পার্বতী সরকারের ছেলেকে সান্ত্বনা এক আত্মীয়ের। ছবি: শৌভিক দে।
তমলুকে যে যুবতীর মুণ্ডহীন দেহ মিলেছিল, বৃহস্পতিবার তাঁর পরিচয় সামনে আসার পর স্পষ্ট, আগাগোড়া মিথ্যে বলে গিয়েছে ধৃত রামপদ মান্না। নিহত যুবতী তার পূর্ব পরিচিত। বাগুইআটির একটি সেলুনে কাজ করত রামপদ। সেখানেই পার্বতী সরকার (৩১) নামে ওই যুবতীর সঙ্গে তার আলাপ বছর খানেক ধরে।
এ দিন তমলুক থানায় এসে পার্বতীর স্বামী সঞ্জীব সরকার, মা বাণী সর্দার যুবতীর দেহ শনাক্ত করেছেন। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে দেহ তাঁরা নিয়েও যান। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন রামপদও জেরায় স্বীকার করেছে, পার্বতীকেই খুন করেছিল সে। তবে ‘নরবলি’র তত্ত্বে পুলিশ আর ষোলো আনা বিশ্বাস রাখছে না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এ দিন বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা অন্য কিছুর যোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পার্বতীর পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, খুনের পরে রামপদ বাগুইআটি ফিরে গিয়ে সেলুনে কাজ করেছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। পার্বতীর বাড়িতে গিয়ে সে এমন ভান করে যেন তক্ষুণি জানল, ওই যুবতীর খোঁজ মিলছে না। পার্বতীর দিদি পূর্ণিমার কথায়, ‘‘রামপদকে বললাম থানায় যেতে, তখন ও রাজি হল না।’’ এ সব থেকে পুলিশের ধারণা, পরিকল্পনা করেই পার্বতীকে মেরেছে রামপদ।
পার্বতীর স্বামী জানিয়েছেন, বছর ষোলো আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। ১৪ বছরের মেয়ে ও বছর বারোর ছেলে রয়েছে। পার্বতীর শ্বশুরবাড়িতে তাঁর শাশুড়ি আলোদেবী বলেন, ‘‘বৌমা ইদানীং খুব মদ্যপান করত। তা নিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে অশান্তি হত। তার জেরে মাস দু’য়েক আগে বৌমা বাপের বাড়ি চলে যায়।’’ পূর্ব নারায়ণতলায় বাপের বাড়ি পার্বতীর। সেখানে তাঁর মা বাণী সর্দারের তেলেভাজার দোকান। স্থানীয় সূত্রে খবর, দোকানে যাতায়াতের সূত্রেই রামপদর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় পার্বতীর। যদিও বাণীদেবীর দাবি, ‘‘মেয়ের সঙ্গে রামপদর সম্পর্ক ছিল কি না জানিনা।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকার ছোটখাটো অনুষ্ঠানে ম্যাজিকও দেখাত রামপদ। এলাকার খুদেদের কাছে সে পরিচিত ছিল ‘ম্যাজিকদাদু’ নামে। পাশাপাশি মন্ত্র-তন্ত্র, ঝাঁড়ফুকও যে সে করত, তা জানিয়েছেন পার্বতীর স্বামী। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার দুপুরেও পার্বতী ফোনে জানতে চাইল, লক্ষ্মীপুজো হবে কি না। বলেছিলাম, তুমি এলে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy