বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে)। পার্থ চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে মন্ত্রী হিসাবে তাঁর কোনও ‘ভূমিকা’ নেই। তিনি ‘নিরপরাধ’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যেমন হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে ‘ভুগছেন’, তেমন তিনিও ‘ভোগান্তি পোহাচ্ছেন’। সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে আলিপুর নগর দায়রা আদালতে নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে এমনটাই দাবি করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি যে কোনও মূল্যে জামিনের আবেদনও জানিয়েছেন।
গত বছরের ২৩ জুলাই নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে জড়িত থাকার অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ। তার পর এক বছর কেটে গিয়েছে। সোমবার আদালতে সেই প্রসঙ্গ তুলে আইনজীবীর মাধ্যমে পার্থ বলেন, ‘‘এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সিবিআই আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। সিবিআই আধিকারিকদের মুখোমুখি হয়েছি। ২৬ বছর ধরে জনগণের কাজ করছি। মন্ত্রী হিসাবে দুর্নীতিতে আমার কোনও ভূমিকা নেই।’’ তাঁর দাবি, এর পরেও তিনি ভুগছেন। যেমন এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ভুগছেন বুদ্ধদেব। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সাফার করছি। আমাদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু উডল্যান্ডসে ভর্তি। উনিও সাফারিং, আমিও সাফার করছি।’’
‘দুর্নীতি’কাণ্ডে নিজের দায় অস্বীকার করার সময় স্কুল সার্ভিস কমিশন কী ভাবে কাজ করে, তা-ও আইনজীবীর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন পার্থ। তিনি জানিয়েছেন, এসএসসি আইনের অনেক সংশোধনী হয়েছে। এক জন নীতি তৈরি করেন। একটা অংশ নিয়োগের কাজ করে। এসএসসি চলে বোর্ডের মাধ্যমে। এতে মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা নেই। মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন না। নীতি তৈরির ক্ষেত্রে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রিপোর্ট দেন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে। প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মুখ্যসচিবকে রিপোর্ট দেন। তিনি রিপোর্ট দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এর পরেই পার্থ আইনজীবীর মাধ্যমে স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি জানি না, কারা চাকরি পেয়েছেন।’’ এখানেই শেষ নয়, তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আমার দফতর বার বার পরিবর্তন হয়েছে। আমি পাঁচটা দফতরে ছিলাম। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর কী করেছেন, তার দায় আমার নয়।’’
এর পরেই জামিনের আবেদন নিয়ে অনড় পার্থ বলেন, ‘‘যে কোনও মূল্যে আমায় জামিন দিন। আমি এর জন্য দায়ী নই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সামনে পুজো আসছে। আমি (জামিনের জন্য) প্রার্থনা করছি। পরিবার রয়েছে। ২৫ বছরের বিধায়ক আমি।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, যদি কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হোক। তবে তিনি নিজেকে ‘নিরপরাধ’ বলেই দাবি করেছেন।
পার্থের আইনজীবী এজলাস থেকে বেরিয়ে জানিয়েছেন, এসএসসিতে মন্ত্রীর ভূমিকা নেই। এসএসসি একটি স্বাধীন প্রশাসনিক সংগঠন। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, প্রথম যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল, কোনও ‘ইনডিভিজুয়াল’ সাক্ষী নেই। পার্থের নামে অভিযোগ ছিল, তিনি এক জনকে নিয়োগ করেছিলেন, এক জনকে বদলি করেছিলেন। সেখানে এসএসসির বিষয়ে কথা বলা হয়নি। সেটা কোর্টের কাছে ‘প্রেয়ার’ করে জানানো হয়েছিল, ‘প্রোগ্রেস রিপোর্ট’ জমা দিক। দেখা গিয়েছে, প্রথম চার্জশিটে যাঁকে সাক্ষী করা হয়েছে, পরবর্তী চার্জশিটে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটে যত জন সাক্ষী রয়েছেন, সকলেই এসএসসি-র কর্মী। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, এসএসসির মাথায় রয়েছেন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। তাঁর বিষয়ে কী তদন্ত হয়েছে, তা-ও দেখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy