গৌতম গম্ভীর এবং গ্রেগ চ্যাপেল। —ফাইল চিত্র।
গৌতম গম্ভীর কি ভারতীয় ক্রিকেটে দ্বিতীয় গ্রেগ চ্যাপেল? অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার যখন ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন, সেই সময়ই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন গম্ভীর। নিজে কোচ হয়ে চ্যাপেলের সময়ের সেই ‘দল থেকে মহাতারকা সংস্কৃতি দূর করো’ নীতিই নিচ্ছেন গম্ভীর।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই হঠাৎ ভারতীয় ক্রিকেটের গ্রাফ নিম্নমুখী। কোচ হিসাবে রাহুল দ্রাবিড় ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে শেষ করেছিলেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গম্ভীরকে। কিন্তু শুরুতেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে এক দিনের সিরিজ়ে হেরেছিল ভারত। এর পর দেশের মাটিতে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে হার। প্রথম বার কিউয়িদের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ় হেরেছিল ভারত। তার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি হেরে ফিরেছেন রোহিত শর্মারা। ১-৩ ব্যবধানে হারতে হয়েছে সেই টেস্ট সিরিজ়। আর এই সব হারের পরেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন গম্ভীর। কোচের সেই সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের, যা মনে করিয়ে দিচ্ছে চ্যাপেলের সময়কে।
তারকা চান না গম্ভীর
ভারতীয় দলে কিছু পরিবর্তন চেয়েছেন গম্ভীর। তিনি দলে কোনও তারকা চাইছেন না। দলের অনেক ক্রিকেটারই অধিনায়ক হওয়ার জন্য ঝাঁপাচ্ছেন। অনেকের আবার দলে জায়গা পাকা করা লক্ষ্য। কিন্তু কেউই সে ভাবে মাঠে নেমে নিজেকে প্রমাণ করতে পারছেন না। তাই গম্ভীর কাউকে তারকা হিসাবে দেখতে নারাজ। সকলকে সমান গুরুত্ব দিতে চাইছেন তিনি। দলের তারকারা সেটা মেনে নিতে পারবেন তো?
একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া
ভারতীয় দলের সাজঘরে সব কিছু স্বাভাবিক নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, দলের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গম্ভীর। অস্ট্রেলিয়ায় সফরে নাকি গোটা দল একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছে মাত্র এক দিন। বাকি দিন ছোট ছোট গ্রুপে খেতে গিয়েছেন ক্রিকেটারেরা, যা পছন্দ নয় গম্ভীরের।
ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা
অস্ট্রেলিয়ায় সিডনি টেস্টে হারের পরেই গম্ভীর বলেছিলেন সিনিয়র এবং জুনিয়র সব ক্রিকেটারের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা উচিত। তাঁর কথা মেনে শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে নামছেন। রোহিতও রঞ্জি দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। তবে এখনও তিনি খেলবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। দিল্লির প্রাথমিক দলে নাম রয়েছে বিরাট কোহলিরও। কিন্তু তিনি এখনও জানাননি দিল্লির আগামী ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যাবে কি না।
২০২৪ সালে গম্ভীর কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সব ক্রিকেটারকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে বলেছিলেন। তবে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সেই সময় রেহাই দেওয়া হয়েছিল রোহিত, কোহলি এবং জসপ্রীত বুমরাহকে। এ বারেও তাঁরা ছাড় পাবেন? বুমরাহের চোট রয়েছে। ফলে তাঁর রঞ্জি খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই।
পরিবারের থাকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা
আগামী দিনে বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের পরিবারের লোকজনকে পুরো সফরে রাখতে না-ও দেওয়া হতে পারে। ৪৫ দিনের সফরে হয়তো ১৪ দিনের জন্য থাকতে দেওয়া হল। কম দিনের সফর হলে পরিবারের লোকজনের থাকার দিন আরও কমবে। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে বিরাট কোহলি এবং লোকেশ রাহুলের স্ত্রীকে সব ম্যাচেই মাঠে দেখা গিয়েছিল।
যেমন রান, তেমন টাকা
পর পর খারাপ পারফরম্যান্সের পর এ বার ক্রিকেটারদের টাকা কেটে নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। খেলতে না পারলে কম টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে। মনে করা হচ্ছে, তাতে ক্রিকেটারেরা আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলবেন। যে ভাবে বেসরকারি সংস্থায় কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি হয় তাঁদের কাজের নিরিখে, ভারতীয় বোর্ড তেমনই করার কথা ভাবছে। যে ভাল খেলবে সে বেশি টাকা পাবে, যে খেলতে পারবে না সে কম টাকা পাবে। তবে শোনা যাচ্ছে, গম্ভীর নন, কোনও এক ক্রিকেটার এমন প্রস্তাব দিয়েছেন।
যাতায়াতে আলাদা ব্যবস্থা নয়
ক্রিকেটারদের দলের বাসে করে যাওয়া-আসা বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোহলিকে দেখা গিয়েছে নিজের মতো যাতায়াত করতে। সেটাও বন্ধ করতে চাইছে বোর্ড। দল একসঙ্গে বাসে করে হোটেল থেকে মাঠে যাবে, আবার মাঠ থেকে হোটেলে ফিরবে। কারও জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা হবে না। ক্রিকেটারদের তারকাসুলভ আচরণ থেকে বার করে আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
চ্যাপেল-যুগ
২০০৫ সালে ভারতীয় দলের কোচ করা হয়েছিল চ্যাপেলকে। সেই সময় দলের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু কোচ হওয়ার পরেই চ্যাপেল দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়ার কথা বলেন। সেই তালিকায় ছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ, হরভজন সিংহ এবং জাহির খানের মতো ক্রিকেটার। দল থেকে বাদ পড়েছিলেন সৌরভ। নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। তার পরেই চ্যাপেলের বিদায় হয়ে যায়। সচিন তেন্ডুলকরের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারেরা তাঁর প্রশিক্ষণে খুশি ছিলেন না বলে বোর্ডের কাছে রিপোর্ট জমা পড়েছিল।
১৯ ম্যাচ পর গম্ভীর এবং চ্যাপেল
কোচ হিসাবে প্রথম ১৯টি ম্যাচের পর চ্যাপেলের ভারত দু’টি টেস্ট এবং ১১টি এক দিনের ম্যাচ জিতেছিল। ৬৮ শতাংশ ম্যাচ জিতেছিল ভারত। সেখানে গম্ভীর কোচ হওয়ার পর ১৯টি ম্যাচ শেষে ভারত তিনটি টেস্ট এবং ছ’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে। অর্থাৎ, চ্যাপেলের সময় ভারত ১৯ ম্যাচ শেষে জিতেছিল ১৩টি ম্যাচে। গম্ভীরের সময় জিতেছে মাত্র ন’টি। ৪৮ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে ভারত।
চ্যাপেলের তুলনায় গম্ভীরের প্রশিক্ষণে ভারতের অবস্থা খারাপ। তাই গম্ভীরের বজ্র আঁটুনি দেখে ভারতীয় ক্রিকেটে ভয় এখন ফস্কা গেরোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy