বালুরঘাট স্টেশনে উমাশঙ্কর সিংহ যাদব। —নিজস্ব চিত্র।
ডিআরএমের যাত্রাপথ মসৃণ করতে দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় দু’ঘণ্টা স্টেশনে দাঁড় করিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ল উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল। বুধবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর স্টেশনের ঘটনা। বালুরঘাটগামী নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) এক্সপ্রেস ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে বুনিয়াদপুর স্টেশনে ঢোকে। কিন্তু উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব সপার্ষদ বালুরঘাট স্টেশন পরিদর্শন করে ফেরা না পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে বুনিয়াদপুরেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
একে প্রচণ্ড গরম। তার উপর ঠা ঠা রোদে যাত্রী ঠাসা ট্রেনটিকে অত ক্ষণ স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখায় কচিকাঁচা থেকে বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েন। যাত্রীদের একাংশ বুনিয়াদপুর স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানালেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। বুনিয়াদপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বালুরঘাট থেকে গঙ্গারামপুরের মধ্যে সিঙ্গল-লাইন। কেবলমাত্র বুনিয়াদপুর স্টেশনে ডবল-লাইনের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই সময় ডিআরএম বালুরঘাট স্টেশন থেকে বুনিয়াদপুরের দিকে রওনা হওয়ায় এনজেপি-বালুরঘাট ট্রেনটিকে বাধ্য হয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, একলাখি-বালুরঘাট লাইনে একমাত্র বুনিয়াদপুর স্টেশন ছাড়া অন্য কোনও স্টেশনে ডবল লাইন নেই, এ কথা ডিআরএমের জানা। এই লাইনে কোন ট্রেন কোন সময়ে চলাচল করে সেটাও ডিআরএম-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। ওই পরিদর্শন-ট্রেন সেই সময়সূচী মতো বালুরঘাট স্টেশন ছাড়লে যাত্রী দুর্ভোগ এড়ানো যেত।
ঘটনার কথা শুনে বালুরঘাট-একলাখি রেল উন্নয়ন কমিটির তরফে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। বুনিয়াদপুর স্টেশনে অপেক্ষা করাকালীন এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব বলেন, ‘‘গঙ্গারামপুর স্টেশন পরিদর্শন করছিলাম। শীঘ্রই আমরা বুনিয়াদপুর স্টেশনে পৌঁছবো।’’ যাত্রীদের উদ্দেশে একটু ধৈর্য ধরতে তিনি অনুরোধ করেন। যদিও বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ দু’কামরার বাতানুকূল তাঁর বিশেষ ট্রেনটি বুনিয়াদপুর পৌঁছনোর পর এনজেপি-বালুরঘাট এক্সপ্রেস বালুরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। শেষ পর্যন্ত ট্রেনটি বালুরঘাটে পৌঁছয় সন্ধে ৬টা ১৫ মিনিটে। অথচ রেলের সময় সূচী অনুযায়ী বিকেল সাড়ে চারটেয় ট্রেনটির বালুরঘাট পৌঁছনোর কথা।
এ দিন ডিআরএম বালুরঘাট স্টেশন পরিদর্শনের সময় দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া তাঁর সঙ্গে দেখা করে বালুরঘাট স্টেশনে আরপিএফের পরিকাঠামো বাড়াতে বলেন। এ ব্যাপারে ডিআরএম এসপিকে আশ্বাস দেন। পরে একলাখি রেল উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে ডিআরএমকে এই লাইনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু, ডবল লাইন, গঙ্গারামপুর স্টেশনের উন্নতি-সহ বালুরঘাট থেকে হিলি এবং বুনিয়াদপুর থেকে কালিয়াগঞ্জ এবং হরিরামপুর হয়ে ইটাহার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
ডিআরএম উমাশঙ্করবাবু আর্থিক সমস্যার কারণে প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেন। তবে সময় মতো ট্রেন চলাচলের বিষয়ের উপর রেল দফতর গুরুত্ব দিয়েছে বলে ডিআরএম জানিয়েছেন।
এ দিন সময় মতোই এনজেপি-বালুরঘাট এক্সপ্রেস ট্রেনটি আলিপুরদুয়ার থেকে এসে এনজেপি স্টেশন থেকে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ছেড়ে বালুরঘাটের দিকে রওনা হয়। একলাখি স্টেশনে দুপুর ২টো ৫ মিনিটে পৌঁছয়। সেখান থেকে বুনিয়াদপুর স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছয় ৩টে ৪৫ মিনিটে। ওই দুর্ভোগের জেরে এ দিন চরম সমস্যার পড়ে যান জেলার বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা। ইসলামপুরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক বিভাস চৌধুরীর গঙ্গারামপুর স্টেশনে নেমে বাস ধরে তপন ব্লকে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার কথা। বুনিয়াদপুরে দেড় ঘণ্টা ট্রেনটিকে আটকে রাখার ফলে শেষ পর্যন্ত তপনের বাস ধরে তিনি গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন।
গঙ্গারামপুরের ব্যবসায়ী চন্দন রায়ও ট্রেন আটকে রাখার জেরে চরম হয়রানির মধ্যে পড়েন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খোদ রেলের কর্তারাই যদি যাত্রী স্বাচ্ছ্যন্দের বদলে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ান, তাহলে আমরা যাব কোথায় ?’’ গঙ্গারামপুরের বধূ শম্পা রায় ছোট দু’টি বাচ্চাকে নিয়ে ইলসামপুর থেকে ওই ট্রেনে উঠেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘তীব্র গরম। তার উপর ট্রেনের কামরায় সব গুলি পাখা ঘোরে না। দীর্ঘ ক্ষণ ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখায় বাচ্চারা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’’ গরমে এ দিন নাজেহাল অবস্থা হয় বয়স্কদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy