে তাঁদের কোর্টে আনা হয়। সকাল থেকেই অন্য কর্মীদের ভিড়ে কোর্ট-চত্বর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
সরকারি কর্মীদের আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কোর্টে জানান, ধৃতেরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। বরং পুলিশের আচরণই নিন্দনীয়। পুলিশ জোরজুলুম করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বন্ধ করতে পারে না। ধৃত কর্মীদের জামিনের আর্জি জানান তিনি। সরকারি কৌঁসুলি কোর্টে জানান, মামলার তদন্তকারী অফিসার ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন। তবে সরকারি কৌঁসুলিও জামিনের জোরালো বিরোধিতা করতে পারেননি। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারক নির্দেশ দান সাময়িক ভাবে মুলতুবি রাখেন। বিকেলে জামিনের নির্দেশ ঘোষণা করেন তিনি।
জামিনের নির্দেশ শুনেই কোর্ট-চত্বরে স্লোগান শুরু হয়ে যায়। ডিএ আদায়ের আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান সরকারি কর্মীরা
পুলিশের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে মুখর বিরোধীরাও। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘ব্যারিকেডের এ-পারে এবং ও-পারে যাঁরা ছিলেন, দু’পক্ষেরই ডিএ বাকি। তবু আন্দোলন রুখতে এমন আচরণ? চাকরিপ্রার্থীদের পুলিশ কামড়ে দিচ্ছে, ডিএ-র দাবিতে পথে নামলে জুটছে ঘুষি-লাথি। পুলিশের কোনও বিধিতে তো এমন করার কথা নেই। আচরণ দেখে প্রশ্ন উঠছে, এরা কি ঠিক পথে পুলিশের চাকরি পেয়েছে, নাকি এখানেও দুর্নীতি হয়েছে?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এক শ্রেণির পুলিশের কাজ হয়েছে অপরাধীদের আড়াল করা, লুটের টাকা পাহারা দিয়ে নেতা-মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। হকের দাবিতে আন্দোলনকে পুলিশ দিয়ে রোখা যাবে না। আন্দোলন আরও বাড়বে।’’
বাঁকুড়ার মেজিয়ায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘রাজ্য ডিএ দিতে পারছে না। ভাঁড়ার শূন্য। কোথায় হাতজোড় করে সরকারি কর্মচারী, মাস্টারমশাইদের কাছে বলবে, ‘আমরা দিতে পারছি না, পরে টাকা এলে সময় এলে দিয়ে দেব।’ তা না-করে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের বলছে, ‘ঘেউ ঘেউ করবে না।’ তাঁদের উপরে পুলিশকে দিয়ে আক্রমণ করছে! তৃণমূল কিছু করলে পুলিশ টেবিলের নীচে লুকিয়ে পড়ে। আর যাঁরা আন্দোলনকারী, তাঁরা নামলে পুলিশ বীর হয়ে যায়!”
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তাপস রায় বলেন, ‘‘আন্দোলনের অধিকার নিশ্চয়ই রয়েছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আইনি ব্যবস্থা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, ডিএ-র দাবি সম্পর্কে সরকার সহানুভূতিশীল। আন্দোলন দমনের কোনও প্রবৃত্তি তৃণমূলের নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy