রাস্তায় বাস কম। অফিস যাওয়ার সময়ে শ্যামবাজার থেকে তাই এ ভাবেই ঝুঁকির সফর। ছবি: সুমন বল্লভ
রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়ানোর দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলেও বেসরকারি বাস বাড়ল না। পাওয়া গেল নামমাত্র মিনিবাস। ফলে সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিনে, অফিসে যাওয়ার সময় তো বটেই, এমনকি বাড়ি ফেরার সময়েও বাস-দুর্গত যাত্রীদের নাকানিচোবানি খেতে হল।
সরকারি অফিসে ৭০ শতাংশ হাজিরা, অনেক বেশি বেসরকারি অফিস, শপিং মল, হোটেল, রেস্তরাঁ খুলে যাওয়ার সূত্রে এ দিন অনেক বেশি মানুষকে পথে নামতে হয়েছে। এবং যথারীতি পর্যাপ্ত বাসের অভাবে নাকাল হতে হয়েছে। বিটি রোড, বিমানবন্দর, চিনার পার্ক, শ্যামবাজার, গিরিশ পার্ক, উল্টোডাঙা, মানিকতলা থেকে শুরু করে, শিয়ালদহ, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্রসদন, গড়িয়াহাট, বেহালা, টালিগঞ্জ-সহ বিভিন্ন জায়গায় ছিল একই ছবি। এমনকি বাস না-পেয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা অবরোধও করলেন চিড়িয়া মোড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে হস্তক্ষেপ করতে হয় পুলিশকে। তাতে কী? অবস্থা বদলানোর নির্দিষ্ট আশ্বাস এ দিনও পাওয়া যায়নি।
শুধু বেড়েছে বাস না-নামানোর বিবিধ ব্যাখ্যা।
বেসরকারি বাস-মালিক সংগঠন সূত্রে খবর, এ দিন প্রায় আড়াই হাজার বাস পথে নামলেও সব রুটে সমান ভাবে বাস সচল না-হওয়ায় বিপত্তি দেখা গিয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা প্রদীপনারায়ণ বসু এবং স্বপন ঘোষ জানান, ব্যাটারি এবং যন্ত্রাংশ বিকল থাকায় এ দিন বহু মিনিবাস চালু করা যায়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে। যে ‘কয়েক দিনের’ আশ্বাস কয়েক দিন ধরেই শোনা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: গাড়ির চাপে গতি-হারা শহর থেকে শহরতলি
আরও পড়ুন: আগল খুলে কি ডাক গোষ্ঠী সংক্রমণকে?
ভাড়া না-বাড়লে চলছে, চলবে
প্রশ্ন: সরকার ভাড়াবৃদ্ধির বিষয় বিবেচনা করলেও বাস কোথায়?
• যন্ত্রপাতির সমস্যা ছাড়াও কর্মীরা দেরিতে আসায় সকালে বাস ঠিক মতো চলেনি। খুব অল্প যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়ায় বাস চালানোর খরচ তোলা অসম্ভব। ওই সমস্যা না-মিটলে পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়া মুশকিল।
স্বপন ঘোষ, যুগ্ম সম্পাদক, মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি
• বাসমালিকদের অবস্থা সঙ্গিন। বাস সচল করতেই ১০-১৫ হাজার টাকা জোটাতে হচ্ছে। তাই সময় লাগছে
তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট
প্রশ্ন: এখন তো জরুরি পরিস্থিতি। ভাড়া না-বাড়ালে এ ভাবেই জনগণকে ভোগাবেন?
• সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে আর্থিক ক্ষতি বাড়তে থাকলে ফের বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
স্বপন ঘোষ
• যাত্রীর সংখ্যা কম। ফলে বাসে আয় প্রায় নেই। ক্ষতি বেশি বাড়লে পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়া মুশকিল।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায়
জেলাতেও চোখে পড়েছে হয়রানির একই ছবি। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বিভিন্ন রুটে পরিষেবা প্রায় স্বাভাবিক করলেও বেসরকারি বাস সে ভাবে চোখেই পড়েনি। সে কারণে পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বীরভূমে যাত্রীদের দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদিয়ায় রাস্তায় বাসের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে ভাল ছিল। তবে, আগামী কয়েক দিনে জেলায় বাসের সঙ্কট কাটানোর আশ্বাস দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবারের তুলনায় এ দিন পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে বাস্তবটা বুঝতে হবে। ট্রেন এবং মেট্রো না-চলায় প্রায় ২৭ লক্ষ যাত্রীর চাপ বাসের উপরে পড়ছে। অফিসযাত্রীদের কিছুটা বিলম্ব হলেও মানুষের চাপ যতটা সম্ভব লাঘব করার চেষ্টা করছি। মুখ্যমন্ত্রী অফিসে হাজিরায় লালকালির দাগ উঠিয়ে দিয়েছেন।’’
পরিবহণ দফতর সূত্রের হিসেব, এ দিন কলকাতায় ২২৩০টি বেসরকারি বাস, ২৩০টি মিনিবাস, ৫২৬০টি ট্যাক্সি, ১০১৫টি সরকারি বাস নেমেছিল। অটো চলেছে ৮১৫০টি। প্রাক্-লকডাউন পর্বে কলকাতায় ৬৫০০ বেসরকারি বাস ও ২০০ মিনিবাস চলে।
যদিও কলকাতায় সময়মতো অফিস পৌঁছতে মরিয়া যাত্রীরা দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠেছেন। কোথাও বাসের বন্ধ দরজায় অফিস যেতে মরিয়া যাত্রীর হাতের চাপড় পড়েছে। কোথাও বাসকর্মীরাই লাভের আশায় অতিরিক্ত যাত্রী তুলেছেন। আর সন্ধ্যায় বাস না পেয়ে অনেককে ট্যাক্সি, এমনকি, মিনিট্রাক ভাড়া করেও বাড়ি ফিরতে দেখা গিয়েছে।
এ দিন সকালে চিনার পার্কে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন নিউটাউনের একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মী তন্ময় সামন্ত। দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পর ভিড়ে ঠাসা বাসেই উঠলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সময়মতো অফিস পৌঁছতে না পারলে সমস্যা আছে। করোনাকে ভয় পেলে অফিস ঢোকা হবে না।’’ ওই জায়গাতেই বালি থেকে নিউটাউনগামী একটি বেসরকারি বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে দেখে পুলিশ এসে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। বাসের কন্ডাক্টর জানান, দুপুরে যাত্রী হচ্ছে না, যাত্রীরাও জোরাজুরি করছেন। তাই বাড়তি যাত্রী তুলেছেন। দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী, রুবি কিংবা কালিকাপুরেও অফিসের ব্যস্ত সময়ে এবং বিকেলেও চোখে পড়েছে যাত্রীদের ভিড়। তবে, এ দিন ১১০০ র বেশি সরকারি বাস পথে নামায় উত্তর এবং দক্ষিণের বাস ডিপোগুলিতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি।
এ দিন অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি, এবং বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতৃত্বের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন পরিবহণ মন্ত্রী। সরকারি কর, বাস স্যানিটাইজ করার সুবিধে, ভাড়া, ব্যাঙ্কের কিস্তি মকুব-সহ বাস মালিকদের সমস্যার কথা তাঁরা মন্ত্রীকে জানান। মন্ত্রী তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে সংগঠনের দাবি। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বিধি অনুযায়ী, সরকার বেসরকারি বাস অধিগ্রহণ করতে পারে। তবে তা করে দীর্ঘ দিন পরিষেবা চালানো মুশকিল। সে ক্ষেত্রে, সরকারি কর-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা দিয়ে বাসমালিকদের ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy