এসএসকেএম হাসপাতালে রোগী।
মুখ্যমন্ত্রী যত ক্ষণ এসএসকেএম হাসপাতালে ছিলেন, অজ পাড়াগাঁ থেকে আসা দুই ভাই অসহায় মুখ করে দূর থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন। এক দিকে আন্দোলনরত ডাক্তারি পড়ুয়াদের স্লোগান, অন্য দিকে সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি। গ্রাম থেকে আসা ভাইদের আকুতি, মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই এলেন। তাঁদের সমস্যার সুরাহা হবে কি? হয়নি। সুরাহা হয়নি।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতাল (পিজি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই রোগীর পরিজনদের জন্য তৈরি ছাউনির এক পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা গেল দুই ভাইয়ের এক জনকে।
কী হয়েছে?
কাছে যেতেই অন্য ভাই চোখ মুছতে মুছতে জানান, একটু আগেই বৌদির মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছেছে। ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে ঠিকঠাক চিকিৎসা তো জোটেইনি। এখন মৃতদেহ পেতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত ও অমরেশ মণ্ডল। বড় ভাই প্রশান্তের স্ত্রী, ২৮ বছরের অসীমার খিঁচুনির রোগ। রবিবার বাড়াবাড়ি হয়। জ্ঞান হারান অসীমা। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে সে-দিনই তাঁকে এনে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএমে। অভিযোগ, মঙ্গলবার থেকে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি। যতটুকু ওষুধ প্রয়োজন, তা নার্সেরাই দিচ্ছিলেন। পাঁচ ও ছয় বছরের দু’টি ছেলে রয়েছে অসীমার। কথা বললেন না প্রশান্ত। অমরেশ বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী এলে সমাধান হবে। কিন্তু কিছুই তো হল না।’’ দেহ নিয়ে মেদিনীপুর ফিরবেন তাঁরা। কিন্তু দেহ কখন মিলবে, জানা যাচ্ছে না।
সব জুনিয়র চিকিৎসককে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে দৃশ্যটা খুব একটা বদলায়নি। উল্টে চিকিৎসা না-পেয়ে যাঁরা এত ক্ষণ হাসপাতালের এখানে-ওখানে পড়ে ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর আগমনে যাঁদের মধ্যে আশা জেগেছিল, তাঁরা আরও বেশি হতাশ হয়ে পড়েন। জরুরি বিভাগের উল্টো দিকে রোগীর পরিজনদের থাকার জায়গার পাশে একটি গাছের তলায় শুয়ে ছিলেন ২৮ বছরের রাম মুন্ডা। কাজ করেন কেরলে। শিলিগুড়ির বাড়িতে ফেরার পরে ডাম্পারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাঁর। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাঁকে পাঠানো হয় এসএসকেএমে। রামের ভাই চন্দ্রকেতুর অভিযোগ, দু’দিন ধরে খোলা আকাশের নীচে চিকিৎসা ছাড়া পড়ে রয়েছেন তাঁর দাদা। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে চন্দ্রকেতুরও মনে হয়েছিল, পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পরেও আন্দোলন না-ওঠায় তিনি বলেন, ‘‘কী করে আমার দাদার চিকিৎসা হবে?’’
মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মালদহ থেকে এসেছেন আশুতোষ হালদার। মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে আসার পরে তাঁরও মনে কোথাও আশার সঞ্চার হয়েছিল। বিহারের সাহেবগঞ্জ থেকে আসা শ্যামাপদ মণ্ডল, শেখ জামিল, হাওড়ার শ্যামপুর থেকে আসা জানে আলম— সকলেরই এক অভিযোগ, চিকিৎসা পাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী এসে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু কার্যত তা হয়নি।
হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্ত অবশ্য জানান, হাসপাতালের সব পরিষেবা বন্ধ, এমনটা মনে করা ঠিক নয়। হাসপাতালে বিভিন্ন স্তরে চিকিৎসা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকেরা একটি বড় অংশ সামলান ঠিকই। কিন্তু তাঁরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন মানে এই নয় যে, কোনও রোগী পরিষেবা পাচ্ছেন না।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy