ধৃত আজিজুর রহমান (বাঁ দিকে) হাতুড়ে চিকিৎসক ও কাশ্মীরা বিবি। —নিজস্ব চিত্র
অবশেষে নিউ আলিপুর সারোগেসি-কাণ্ডের জট খুলল পুলিশ। দুর্ঘটনায় নয়, মোটা টাকা হাতাতে রীতিমতো ছক কষেই গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছিলেন মথুরাপুরের গর্ভদাত্রী মহিলা কাশ্মীরা বিবি। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রে খবর, মন্দিরবাজার থানা এলাকার এক হাতুড়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রথমে ভ্রূণ নষ্ট করে তার পর ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে গর্ভপাত করান ওই মহিলা। তাঁকে সাহায্য করেন এক সঙ্গী। গর্ভদাত্রী মহিলা আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। শুক্রবার মহিলার সাহায্যকারী এবং হাতুড়ে চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিল করে দেওয়া হয়েছে ওই চিকিৎসকের নার্সিংহোম।
কিছু দিন আগে নিঃসন্তান এক দম্পতির অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, ওই দম্পতির কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন ওই মহিলা। পুলিশ গ্রেফতার করার পর তিনি জানান, দুর্ঘটনায় গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার পর নিজেই ভ্রূণটি ফেলে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু, এই গল্প পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করেই ঘটনার কিনারা করেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিউ আলিপুরের এক নিঃসন্তান দম্পতির সঙ্গে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে গর্ভ ভাড়া দেওয়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন কাশ্মীরা। তাঁর দেখভালের দায়িত্বও নিয়েছিলেন ওই দম্পতি। কিন্তু আচমকাই গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে কাশ্মীরা নিখোঁজ হযে যান। হতাশ দম্পতি নিউ আলিপুর থানার দ্বারস্থ হন। কাশ্মীরার মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গোপাল মালিকের নার্সিং হোমে ভর্তি এক রোগী। —নিজস্ব চিত্র
আরও পডু়ন: বিধবার সন্তান হলে সমাজে একঘরে হবেন, আশঙ্কায় বেপাত্তা হয়েছিলেন গর্ভদাত্রী!
তার পর শুরু হয় জেরা ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কোনও মেডিক্যাল সাপোর্ট ছাড়া ওই মহিলার দাবি মতো ভ্রূণ বের করে আনা সম্ভব নয়। তদন্তে উঠে আসে, ১১ ডিসেম্বর থেকে ১১ জানুয়ারির মধ্যে তাঁর গর্ভপাত হয়েছে। পরে জানা যায়, নাম বদলে মা আম্বিয়া বিবির সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে যান। সেখানে ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন।
কিন্তু গর্ভের সন্তান কী করে মারা গেল— এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান প্রসবের আগে ১৪ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্দিরবাজার থানা এলাকার সদাশিবপুরে ছিলেন তিনি। তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পারেন, গোলাপ মালিক নামে মন্দিরবাজারের এক হাতুড়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রথমে গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট করেন কাশ্মীরা। তার পর ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে গিয়ে গর্ভপাত করান। স্থানীয় এক ব্যক্তি আজিজুর রহমানের মাধ্যমে কাশ্মীরা গোপালের কাছে পৌঁছন। তাঁকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এ ভাবেই কাঠের চৌকি দিয়ে বানানো হয়েছে রোগীদের জন্য বেড। গোপাল মালিকের নার্সিংহোমে। —নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: করোনা আশঙ্কা ঢুকে পড়ল অসম-কাশ্মীরেও, আজ মোদী-হর্ষবর্ধন জরুরি বৈঠক
কিন্তু কে এই গোপাল মালিক? তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, গোপাল মালিক এলাকায় ‘গোপাল ডাক্তার’ নামেই এলাকায় পরিচিত। বছর তিনেক একটি বেসরকারি হাসপাতালের ‘ওটি বয়’ হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। উচ্চমাধ্যমিক পাশ। গোপাল ডাক্তারির ছদ্মবেশে নিজের বাড়ির একটা অংশ কার্যত নার্সিং হোমে পরিণত করে ফেলেছে। বাড়ির ছ’টি ঘরে আটটি বেড রয়েছে। সেখানে রোজ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী দেখেন। এখনও পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি অস্ত্রোপচার করে ফেলেছেন তিনি। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতারের পর ওই নার্সিং হোম সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গর্ভপাত করানোর জন্য কাশ্মীরা বিবি গোপালকে চার হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এই টাকার বিনিময়ে গর্ভপাত করাতে প্রথমে কাশ্মীরা বিবিকে কিছু ওষুধ খাওয়ান ওই হাতুড়ে চিকিৎসক। তারপর প্রসববেদনা শুরু করার জন্য আরও কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কাজ না হলে তখন গোপাল ডাক্তার তাঁকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানেই মৃত সন্তান প্রসব করেন কাশ্মীরা।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় মূল ছবিটির সঙ্গে একটি নার্সিংহোমের ছবি দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক ওই নার্সিংহোমে কাজ করতেন। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে ওই নার্সিংহোমের কোনও যোগ নেই। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy