মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য শিক্ষা দফতর চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের পাশে রয়েছে বলে আবারও জানালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সম্পূর্ণ ভাবে চাকরিহারাদের পাশে রয়েছেন। বিদ্যালয় শিক্ষা দফতর সব সময় তাঁদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে। আমরা রিভিউ পিটিশন করছি।’’
অযোগ্য তালিকার বাইরে ১৭,২০৬ জন রয়েছেন জানিয়ে ব্রাত্য বলেন, “আমাদের কাছে ভাগ রয়েছে। সেই অনুসারে আমরা কাজ করছি। এমন কোনও কাজ করবেন না বা এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যাতে রিভিউ পিটিশন আপনাদের বিপক্ষে চলে যায়।” সল্টলেকে এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর বার্তা— ‘‘সরকার আপনাদের চাকরি রক্ষা করার চেষ্টা করবে, মাইনের ব্যবস্থা করবে আর আপনারা এসএসসির চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করে রাখবেন, তিনি আদালত অবমাননার দায়ে পড়ে যাবেন, তা হতে পারে না।’’ বুধবার আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি আছে বলে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের কাজে ফেরার বার্তা দেন তিনি।
কিন্তু তালিকা প্রকাশ না হলে কারা বেতন পাবেন, কারা স্কুলে যাবেন তা নির্ধারণ হবে কী ভাবে? প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বলেন, ‘‘১৭ তারিখ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, যোগ্য-অযোগ্য আপনারা বলছেন আমরা নির্ধারণ করতে পারিনি। কিন্তু আপনারা যদি ১৭ তারিখের কেসটি দেখেন, যেখানে আমরা ক্ল্যারিফিকেশন চাই, সেখানে খুব পরিষ্কার করে ১৭,২০৬ জন— তাঁরা যোগ্য। এটি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে।’’
শীর্ষ আদালতে মামলার প্রসঙ্গ তুলে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এমন কোনও কিছু করা উচিত নয় যা আপনাদের রিভিউ পিটিশনকে দুর্বল করে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘিত হয় কিংবা আপনাদের বা আমাদের আদালত অবমাননা না-হয়, তা আপনাদের বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যোগ দিতে অনুরোধ করছি উপযুক্ত শিক্ষকদের। বেতনের বিষয়ে আমাদের দফতর কাজ করে যাচ্ছে। এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। আগামিকাল (বুধবার)-ও ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসির মামলা রয়েছে। আপনাদের জন্যই এসএএসসি লড়ছে। একমাত্র সরকারই আপনাদের পাশে রয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষকদের উদ্দেশে ব্রাত্যের বার্তা, ‘‘আমরা আইনি পরামর্শ নিয়ে প্রতিটি ধাপ এগোচ্ছি। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন। আপনারা গিয়ে আপনাদের কাজ করুন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আইনি প্রক্রিয়া এখনও চালু আছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে আমরা দায়বদ্ধ। আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে, আমাদের সরকার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাম্প্রতিক আবেদনে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপযুক্ত শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে।’’
এসএসসি সোমবার রাতে বিবৃতি দেওয়ার পর ব্রাত্য বলেছিলেন, “যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো তাঁদের মাইনে পাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তাই এই আন্দোলনেরও কোনও মানে নেই। আর যাঁরা ওখানে আছেন (এসএসসি দফতরের সামনে বিক্ষোভকারী চাকরিহারারা), তাঁদের অনেকেই হয়তো অযোগ্য। তাঁদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কোনও গাইডলাইন না-দিলে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। আমরা দ্রুত রিভিউ পিটিশনের জন্য যাচ্ছি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টই আমাদের গাইডলাইন দিয়ে দেবে। আমরা যে ভাবে এগোচ্ছি, তাঁদের আস্থা রাখা উচিত। এ বার আস্থা রাখবেন কি রাখবেন না, সেটা তাঁদের ব্যাপার।’’
- ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
- এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল।
- রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৫২) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
-
নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে ‘দাগিদের’ বাদ দেওয়ার রায়কে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য এবং এসএসসি
-
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন এসএসসির, জেনারেলের মতোই আবেদন করতে হবে ওবিসিদের
-
আদালত অবমাননার আশঙ্কা, তাই নির্দেশ মতো পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি আইনি লড়াই চলবে, বললেন মমতা
-
উত্তরপত্রে কারচুপি থাকলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, ‘অযোগ্য’দের আর্জি খারিজ করে জানাল সুপ্রিম কোর্ট
-
থানায় হাজিরা দিতেই হবে দুই চাকরিহারা শিক্ষককে! বিকাশ ভবনের সামনে লোকসংখ্যাও কমাতে হবে, বলল হাই কোর্ট