কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে গিয়ে অনেক সময়ে এ ভাবেই দূরত্ব-বিধি ভাঙছেন যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।
আন্তর্জাতিক উড়ানে দীর্ঘ সফরের ক্লান্তির পাশাপাশি দফায় দফায় করোনা পরীক্ষার চক্করে বিদেশাগত যাত্রীদের বিমানবন্দরে মহা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রথম পরীক্ষায় কারও ফল নেগেটিভ এলে সমস্যা হচ্ছে না। তিনি কলকাতায় নামার এক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট নিয়ে বাড়ি বা অন্য গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু কলকাতায় নামার পরে প্রায় রোজই বেশ কিছু আন্তর্জাতিক যাত্রীর করোনার র্যাপিড পরীক্ষার রিপোর্ট আসছে পজ়িটিভ। তাঁদের নমুনা আরও দু’বার পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই দু’বারের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই ছাড়া পাচ্ছেন যাত্রী। এই তিন বারের পরীক্ষার সময়েই দুর্দশা বাড়ছে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের।
এই কারণে প্রায় প্রতিদিনই সমস্যা দেখা দিচ্ছে বিমানবন্দরে। কারণ, যাঁরা এই র্যাপিড পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আগে থেকে ‘স্লট বুক’ করে রাখছেন, তাঁদের রিপোর্ট আসতে এক ঘণ্টার বেশি দেরি হলে বিমানবন্দরে অপেক্ষাকালে তাঁরা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। দীর্ঘ সফরে ক্লান্তিতে ধুঁকতে থাকা ওই যাত্রীরা তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পেয়ে বাড়ি চলে যেতে চাইছেন।
এই পরীক্ষার দায়িত্ব যে-বেসরকারি সংস্থার উপরে ন্যস্ত, তাদের বক্তব্য, প্রায় ৯০ শতাংশ যাত্রীই র্যাপিড পরীক্ষার জন্য স্লট বুক করে আসছেন। আরটিপিসিআর করানোর জন্য খুব কম যাত্রীই বিমানবন্দরে প্রায় ছ’ঘণ্টা বসে থাকতে চাইছেন। কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী বিদেশাগত যে-সব যাত্রীর র্যাপিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসবে, আরটিপিসিআর করাতে হবে শুধু তাঁদেরই। নেগেটিভ রিপোর্ট এলে সেই যাত্রীকে ছেড়ে দিতে হবে।
বিদেশে বসে কলকাতামুখী যাত্রীরা যে-ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কলকাতা বিমানবন্দরের এই স্লট বুক করছেন, তাঁরা দেখছেন, সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, র্যাপিড করলে এক ঘণ্টা সময় লাগবে। খরচ ২৯০০ টাকা। আর আরটিপিসিআর করাতে সময় লাগবে ছ’ঘণ্টা। খরচ ৬০০ টাকা। ফলে তাঁরা এই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে কলকাতায় নামছেন যে, রিপোর্ট নেগেটিভ বা পজ়িটিভ যা-ই হোক না কেন, এক ঘণ্টার মধ্যে তা জানা যাবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সব সময় সেটা হচ্ছে না।
একটি বেসরকারি সংস্থার এক অফিসার বললেন, “আমাদের কাছে নির্দেশ আছে। কারও র্যাপিড পরীক্ষার প্রথম রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে আমরা তাঁর নমুনা পরপর তিন বার পরীক্ষা করাই। কারণ, অনেক সময় প্রথম বার ভুয়ো পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। পরের দু’বার নেগেটিভ এলে তখন তাঁদের নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়। আর তাতেই অনেক যাত্রী আটকে পড়ছেন বিমানবন্দরে।” যে-সব যাত্রীর প্রথম পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ আসছে, তাঁদের রিপোর্ট পেতে প্রায় দু’ঘণ্টা লাগছে বলে জানান ওই অফিসার।
বিদেশবাসী চিকিৎসক শুভজিৎ দত্ত রায় বলেন, “আমার প্রথমেই খটকা লেগেছিল। ও-দেশেও র্যাপিড পরীক্ষার ফল আসতে ঘণ্টা দুয়েক লাগে। এখানে এক ঘণ্টায় কী করে দেবে?” তিনি রবিবারেই এমিরেটসের উড়ানে কলকাতায় নামেন এবং প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে বাড়ি যান। তবে তাঁর মতে, প্রথমে যাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও আরও অন্তত এক বার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। সে-ক্ষেত্রে যদি দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতেও হয়, ক্ষতি কী?
বেসরকারি পরীক্ষাগারের এক অফিসার বলেন, “এমিরেটসের যত যাত্রী এ দিন এসেছেন, তাঁদের ২৭ শতাংশের প্রথম পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ। তাই তাঁদের সকলেরই নমুনা তিন বার পরীক্ষা করে করতে হয়েছে।” বিমানবন্দর সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে এক যাত্রীর প্রথমে র্যাপিড এবং পরে আরটিপিসিআর, দু’টি পরীক্ষার রিপোর্টই পজ়িটিভ আসে। তাঁকে শহরের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে লালারস জিনোম সিকোয়েন্সের ব্যবস্থা হচ্ছে।
বিদেশ থেকে কলকাতায় আসা যাত্রীদের বড় অভিযোগ দূরত্ব-বিধি রক্ষার ‘শৈথিল্য’ নিয়ে। নিজেদের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতে দিয়ে বিমানবন্দরের যেখানে (বেষ্টনী দেওয়া একটি অংশ) তাঁদের বসানো হচ্ছে, সেখানে পাশাপাশি গিয়ে বসতে হচ্ছে সকলকে। অধিকাংশ যাত্রীই দূরত্ব-বিধি মানছেন না। তাঁদের মধ্যেই পরে কারও নেগেটিভ আসছে তো কারও পজ়িটিভ। এই নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রীরা কথা শোনেন না। নিজেদের পরীক্ষার ফল জানতে ও রিপোর্ট পেতে একসঙ্গে সকলে কাউন্টারের সামনে পৌঁছে যান।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে নিয়োগ করা বেশ কিছু যুবক-যুবতী বিদেশফেরত যাত্রীদের কাগজপত্র দেখা, তাঁদের পরীক্ষার ফল জানানোর কাজ করছেন। ওঁদের মূলত বাইরে থেকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে বিমানবন্দরের খবর। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে ওই সব কর্মীর একাংশের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy