ঘেরাও-বিক্ষোভ চলবে না বলে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের বার্তা দিয়েছিলেন একই সঙ্গে। এ বার কলেজে কলেজে শৃঙ্খলা রক্ষায় অধ্যক্ষদের কঠোর হতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ছাত্রভোট থেকে ছাত্র ভর্তির চলতি মরসুমে বিভিন্ন কলেজে হাঙ্গামার ধুম পড়ে গিয়েছিল। অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনাও ঘটে একাধিক কলেজে। গোলমালের বেশির ভাগ ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠছিল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র দিকেই। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, কলেজে কলেজে হাঙ্গামায় রাশ টানতে পার্থবাবু নিজেদের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-কে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিতে বাধ্য হন। তিনি একই সঙ্গে বার্তা দিয়েছিলেন এসএফআই-সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশেও। কলেজে যখন-তখন বহিরাগতদের প্রবেশ চলবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আগেই। শুক্রবার অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী জানান, কলেজে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তাঁদের কঠোর হতে হবে। রাশ ধরতে হবে কড়া হাতে। তবে পড়ুয়াদের প্রতি মানবিক হওয়ার জন্যও অধ্যক্ষদের পরামর্শ দেন তিনি।
এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো সায়েন্স ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, “প্রতিটি কলেজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। তার জন্য কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে অধ্যক্ষকেই। সে-কথা অধ্যক্ষদের জানিয়ে দিয়েছি।” মন্ত্রীর নিদান, ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত হাজিরা তো চাই-ই। শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও রুটিন মেনে ক্লাস নিতে হবে। তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও যে অধ্যক্ষদেরই, সেটাও তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
কী কী করতে হবে অধ্যক্ষদের?
এই ব্যাপারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে অধ্যক্ষদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান পার্থবাবু। তাঁর নির্দেশ, কলেজে কলেজে পরিকাঠামোর অবস্থা কী, শিক্ষক ও ছাত্র-সংখ্যা, কী কী বিষয় পড়ার সুযোগ রয়েছে এই সব তথ্য সাত দিনের মধ্যে উচ্চশিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দিতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, শিক্ষাকে রাজনীতি-মুক্ত করাই তাঁদের লক্ষ্য। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে হিংসা চলছে মূলত রাজনীতির সূত্রেই। অধ্যক্ষদের কেউ কেউ এ দিন মন্ত্রীকে জানান, কলেজ পরিচালনায় অনেক সময়েই তাঁদের অসহায় অবস্থায় পড়তে হয়। এক দিকে বাইরের দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ, তার সঙ্গে ছাত্র সংসদের দাপাদাপি এর মধ্যে পড়ে বহু ক্ষেত্রেই তাঁদের কিছু করার থাকে না। পরিচালন সমিতিতেও অনেক সময়েই তাঁদের গুরুত্বহীন হয়ে থাকতে হয়। কারণ, সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী-প্রতিনিধি মিলে ছ’জন থাকেন। তাঁরা একজোট হলে অধ্যক্ষদের কিছু করার থাকে না। কলেজ পরিচালনায় অধ্যক্ষদের আরও কিছু ক্ষমতা প্রয়োজন বলে মন্ত্রীকে জানান তাঁরা। এই ব্যাপারে পরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, অধ্যক্ষদের দাবি কত দূর যুক্তিযুক্ত, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী অধ্যক্ষদের জানান, এ বছর অনেক কলেজেই অনলাইনে ছাত্র ভর্তি চালু হয়েছে। কারা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন, ঝোলানো হয়েছে তার তালিকাও। কিন্তু সেটাই মেধা-তালিকা কি না, তা নিয়ে তো সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে। তাই এর পর থেকে ভর্তির আগে মেধা-তালিকা প্রকাশ করতেই হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের বৈঠক ছিল মূলত অধ্যক্ষদের সঙ্গে। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করে পার্থবাবু পরে জানান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবিধির মধ্যে ফারাক রয়েছে। কলেজ পরিচালন সমিতির গঠন, কর্মীদের ছুটি ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু অসামঞ্জস্য রয়েছে। সেগুলো দূর করা দরকার। কলকাতার উপাচার্যকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুরঞ্জনবাবু পরে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি তৈরির ব্যাপারে কলকাতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy