এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রতারণার এত ফাঁদ পাতা চার দিকে, তখন করবেনটা কী?
সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, টাকা খোয়া যাওয়ার পরের দু’দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে থানায় গিয়ে বা কেন্দ্রীয় সরকারি পোর্টালে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। ১৯৩০ নম্বরে ফোন করেও অভিযোগ করা যেতে পারে। পুলিশও এই পোর্টালেই সরাসরি অভিযোগ লেখে। অভিযোগটি দায়ের হওয়ার পর একটি জিডি (জেনারেল ডায়েরি) তৈরি হয়। সেই জিডি নিয়ে এর পর যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা খোয়া গিয়েছে, সেই ব্যাঙ্কের শাখায় ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। ব্যাঙ্ক এই সময়ে চাইলেই খোয়া যাওয়া টাকাটা ‘ফ্রিজ়’ করতে পারে এবং ‘রিভার্স’ করতে পারে। কিন্তু এই কাজে ব্যাঙ্ক গড়িমসি করলে দ্রুত আদালতে আর্জি জানিয়ে অর্ডার বার করতে হয়। সেই অর্ডার দেখালে ব্যাঙ্ক পদক্ষেপ করতে বাধ্য। কিন্তু কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে কি এত দ্রুত আদালতের নির্দেশ বার করা সম্ভব?
‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘থানাও অনেক সময় গড়িমসি করে কাজ করতে। কিন্তু লালবাজার এই আদালতের অর্ডারের ব্যবস্থা করে দেয়। দ্রুত এই পথে দু’দিনে পুরো প্রক্রিয়া করলে টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’’ কিন্তু সেখানেও তো সে-ই পুলিশ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার উপর সব নির্ভর করছে।
পুলিশের তরফে আবার জানানো হচ্ছে আরও কয়েকটি সচেতনতা মূলক পদক্ষেপেরই কথা। যেমন, আধার কার্ড এবং নিজের বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) যতটা সম্ভব গোপন রাখার কথা বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে গিয়ে আধার কার্ড মাস্ক (অর্থাৎ আধার নম্বর গোপন রাখা) করিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সমস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিন্তু পরিচয় পত্র হিসেবে আধার কার্ডই দিতে হবে বলতে পারে না। যেমন কোনও হোটেলে উঠলে আধার কার্ডের বদলে সেখানে অন্য পরিচয় পত্র দেওয়ার উপর জোর দিতে বলা হচ্ছে। জমা করা পরিচয় পত্রের প্রতিলিপিতে কী কারণে পরিচয় পত্রটি দেওয়া হচ্ছে, তারিখ-সময় উল্লেখ করে সই করে দিতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজের মোবাইল ফোন নম্বর সম্পর্কে সতর্ক হতে বলা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ‘ট্যাফকপ’ নামের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের ফোন নম্বর বসিয়ে দেখে নিতে বলা হচ্ছে, যে সংশ্লিষ্ট নম্বরটি নথি জমা করে নেওয়া হয়েছিল, সেই ব্যক্তিগত নথির ভিত্তিতে আরও অন্য কোনও নম্বর চালু রয়েছে কি না। সে ক্ষেত্রে ওই ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট নথির ভিত্তিতে কতগুলি ফোন নম্বর চালু রয়েছে তা দেখাবে। অজানা নম্বর চালু থাকলে তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট করে ওই ওয়েবসাইট থেকেই নম্বরগুলি বন্ধ করিয়ে দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ‘ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল’-এ অজানা নম্বর চালু থাকার অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশেরই সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার বললেন, ‘‘এই মুহূর্তের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি প্রিয়জনের বিপদের ভিডিয়ো, ছবি এবং অডিয়ো রেকর্ডিং। হঠাৎ এমন ভিডিয়ো বা অডিয়ো পেলে আমরা অস্থির হয়ে উঠি। দ্রুত সুরাহা পেতে টাকা খরচ করতে রাজি হয়ে যাই। অনুরোধ, এক বার সেই বিশেষ মানুষটিকে ফোন করে দেখুন, যে তিনি সত্যিই বিপদে রয়েছেন কি না।’’ তিনি এ-ও জানাচ্ছেন, ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু হয় না। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৬৩ নম্বর ধারায় ডিজিটাল সমন পাঠানো যায়। কিন্তু তাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সিল এবং অফিসারের সই থাকতে হবে। এই সমন এনক্রিপ্টেড (ডিজিটাল সুরক্ষিত) হতে হবে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৩৬ নম্বর ধারায় আবার গ্রেফতারির সম্পর্কে স্পষ্ট বলা আছে। যিনি গ্রেফতার করতে যাচ্ছেন, তাঁকে উর্দিতে থাকতে হবে এবং তাঁর নাম এবং পদ উর্দিতে লেখা থাকতে হবে। গ্রেফতারের সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানাতে হবে গ্রেফতারির কারণ এবং গ্রেফতারির কাগজে অন্ততপক্ষে এক জন প্রত্যক্ষদর্শীকে দিয়ে সই করাতে হবে।
ওই অফিসারের কথায়, ‘‘মনে রাখবেন, প্রতারকেরা আপনার ব্যাপারে সমস্ত কিছু জানে, শুধু শেষ মুহূর্তের ওটিপি-টা ছাড়া। আপনি তাদের কথা মতো কাজ না করলে টাকা তুলে নেওয়া কঠিন শুধু নয়,
অসম্ভব।’’ ( শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy