বাতিল একাধিক ট্রেন।—ছবি দেশকল্যাণ চৌধুরী
জগন্নাথ ধাম দর্শন সেরে ফেরার পথে এমন ভোগান্তি!
ভাবতেই পারছেন না দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা অলোক চট্টোপাধ্যায়। সমুদ্র সৈকতে কয়েক দিনের ছুটি কাটিয়ে পরিবার নিয়ে রবিবার সকালেই তাঁর ফেরার কথা ছিল কলকাতায়। কিন্তু তা না হয়ে, উল্টে এ দিন সকাল থেকে একবার পুরীর স্টেশন তো একবার পরিবহণ সংস্থার কাছে চক্কর কাটছেন অলোকবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘দেখি, যদি কোনও ভাবে কলকাতায় ফেরার একটা ব্যবস্থা করতে পারি।’’
গত ৯ ডিসেম্বর দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা অলোকবাবু ও তাঁর স্ত্রী গোধূলি চট্টোপাধ্যায়, দিদি চন্দ্রিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, জামাইবাবু কিরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মিলে পুরী গিয়েছিলেন। পরের দিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর সকালে যখন সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে ছিলেন তখনও তাঁরা জানতেন না, পাঁচ দিনের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে চরম ভোগান্তি অপেক্ষা করছে। জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি অলোকবাবুরা অল্পবিস্তর খবর পেয়েছিলেন নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় জ্বলছে অসম-ত্রিপুরা। কিন্তু সেই আগুন যে পশ্চিমবঙ্গেও জ্বলে উঠে তাঁদের বাড়ি ফেরার পথের ‘কাঁটা’ হবে সেটাও ভাবতে পারেনি ওই পরিবারটি।
শুধু অলোকবাবু নন। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ট্রেন অবরোধ, রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মাসুল দিতে হচ্ছে আরও অনেককেই। কেউ হয়তো জরুরি কাজে কোথাও যাবেন বলে রাস্তায় বেরিয়ে আটকে গিয়েছেন। কেউ আবার ট্রেন বাতিল হওয়ায় স্টেশনেই অপেক্ষায় বসে রয়েছেন। কারও ছেলের কাছে ঘুরতে যাওয়ার টিকিট থাকলেও বুঝতে পারছেন না আদৌ তাঁরা ভাল ভাবে ট্রেনে উঠে রওনা দিতে পারবেন কি না।
গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের পুরী-শিয়ালদহ দুরন্ত এক্সপ্রেসে টিকিট কাটা ছিল অলোকবাবুদের চার জনের। সেই মতো ট্রেন ছাড়ার বেশ কিছু ক্ষণ আগেই ব্যাগপত্তর নিয়ে পুরীর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। প্রথমে জেনেছিলেন ট্রেনটি ছাড়বে ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরে সেটিও পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। অলোকবাবু বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন হতেই আবার সেখানে গেলাম। আবার অপেক্ষা। বেশ কিছু ক্ষণ পরে ঘোষণা হল ট্রেন বাতিল। খবরটা শুনেই স্টেশন মাস্টারের ঘরে ছুটলাম। কিন্তু উনি বললেন, ‘ট্রেন বন্ধ ও চালু করার আমি কেউ নই। যা নির্দেশ আসবে তাই করতে হবে।’’
রবিবার সকাল পর্যন্ত হোটেলে বুকিং থাকলেও শনিবার সন্ধ্যায় ট্রেন থাকায় ওই দিনই ঘর ছেড়ে দিয়েছিলেন অলোকবাবুরা। কিন্তু ট্রেন বাতিল হওয়ায় শেষমেশ কোনও উপায় না দেখে ফের ফিরে গিয়েছেন সেই হোটেলেই। অলোকবাবু বলেন, ‘‘রবিবার সকাল হতেই আবার ছুটেছি পুরী স্টেশনে। ধৌলি ও শতাব্দী এক্সপ্রেস ছেড়েছে শুনলাম। স্টেশনে রেলের এক আধিকারিক থেকে আর এক জনের কাছে গেলাম, যদি টিকিটের কোনও বন্দোবস্ত করা যায়। কিন্তু কোনও ট্রেনেই কোনও টিকিট নেই। আর বিমানের টিকিট তো আগুন।’’ অলোকবাবুর দাবি, পরিচিত এক পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন চার জনের ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতা বিমান ভাড়া লাগবে ৪৭ হাজার টাকা। তাই বিমানের চিন্তা ছেড়ে পুরীর এক পরিবহণ সংস্থার এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে সড়ক পথে কলকাতা ফেরার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। তবে প্রথমে গাড়ি ভাড়া ১০ হাজার টাকা থাকলেও চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা ১৫ থেকে ১৮ হাজার হয়েছে।
যাই হোক! আপাতত কোনও মতে সুস্থ ভাবে সড়ক পথেই কলকাতা ফিরতে চান অলোকবাবুরা। তাই রবিবার সন্ধ্যায় সেই ভাড়া গাড়ি নিয়েই কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছেন চার জনে। কিন্তু রহড়ার দম্পতি প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনিতাদেবী জানেন না সোমবার সকালে তাঁরা হায়দরাবাদে যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে পারবেন কি না। সেখানে তাঁদের ছেলে থাকেন। দেড় বছরের নাতনিকে দেখার জন্য হাওড়া থেকে ফলকনামা এক্সপ্রেস ধরার কথা প্রলয়বাবুদের। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘জানি না সোমবার সকালে কী হবে। রবিবার তো হাওড়া থেকে ট্রেন না ছেড়ে খড়্গপুর থেকে ছেড়েছে। কিন্তু সড়ক পথেও তো সমস্যা। কী ভাবে যে কী হবে জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy