Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Subrata Mukherjee

Subrata Mukherjee death: সুব্রতদা তো সুব্রতদাই! সেন্ট্রাল লক আপে চাঁপ খাইয়েছিল

রাত কাটল সেন্ট্রাল লক আপে। খুব দুর্গন্ধ, খিদেও পেয়েছিল। সেই অবস্থার মধ্যেই সুব্রতদা হঠাৎ বলল, ‘‘শোন, তোকে যা খাওয়াব বলেছি, সেটাই খাওয়াব।’’

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেছে এই ছবিটি।

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেছে এই ছবিটি।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৫:০৭
Share: Save:

সে দিন বিকেলেই শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা। বিয়ের পরে প্রথম। দ্বিরাগমনে জোড় খোলা হবে। আরও যা সব নিয়মটিয়ম থাকে, সে সব হবে। এমবিএ-র ফাইনাল ইয়ারের ক্লাসও চলছে আমার। ক্লাসের মধ্যে একটি ছেলে এসে খবর দিল, বাইরে সুব্রত মুখার্জি এসেছেন। আমাকে ডাকছেন।

বাইরে এসে দেখলাম, জিপে সুব্রতদা। সঙ্গে অশোক দেব, শম্ভু দত্ত। সুব্রতদা বললেন, ‘‘চল পার্থ, রয়্যালের চাঁপ খাব।’’ আমি বললাম, ‘‘চলো।’’ গাড়ি ঘুরিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে পড়তে আমি এমনিই জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘‘খাওয়াবে তো?’’ সুব্রতদা বলল, ‘‘না খাওয়ালে এলাম কেন?’’

কিন্তু মিনিট কয়েকের মধ্যেই বুঝলাম, সুব্রতদা কেন এসেছে। গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা মহাজাতি সদনের দরজায়। ঝপঝপ করে নেমে পকেট থেকে পতাকা বের করে সুব্রতদারা তিন- চার জন মিলে স্লোগান দিতে শুরু করল— ছাত্র পরিষদ জিন্দাবাদ। মহাজাতি সদন দখল করল কে, ছাত্র পরিষদ আবার কে। এটা যে হবে ওরা জানত। আমি জানতাম না। দু’তিন বার এ রকম বলতেই পুলিশ এসে আমাদের জামা ধরে গাড়িতে নিয়ে গেল। কিন্তু স্লোগান দিয়ে আমিও ধরা পড়ে গেলাম।

প্রথমে আমাদের নিয়ে গেল থানায়। কোন থানা, তা আজ আর আমার ঠিক মনে নেই। থানায় বসে আমার মাথায় তখন ঘুরছে নতুন বউ আর মায়ের মুখ। বুঝতে পারছিলাম, বাড়িতে তুলকালাম হবে। যা যা বলা ছিল সে সবই উল্টে যাবে। সুব্রতদাকে দু’একবার সে কথা বলার চেষ্টাও করলাম। কিন্তু সুব্রতদা তখন তো অন্য মুডে। কিছু শোনা দূরে থাক, হঠাৎ চোখমুখে একটা কৃত্রিম রাগ এনে পুলিশকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে, ‘‘আমরা এক জনও বেল নেব না।’’ আমি ভাবছি, বলে কী! আমার তো যেতেই হবে।

কিছু ক্ষণ দেখেশুনে পুলিশ আমাদের সবাইকে লালবাজারে চালান করে দিল। আমাদের নিয়ে গাড়ি যখন লালবাজারের ভিতরে ঢুকছে, তখন আমি নিশ্চিত, দ্বিরাগমন চুলোয় যাক, এ বার হাজতবাস করতে হবে। সুব্রতদাকে বললাম, ‘‘আজ আমার দ্বিরাগমন আর তুমি....। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা।’’

সুব্রতদা তো সুব্রতদাই! বলল, ‘‘এই তো শ্বশুরবাড়ি।’’

রাত কাটল সেন্ট্রাল লক আপে। খুব দুর্গন্ধ, খিদেও পেয়েছিল। সেই অবস্থার মধ্যেই সুব্রতদা হঠাৎ বলল, ‘‘শোন, তোকে যা খাওয়াব বলেছি, সেটাই খাওয়াব।’’ কাউকে ম্যানেজ করে কোথা থেকে রয়্যালের বিরিয়ানি আর চাঁপ আনাল। খাওয়াও হল। কিন্তু তত ক্ষণে মা ফোন করেছে বৌদিকে ( সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়)। সম্ভবত বৌদিই খাবার নিয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে জামাকাপড় নেই, দ্বিরাগমনে যাওয়া আছে শুনে বৌদি মাকে শান্ত করেছিল। পর দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে জামিন হল। মা আর বৌদি কোর্টে দাঁড়িয়ে ছিল। এ স্মৃতি ভুলি কী করে!

মনে পড়ছে, আশুতোষ কলেজে ভর্তি হয়েছি বা হব হব। ইস্টবেঙ্গল–মোহনবাগান ম্যাচের আগে এক দিন বললাম, ‘‘সুব্রতদা, মাঠে যাব।’’ জানতাম, পাক্কা মোহনবাগান সুব্রতদা প্রত্যেকটা ম্যাচে মাঠে যায়। বলল, ‘‘যাবি তো চল।’’ পাশ থেকে সুশোভন বসু বলল, ‘‘তুই তো টালিগঞ্জে থাকিস। তুমি তো বাবা ইস্টবেঙ্গল না হয়ে যাও না।’’ আমি বললাম, ‘‘ধুর! আমি সুব্রতদার দলে।’’গেলামও। দেখলাম প্রিয়দাও হাজির। নেতাদের সঙ্গে বসে খেলা দেখছিলাম। ইস্টবেঙ্গল একটা গোল করতেই সুব্রতদা ধরে ফেলল আমাকে। বলল, ‘‘তুই লাফাচ্ছিস কেন রে পার্থ?’’ বললাম, ‘‘কোথায় লাফাচ্ছি? তবে গোলটা কিন্তু ভাল করেছে।’’ সুব্রতদা বলল, ‘‘বুঝেছি। চল তোকে বাইরে রেখে আসি।’’

সুব্রতদা যখন কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী, তখন আমার মামা শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান বন্ধ করা নিয়ে একটা গোলমাল করেছিল। মামা তো বামপন্থী। নানা কারণে কংগ্রেসের উপর চটেও থাকতেন। ১৯৭২ সালে সল্টলেকে কংগ্রেসের প্লেনারিতে সেই মামাকে দিয়ে গান লেখানোর জন্য আমাকে ধরেছিল সুব্রতদা। মন্ত্রীকে মুখোমুখি পেয়ে যা তা বলেওছিল মামা। গায়ে মাখেনি সুব্রতদা। পরে মামারও কমবয়সি মন্ত্রীর ব্যবহার ভাল লেগেছিল। লিখে দিয়েছিলেন— ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম।

অন্য বিষয়গুলি:

Subrata Mukherjee Death Partha Chaterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy