Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC leader Jiban Krishna Saha

একটি পুকুরের আত্মকথা! অনেক নাম পেল বড়ঞার এঁদো ডোবা, সিবিআই পুকুর না কি মোবাইল পুষ্করিণী?

মুর্শিদাবাদের আন্দি গ্রামের নাম ক’জন আর শুনেছে আগে! সে যেন সিনেমার ‘পিপলি’ হয়ে উঠেছে। তার চেয়েও অখ্যাত গ্রামের এঁদো ডোবাটা বেশি করে খ্যাতি পেয়ে গিয়েছে। সৌজন্য, বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ।

আন্দির সেই পুকুর। নিজস্ব চিত্র।

আন্দির সেই পুকুর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৩৬
Share: Save:

জলই জীবন। সে জল আর এই পুকুরের জল অবশ্য এক নয়। মুখে দেওয়া দূরের কথা, ডুবও দেয় না কেউ। যাকে বলে পাঁকে নিমজ্জিত প্রাণ। মুখ ঢাকা কচুরির পানায়। শরীরময় শ্যওলা। পাড়ে পাড়ে জমে থাকে মরা বেড়ালের ছানা, আমের আঁটি, কাঠালের ভুতি, ছাইপাশ আরও কত কী! যার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না কেউ, সেই এঁদো ডোবাই আজ বিখ্যাত। তাঁর দিকে তাঁক করা ক্যামেরা মুহুর্মুহু ক্লিক ক্লিক করে শব্দ করছে। কেউ ভিডিয়ো করছে। কেউ রিল বানাচ্ছে। টিভির লোকেরা লাইভ করছেন।

মুর্শিদাবাদের অখ্যাত আন্দি গ্রামটা ভাবতেই পারে, তার চেয়েও বিখ্যাত হয়ে গেল পুকুরটা। থুড়ি, এঁদো ডোবাটা। তবে আন্দির তাতে কষ্ট নেই। হয় তো মনে পড়ছে ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া আমির খান প্রযোজিত ‘পিপলি লাইভ’ সিনেমাটার কথা। সেই ছবির অন্যতম চরিত্র ‘নাথা’ আত্মহত্যা করবে বলেছিল। কিন্তু করেনি। কিন্তু অভাবের তাড়নায় আর অর্থপ্রাপ্তির আশায় সে মরতে চেয়েছিল। আর তা ঘিরেই ছবি। অখ্যাত পিপলি রাতারাতি খবরের শিরোনামে। আন্দিও ঠিক তেমন। এক পুকুরের দৌলতে শিরোনামে।

তবে সেই পুকুরে জীবন দিতে কেউ ঝাঁপ দেয়নি। পুকুরে পড়েছে দু’টি মোবাইল ফোন। আর তা ঘিরেই নাটকীয় সব কাণ্ড। সকলেই বলছেন, ওই পুকুরের ঘোলা জলে লুকিয়ে রয়েছে জীবনের ধন। জীবন মানে জীবনকৃষ্ণ সাহা। তিনি স্থানীয় বিধায়ক। আর তাঁর দৌলতেই খ্যাতি পুকুরের, খ্যাতি আন্দির।

এ গল্প আর কারও জানতে বাকি নেই। কী ভাবে সিবিআই তল্লাশির সময়ে বিধায়ক মশাই হাতে থাকা মোবাইল দু’টি ছুঁড়ে দেন নিজেরই পুকুরে। তার পর থেকে রহস্যের পর্দা সরাতে সিবিআই কখনও হাঁটু জলে তো কখনও গলা জলে নেমেছে। তবু থই পাওয়া যায়নি। ঘণ্টা ৩৬ পরে একটি ফোন হাতে এলেও বাকিটি এখনও গভীর জলের ‘মাছ’। মাছের কথায় মনে এল, এই পুকুর থেকে জোড়া বোয়াল পেয়েছে সিবিআই। জালে ধরা পরেছে শিঙি, মাগুর, কই। আরও কত কী! কিন্তু হাজার পাঁক ঘেঁটেও সিবিআইয়ের মুঠোয় আসেনি জীবনের ছোড়া দ্বিতীয় মুঠোফোন।

তবে তার জন্য পুকুরের খ্যাতি পাওয়ায় কোনও খামতি হয়নি। বরং, সময় যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে। কলকাতা থেকে আন্দি গ্রামে এ খবর পৌঁছেছে যে, পুকুর অনেক টিআরপি দিচ্ছে। গুগল অ্যানালিটিক্সেও নম্বর দিচ্ছে আন্দি গ্রামের এঁদোটা।

সারা দিন ভিড় লেগেই রয়েছে। এই সুযোগে অনামা পুকুর অনেক নাম পেতেও শুরু করেছে। এত কাল সে ভাবে আর ‘অতি সাধারণ’-কে কেউ সে ভাবে সম্বোধনই করেনি। এলেবেলে হয়ে থাকা পুকুরটাকে মালিকের নামেই কেউ কেউ চিনত। কিন্তু এখন নাম পাচ্ছে। কেউ বলছে, জীবনপুকুর। কারও দেওয়া নাম ফোনপুকুর। কেউ কেউ বলছে মোবাইলপুকুর। তবে কেন্দ্রীয় এজেন্সির নামাঙ্কিত কোনও রাস্তাঘাট না থাকা বাংলায় এই পুকুরের নাম কেউ কেউ দিয়েছেন— সিবিআই-পুকুর।

সত্যি, জীবন কখন কোন দিকে যায় কেউ বলতে পারে না। যে পুকুর জীবনে ভাবেনি তার কোনও নাম হবে, সে-ও এখন বিধায়ক জীবনের কারণে নামাবলি পেয়ে চলেছে। তপন সিংহর চরিত্র সাগিনা মাহাতো (দিলীপ কুমার অভিনিত) পুকুর পাড়ে থাকলে হয় তো বলতেন, ‘‘এই তো জীবন, কালীদা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jiban Krishna Saha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy