From Modi comment to restoration of Mpship via many legal ups and Downs, Rahul Gandhi’s last four months here dgtl
Rahul Gandhi
কেন সাংসদ পদ গেল, ফিরে পেলেন কী ভাবে, রাহুলের সাড়ে চার মাস
মোদী মন্তব্যের জন্য দু’বছরের জেলের সাজা হয় রাহুলের। খোয়াতে হয় সাংসদ পদ। সুপ্রিম কোর্ট রাহুলের সাজায় স্থগিতাদেশ দেয়। বহু আইনি উত্থান পতনের পর অবশেষে সাংসদ পদ ফিরে পেলেন রাহুল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ১৪:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
চার বছর আগের ‘অপরাধের’ জন্য দু’বছরের সাজা পেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। খারিজ হয়ে গিয়েছিল তাঁর সাংসদ পদ। সাড়ে চার মাস পরে সংসদে ঢোকার প্রবেশাধিকার পেলেন কেরলের ওয়েনাড় কেন্দ্রের সাংসদ।
ছবি: পিটিআই।
০২২১
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কর্নাটকের কোলারে কংগ্রেসের একটি প্রচারসভায় মোদী পদবি নিয়ে রাহুল আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। কয়েক জন ঋণখেলাপী শিল্পপতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি ‘মোদী’ হয় কেন?’’
—ফাইল ছবি
০৩২১
ওই ঘটনায় রাহুলের বিরুদ্ধে ‘পদবি অবমাননার’ অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন গুজরাতের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদী। গত ২৩ মার্চ গুজরাতের সুরাত দায়রা আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছরের জেলের সাজা শোনায়।
—ফাইল ছবি
০৪২১
জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদন করার জন্য রাহুলকে ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়। আদালতের রায় শোনার পর রাহুল টুইটারে (অধুনা এক্স) মহাত্মা গান্ধীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে একটি পোস্ট করেন। লেখেন, ‘‘আমার ধর্ম সত্য এবং অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, অহিংসা তা পাওয়ার মাধ্যম— মহাত্মা গান্ধী।’’
—ফাইল ছবি
০৫২১
জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যাবে। সেই আইনেই গত ২৪ মার্চ রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন স্পিকার ওম বিড়লা।
০৬২১
সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হয়। কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, “সত্যি কথা বলার সাজা পেলেন রাহুল।” এই নিয়ে আইনি লড়াই এবং রাজনৈতিক যুদ্ধে যাওয়ার কথাও জানায় কংগ্রেস।
০৭২১
সাংসদ পদ হারিয়েই টুইটার (অধুনা এক্স) হ্যান্ডলে নিজের পরিচয় বদলে ফেলেন রাহুল। টুইটার বায়োতে তিনি লেখেন, ‘ডিস্’কোয়ালিফায়েড এমপি’ (অপসারিত সাংসদ)। আভিধানিক বানান ডিস্কোয়ালিফায়েড-এর বদলে ডিস্’কোয়ালিফায়েড লেখা নিয়েও জলঘোলা হয়।
০৮২১
গত ২৭ মার্চ রাহুলকে দিল্লির তুঘলক রোডের সরকারি বাংলো ছাড়ার নোটিস ধরায় লোকসভার হাউজ়িং কমিটি। বাংলো ছাড়তে চিঠি দেওয়ার জন্য লোকসভার সচিবালয়কে ধন্যবাদ জানান রাহুল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে এই সময় রাহুলের বিরুদ্ধে আরও একটি মানহানির মামলা হয়।
০৯২১
সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুরাতের দায়রা আদালত (সেশনস কোর্ট)-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাহুল। আদালত জানায়, ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত রাহুলের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।
১০২১
গত ২২ এপ্রিল ১২ নম্বর তুঘলক লেন রোডের সরকারি বাংলো ছেড়ে দেন রাহুল। রাহুলের নতুন ঠিকানা হয় মা সনিয়া গান্ধীর জন্য বরাদ্দ ১০ জনপথের সরকারি বাংলো। উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলীর সাংসদ হিসাবে ওই বাংলোটি বরাদ্দ করা হয় প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়ার জন্য।
১১২১
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে দেন রাহুল। বাংলো ছেড়ে বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমি সত্য বলার জন্য যে কোনও মূল্য দিতে প্রস্তুত।”
১২২১
সুরাত দায়রা আদালতও রাহুলের আবেদন খারিজ করে সাজা কার্যকরের রায় বহাল রাখে। দায়রা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এবং নিম্ন আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে গুজরাত হাই কোর্টে আবেদন করেন রাহুল। এই মামলার শুনানি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি গীতা গোপী।
১৩২১
গত ৭ জুলাই সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রেখে গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছক বলেছিলেন, “নিম্ন আদালত রাহুল গান্ধীর সাজার যে রায় দিয়েছে, তা সঠিক।’’ উচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে সে সময় রাহুলের সাংসদ পদ ফেরা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।
১৪২১
সাজার উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রাহুল। বিচারপতি আরএস গাভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়।
১৫২১
গত ৪ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট রাহুলকে দেওয়া দু’বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। মানহানির মামলায় সর্বোচ্চ মেয়াদের শাস্তি দেওয়া হলেও কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
১৬২১
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দু’বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না, ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞাও।
১৭২১
সাংসদ পদ খোয়ালেও রাজনৈতিক ভাবে এই সময় আরও ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠতে দেখা যায় রাহুলকে। কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে বড় জয় পায় কংগ্রেস। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পর নেতা হিসাবে যে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন রাহুল, কর্নাটক জয়ে তা প্রায় স্বীকৃতি পেয়ে যায়। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে কাছাকাছি আনতে সহায়ক ভূমিকা নেয় বলেও অনেকে মনে করেন। তাদের মতে রাহুল এবং কংগ্রেসের প্রতি উপেক্ষা এড়িয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র পটভূমি তৈরি হয়ে যায় তখনই।
১৮২১
শীর্ষ আদালত রাহুলের সাজা-নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেই স্পিকারের কাছে এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর্জি জানায় কংগ্রেস। গত শনিবার কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী আদালতের রায়ের কপি লোকসভার সচিবালয়ে পাঠান।
১৯২১
সোমবার সকালে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সচিবালয় থেকে জানানো হয়, সাংসদ পদ ফিরে পাচ্ছেন রাহুল। চার মাসেরও বেশি সময় পরে দুপুর ১২টা নাগাদ সংসদে ঢোকেন রাহুল।
২০২১
রাহুল সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ায় কংগ্রেস শিবিরে তো বটেই উচ্ছ্বাস দেখা যায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরেও। সংসদে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে দেখা যায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে মিষ্টিমুখ করাতে। খড়্গে তাঁর পাশে বসা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিষ্টিমুখ করান। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ বিরোধী জোটের শরিক দলের অন্য সদস্যেরাও।
২১২১
বিরোধী জোট সূত্রে খবর, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া সংসদের অনাস্থা প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নেবেন রাহুল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আপাতত সেই সংশয় রইল না। ২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের অমেঠি, ২০১৯ থেকে কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুল। মাঝে কেবল চার মাস সাংসদ পরিচয় থাকল না তাঁর।