লাভপুরের পথেই পা পাড়ুইয়ের!
লাভপুরে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইয়ের খুনের মামলার চার্জশিটে পুলিশ নাম বাদ দিয়েছে তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের। এ বার পাড়ুই-কাণ্ডের চার্জশিটেও নাম থাকল না ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। বুধবার সিউড়ি জেলা আদালতের রেকর্ড বিভাগে একটি বন্ধ খামে ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। পুলিশ সূত্রের খবর, চার্জশিটে অনুব্রতর মতোই নাম নেই পাড়ুই-কাণ্ডের আর এক অভিযুক্ত, বীরভূমের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীরও।
গত বছর ১৭ জুলাই, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পাড়ুইয়ের কসবায় সভা করে নির্দল প্রার্থীদের (মূলত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী) বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বোমা মারার নির্দেশ দলীয় কর্মীদের দিয়েছিলেন অনুব্রত। আর ২১ জুলাই রাতে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রামে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। ঘটনার পরে অনুব্রত, বিকাশ-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের পুত্রবধূ শিবানী ঘোষ।
পুলিশ সূত্রেই জানা যাচ্ছে, চার্জশিটে নাম রয়েছে আট জনের। তাঁরা হলেন, তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফা, তৃণমূলের কসবা অঞ্চল সভাপতি শেখ ইউনুস, জলধর দাস, জগন্নাথ দাস, প্রিয় মুখোপাধ্যায়, ভগীরথ ঘোষ, সুব্রত রায় এবং শেখ আসগর (মুস্তফার ছেলে)।
বুধবার হৃদয় ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “আমার পরিবারের কাছে এই খবর প্রত্যাশিতই ছিল।” ঘটনাচক্রে এ দিনই বোলপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন হৃদয়বাবু। এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর এবং তৃণমূলের কোনও যোগ নেই, এই দাবি আগে বারবার করেছেন অনুব্রত। এ দিন অবশ্য যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি আজ কিছু বলব না।” চার্জশিটের কপি না দেখে মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন বিকাশ রায়চৌধুরী। আর অন্য দিকে শেখ মুস্তফার দাবি, “ঠিক ভাবে তদন্ত হয়নি। নির্দোষদেরই ফাঁসানো হয়েছে।”
পাড়ুই-কাণ্ডে সিউড়ি আদালতে চার্জশিট জমা দিতে যাচ্ছেন সিটের দুই অফিসার।
বুধবার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে অনুব্রতকে একাধিকবারই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই সভামঞ্চে দেখা গিয়েছে। অনুব্রতর প্রতি তাঁর সমর্থনের কথাও প্রকাশ্যে শোনা গিয়েছে মমতার মুখে। হৃদয়বাবুর নিজের কথায়, “স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে (অনুব্রত) নিয়ে মঞ্চ আলো করে থাকেন, যাঁর সামনে রাজ্যের তাবড় প্রশাসনিক কর্তারাও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন, তার নাম চার্জশিটে রাখবে, এমন হিম্মতওয়ালা পুলিশ এখন এ রাজ্যে নেই!” নিহতের স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ বলেন, “তদন্ত যে নিরপেক্ষ ভাবে হচ্ছে না, সেই কথা আগেও বহু বার বলেছি। এ দিন ফের সেটাই প্রমাণিত হল।” এই পরিস্থিতিতে সিবিআই-ই এখন তাঁদের একমাত্র ভরসা বলে এ দিন জানিয়েছেন শিবানীদেবী।
কেন বাদ পড়ল অনুব্রতর নাম?
তদন্তকারীদের দাবি, কসবায় অনুব্রতর উস্কানিমূলক বক্তৃতার চার দিনের মাথায় খুন হন সাগরবাবু। তাই ওই হুমকির জেরেই যে এই খুন, তা বলা কঠিন। যা জেনে হৃদয়বাবুর প্রশ্ন, “লাভপুর-কাণ্ডে মনিরুল ইসলামের নাম বাদ গেল, অভিযোগকারীদের জবানবন্দিতে বিধায়কের নাম না থাকার যুক্তিতে। অথচ আমরা কোর্টে জবানবন্দিতে অনুব্রত-বিকাশের নাম নেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হল। এটা পুলিশের দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই নয়।” কসবার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীদের একাংশেরও বক্তব্য, অনুব্রতর ওই বক্তৃতার পরে পরেই কসবার একাধিক বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়। আর তার পরেই খুন হন সাগরবাবু। তা হলে ওই বক্তৃতার সঙ্গে এই খুনের কোনও সম্পর্ক নেই, এমন দাবি তদন্তকারীরা করছেন কী করে?
এ দিন বিকেলে সিউড়ি কোর্টের রেকর্ড বিভাগে খাম বন্ধ চার্জশিট জমা দেন সিট-এর অফিসার তীর্থঙ্কর সান্যাল। পুলিশ সূত্রে খবর, মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় আজ, বৃহস্পতিবার মুখবন্ধ ওই চার্জশিটের খাম খুলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy