জখম লিয়াকত। নিজস্ব চিত্র
এনআরসি আতঙ্কে নথিপত্রও যেন কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠছে। ঘরে আগুন লাগলেও সব সম্পত্তি ছেড়ে সেই সব কাগজপত্র আগলাতে প্রাণের ঝুঁকি নিতে পিছপা হচ্ছেন না অনেকেই। মঙ্গলবার এমনই ছবি দেখল দেগঙ্গা।
এ দিন সকালে আগুন লেগেছিল দেগঙ্গা থানার বাসুদেবপুরের লিয়াকত আলির ঘরে। লিয়াকত ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই সেই সময়ে ছিলেন বাইরে। ঘরের ভিতরে ঘুমন্ত দুই সন্তানকে আগুনের গ্ৰাস থেকে উদ্ধার করতে পেরেছিলেন তাঁরা। আগুনের শিখা ক্রমশ গ্রাস করছিল ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র। সেই সময়ে সবাই দেখেন, পাগলের মতো ওই দম্পতি আগুনের ভিতরে ঢুকে আলমারি ভেঙে কিছু একটা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
এর মধ্যেই বিকট শব্দে ফেটে যায় ছাদের অ্যাসবেস্টস। স্থানীয়েরা কোনও ভাবে আগুনের ভিতর থেকে বার করে আনেন ওই দম্পতিকে। তত ক্ষণে হাত-পা পুড়ে অনেকটাই জখম হয়েছেন লিয়াকত ও তাঁর স্ত্রী। জানা যায়, টাকাপয়সা কিংবা সোনাদানা নয়, আগুনের গ্রাস থেকে ভোটার কার্ড, বাচ্চাদের জন্ম শংসাপত্রের ফাইলই বার করার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। আগুনে পোড়া ঘরের দিকে তাকিয়ে পা ছড়িয়ে হা-হুতাশ করছিলেন ওই দম্পতি। আগুনে সব কিছু পুড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার জন্য নয়। বাসিন্দারা জানান, কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে ওই দম্পতি কাঁদছিলেন। বারবারই বলছিলেন, ‘‘সব পরিচয়পত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ঘর-সম্পত্তি গেল, কোনও প্রমাণও রইল না। এ বার আমাদের দেশ ছাড়া হতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ‘দক্ষিণপন্থী’ ভিড় কমাতে প্ল্যাকার্ড, বিতর্কে চিকিৎসক
অরুন্ধতী রায় সম্প্রতি লিখেছেন, অসমের গ্রামে-গ্রামে ঘুরে তিনি দেখেছেন, দিনের পর দিন ঝড়ে, বন্যায় এলাকার অসহায় মানুষ সমস্ত সম্পত্তি ছেড়ে প্লাস্টিকে মোড়া কয়েকটি কাগজকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছেন। প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে তাঁদের পরিচয়পত্র।
মঙ্গলবার দেগঙ্গার এই ঘটনা সেই স্মৃতি উস্কে দিয়ে জানান দিল, এ রাজ্যের মানুষের কাছেও পরিচয়পত্র এখন যেন সন্তানের মতোই আপন। এ দিন সে কথাই বলছিলেন বাসুদেবপুরের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: নয়া আইনের প্রতিবাদে বিদেশেও মুখর গবেষক
তাঁরাই জানান, পেশায় দিনমজুর লিয়াকত এ দিন সকালে শৌচকর্মের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। স্ত্রী সুব্রতীবিবি ঘর থেকে কিছুটা দূরে শ্বশুরবাড়িতে চা করছিলেন। ঘরে ঘুমিয়ে ছিল আট বছরের ছেলে এবং ছয় বছরের মেয়ে। সেই সময়ে প্রতিবেশিরা দেখেন, লিয়াকতের ঘর থেকে দাউদাউ করে আগুনের শিখা বেরোচ্ছে। তাঁদের চিৎকারে ছুটে আসেন লিয়াকত ও সুব্রতীও।
এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও এখনও দমকলকেন্দ্র তৈরি হয়নি দেগঙ্গায়। তা নিয়েও এ দিন ক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। এ দিন তাঁরা সবাই মিলে পাশের একটি পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নেভান। লিয়াকতের কথায়, ‘‘চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখি ঘর দাউদাউ করে জ্বলছে। ঘরে ঢুকে ছেলেমেয়েকে বার করে আনি। তত ক্ষণে সব শেষ। অনেক চেষ্টা করেও ভোটার কার্ড ও অন্য নথিপত্র বাঁচাতে পারলাম না।’’ লিয়াকতের বাবা ইয়াকুবের কথায়, ‘‘জমির দলিল থেকে শুরু করে ছেলে-বৌমার ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, নাতি-নাতনির জন্মের প্রমাণপত্র— সবই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এনআরসি চালু হলে ওদের কে বাঁচাবে এখন সেটাই ভাবছি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy