সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে প্রতিবাদ ঘিরে বেশ কয়েক দিন ধরে অশান্তি চলেছে মুর্শিদাবাদে। সেই আবহে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই মুর্শিদাবাদ যাবেন তিনি। পাশাপাশি, অশান্তির ঘটনায় নিহতদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার যাবতীয় ব্যয়ভার সরকার বহন করতে পারে, সে কথাও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ মেদিনীপুর কলেজ মাঠে প্রশাসনিক সভায় পৌঁছোন মমতা। এই সভা থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে পূর্ব ভারতের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। সভায় ভাষণ দিতে উঠে নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গও টানেন মমতা। জানান, দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর মে মাসের শুরুতেই মুর্শিদাবাদে যাবেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি অশান্তির জেরে যাঁদের বাড়িঘর, দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদেরও সাধ্যমতো সাহায্য করবে সরকার।
আরও পড়ুন:
মমতা বলেন, ‘‘মনে রাখবেন একটা অশান্তি হয়েছে, দুঃখজনক। সেটাও বহিরাগতেরা কিছু স্থানীয় লোককে সঙ্গে নিয়ে করেছে। কী ভাবে করেছে, সেই চক্রান্ত আমরা ফাঁস করে দেব। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে কথা দিয়েছি, ১০ লক্ষ টাকা করে দেব। আমাদের সাংসদেরাও বলে এসেছেন, দরকার হলে তাঁদের বাচ্চাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে সরকার।’’ প্রসঙ্গত, গত বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সম্মেলন থেকেও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, অশান্তিতে নিহত তিন জনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার। যাঁদের বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়া হবে। যাঁদের দোকান লুটপাট হয়েছে, তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তার হিসাব করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। মঙ্গলবারও ফের আশ্বাসের সুরে মমতা বলেন, ‘‘কাদের বাড়ি, দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটা আমরা সমীক্ষা করে দেখছি। আমি মে মাসের শুরুতে যাব, তখন গিয়ে বাদবাকিটা দেখে করে দিয়ে আসব। এটুকু ভরসা আপনারা করতে পারেন, এটুকু নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।’’
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে দেশের নানা অংশের পাশাপাশি এ রাজ্যেরও বিভিন্ন প্রান্তে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ হয়েছে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার বেশ কিছু এলাকায়। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়েছে যে, মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটেছে। অশান্তি ছড়িয়েছে সুতি, জঙ্গিপুর, শমসেরগঞ্জ এবং ফরাক্কায়। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। অশান্তির কারণে অনেকে ঘরছাড়াও। যদিও পুলিশ-প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই স্বাভাবিক! সেই আবহেই গত বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সঙ্গে বৈঠকে গিয়ে এই অশান্তি নিয়ে মুখ খোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অশান্তির ঘটনায় দুই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’