শাসক দলের আকচাআকচির ছায়া যে বিজেপি-র ঘরেও পড়েছে, বীরভূমে তা মালুম হয়েছে মাস কয়েক আগেই। আসানসোলের দলের মাথাদের বদলে কোন্দলের কালি মোছার চেষ্টাও আড়াল তাকেনি। এ বার নদিয়া জেলা বিজেপিতেও সেই রোগের দেখা মিলেছে।
তবে, এ জেলায় দলের একাংশ গোঁসা করে ‘বসে’ গিয়েছেন েমন নয়, বরং তাঁরা ভোল পাল্টে হয়ে উঠতে চাইছেন আরও উগ্র, শিব সৈনিক হয়ে ওঠাই তাঁদের লক্ষ্য।
হ্যাঁ, নদিয়ার পথেই রাজ্যে পা পড়তে চলেছে বাল থ্যকারের বাঘ মুখের। জেলার বিক্ষুব্ধ ওই বিজেপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘‘জেলা নেতৃত্বেকে শিক্ষা দিতেই আমরা এ বার শিব সেনায় ভিড়েছি।’’ দলের জেলা যুব মোর্চার একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই সদস্যপদও গ্রহণ করেছে শিব সেনার বলে জানা গিয়েছে। কাল, শনিবার, কৃষ্ণনগরে রাজ্য শিব সেনার রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জেলা কমিটিও গঠন হতে চলেছে বলেও শিবসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।
দলের অনেকেই নব্য সেনিকদের দিকে পা বাড়িয়ে থাকলেও মূলত দলের যুব মোর্চার একটা বড় অংশই আপাতত ওই দলে যোগ দিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পা বাড়িয়ে থাকা ওই শিব সৈনিকদের স্পষ্ট কথা, ‘‘আমাদের স্পষ্ট কথা, জেলা বিজেপি-র বর্তমান নেতৃত্বকে শিক্ষা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’ এঁরা জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল কিংবা তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত কল্যাণ নন্দী— কারও অনুগামী নন বলেই জানা গিয়েছে। যুব মোর্চার প্রাক্তন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক টুটুল দাসের নেতৃত্বেই ওই যুব মোর্চার নেতা-কর্মীরা শিব সেনায় যোগ দিচ্ছেন।
দলের অন্দরমহলের খবর, জেলা বিজেপিতে আশুতোষ বনাম কল্যাণ বিরোধ নতুন নয়। তবে তৃতীয় শক্তি হিসেবে টুটুল দাসই জেলা বিজেপি-র মুখ হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। দলে তেমন জায়গা করতে না পারায় তিনি এখন শিব সেনার দিকে ঢলেছেন।
টুটুল অনুগামীদের দাবি, এরই মধ্যে কলকাতায় গিয়ে শিবসেনার রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন তাঁরা। টুটুলের কথায়, ‘‘আমরা আশুতোষবাবু দায়িত্ব পাওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমাদের পাত্তাই দেননি। আমরা মনে করছি, দলে আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই। তাই এই দলবদল।’’ কিন্তু ঠিক কী ধরনের মর্যাদা তাঁ আশা করেছিলেন? টুটুল জানান, কোনও দলীয় কর্মসূচির খবর তাঁদের জানানো হত না। ‘সম্মান রাখতে’ বাধ্য হয়েই তাই দলত্য়াগ তাঁদের। কিন্তু এত দল থাকতে শিবসেনা কেন? টুটুলের কথায়, ‘‘আমরা হিন্দুত্বকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে এসেছি। তাই এ ক্ষেত্রে বিজেপি-র বিকল্প হিসেবে শিব সেনাই শ্রেয় মনে করছি আমরা।’’
একদা, যুব মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণ দাসের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ছিলেন টুটুল। কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে কল্যাণ দাসকে পদ থেকে অপসারিত করা হয়। সেই থেকেই টুটুলদের সঙ্গে কল্যাণ নন্দী গোষ্ঠীর বিবাদের সূত্রপাত।
তবে, কল্যাণ দাস নিজে নাম না লেখালেও তার অনুগামীদের একটা অংশ শিবসেনায় চলে যাওয়ায় কপালে বাঁজ পড়েছে বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বের। তাদের কথায়, ‘‘এক দিকে কল্যাণ নন্দীর অনুগামীরা প্রকাশ্যে বিরোধীতা শুরু করেছে। অনেকেই তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছেন। তার উপরে যদি এ ভাবে দলের নতুন প্রজন্ম শিবসেনায় চলে যায় তাহলে আমরা দলটা করব কাদের নিয়ে?’’
রাজ্য শিবসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এরই মধ্যে নদিয়া জেলায় প্রায় সাড়ে তিনশো সদস্যপদ নেওয়া হয়েছে। যাদের সিংহভাগই এসেছেন বিজেপি থেকে। ২৪ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরে রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জেলা কমিটি গঠন করা হবে বলে রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী বিধানসভা ভোটে শিবসেনা জেলার ১৭’টি কেন্দ্রই প্রার্থী দেবে বলেও দাবি করেছে শিব সেনা নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে ৮টি কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন পত্রও জমা পড়েছে বলে শিব সেনার দাবি। রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘নদিয়াতে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।’’ তাদের সেই আশায় ঘি ঢেলেছেন টুটুল দাসেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy