পুলিশি হেফাজতে আসানুর (বাঁদিকে)। নিজস্ব চিত্র
দোকানের গুদামে উদ্ধার হওয়া সন্দেহজনক বস্তু ঘিরে মহালয়ার দিনে বোমাতঙ্ক ছড়িয়েছিল পাঁশকুড়ায়। ওই ঘটনায় শেখ আসানুর আলি নামে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। সাংবাদিক বৈঠক করে তারা জানাল, সন্দেহজনক বস্তুটি ‘ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসে’র (আইইডি) রেপ্লিকা। তবে সেটিতে বিস্ফোরক ছিল কি না, বা থাকলেও তার মাত্রা কত— সেই বিষয়গুলি ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও খোলসা করেনি পুলিশ। তাদের বক্তব্য ফরেন্সিক পরীক্ষার পরেই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হবে।
বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার ঘোষপুর এলাকার সেরহাটি বাজারে কার্তিক গাঁতাইত নামে এক ব্যক্তির ইমারতি সামগ্রীর দোকানের গুদামে টাইম বোমা রয়েছে বলে আতঙ্ক ছড়ায়। সিআইডি’র বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড সেখা গিয়ে ওই সন্দেহজনক বস্তুটিকে নিষ্ক্রিয় করে। ওই রাতেই পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রামগড়ের বাসিন্দা শেখ আসানুরকে গ্রেফতার করে। বছর চব্বিশের আসানুর হায়দরাবাদে মার্বেল মিস্ত্রির কাজ করত।
শুক্রবার তমলুকে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন জেলা পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ইদের কিছুদিন আগে আসানুর বাড়ি ফিরেছিল। কার্তিকের দোকান থেকে সে প্রায় ৩০ হাজার টাকার সামগ্রী নিয়ে ছিল। সেই টাকা সে দিতে পারেনি। এ নিয়ে কিছুদিন আগে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয় বলে পুলিশের দাবি। বকেয়া টাকার কিছু অংশ মিটিয়ে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার আসানুর ফের সামগ্রী নেওয়ার জন্য কার্তিকের দোকানে যায়। সেই সময় সে সবার নজর এড়িয়ে গুদামে ওই ‘আইইডি রেপ্লিকা’টা রেখে দেয়। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই সময় দোকানে ছিলেন কার্তিকের ছেলে রজত। এরপর আসানুর একটি মোবাইল নম্বর থেকে রজতকে চারবার ফোন করে। রজত ফোন না ধরায় আসানুর তাকে হিন্দিতে দুটি এসএমএস পাঠায়। তাতে লেখা ছিল ‘দোকানে টাইম বোমা রাখা আছে। ওই নম্বরে ফোন না করলে এক ঘণ্টার মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দোকান উড়িয়ে দেওয়া হবে’।
যে নম্বর থেকে হুমকি এসএমএস এসেছিল, সেই মোবাইল নম্বরটি ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত এলাকাতেই রয়েছে। সন্দেহ হওয়ায় আসানুরকে বৃহস্পতিবার থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। পুলিশি জেরায় আসানুর ঘটনার কথা স্বীকার করলে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি। বৈঠকে পুলিশ জানিয়েছে, একটি নতুন মোবাইল কিনে তাতে একটি বেনামি সিম কার্ড ব্যবহার করেছিল আসানুর। জেরায় অভিযুক্ত স্বীকার করেছে যে, শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য সে আইইডি’র মতো দেখতে ওই বস্তুটি বানিয়েছিল। যার মধ্যে একটি পাইপের ভেতর স্টোন চিপস ভরে দিয়েছিল। অভিযুক্তের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ঘটনায় ব্যবহৃত একটি ব্যাগ, কিছু বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, পাইপ, স্টোন চিপস উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদব বলেন, ‘‘ওই ইমারতি দোকানের মালিকের কাছে অভিযুক্তের কিছু টাকা বকেয়া ছিল। তাই ভয় দেখানোর জন্য সে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। ইউটিউবের ভিডিয়ো দেখে আসানুর যেটি বানিয়েছে, সেটা আইইডির রেপ্লিকা। জেরায় সে জানিয়েছে, ওর মধ্যে বিস্ফোরক ছিল না।’’ তবে পুলিশ সুপার জানান, সিআইডির বম্ব ডিসপজাল স্কোয়াড বস্তুটি নিষ্ক্রিয় করে তাদের নমুনা দিয়ে গিয়েছে। ওর মধ্যে আদৌ বিস্ফোরক ছিল কি না, বা থাকলেও সেটা কী, তা জানার জন্য ওই নমুনা জেলা পুলিশ ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠাবে। এদিন অভিযুক্তকে তমলুক সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তার ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy