Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

মঞ্চে ছবি তোলানোর ভিড় নেই, মমতার দু’পাশে শুধু বক্সী, অভিষেক, নতুন বছরে নতুন তৃণমূল

নতুন তৃণমূল আসছে। এমন জল্পনা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। সেই নতুন তৃণমূলের শৃঙ্খলার রূপই কি সোমবার দেখা গেল? নজরুল মঞ্চে মাত্র তিন জনের বসার ব্যবস্থা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সোমবার মঞ্চে শুধু সুব্রত-মমতা-অভিষেক।

সোমবার মঞ্চে শুধু সুব্রত-মমতা-অভিষেক। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:২১
Share: Save:

মাঝখানে সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাঁ পাশে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডান পাশে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। নতুন বছরে নতুন তৃণমূলকে দেখা গেল। সাধারণত তৃণমূলের সভামঞ্চে মমতার কাছ ঘেঁষে ছবি তোলানোর ভিড় থাকে। এতটাই যে, সেটা প্রায় ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে পৌঁছয়। বাংলার এক বিশিষ্টজন তাঁর কোমরে এবং পাঁজরে এখনও ছবি তোলাতে উন্মুখ এক মন্ত্রীর কনুইয়ের গুঁতো মনে করতে পারেন!

সোমবার তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক সে দিক দিয়ে সত্যিই ‘নতুন’। বড় মাপের ঘোষণা হবে, দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং উপস্থিত থাকবেন আর মঞ্চে ভিড়ভাট্টা থাকবে না, এমন দৃশ্য তৃণমূলে এত দিন বিরল ছিল। নতুন বছরে নতুন তৃণমূল।

এখন প্রশ্ন, এই ‘নতুন’ তৃণমূলের কথাই কি বার বার বলে আসছিলেন অভিষেক? দলকে যিনি শৃঙ্খলায় বাঁধতে চেষ্টা করছেন?

সিপিএম বা বিজেপির মতো ‘ক্যাডারভিত্তিক’ দলে এই ধরনের শৃঙ্খলা প্রত্যাশিত। কিন্তু বাংলার বর্তমান শাসক দলের জন্মলগ্ন থেকেই দেখা গিয়েছে, দলীয় সভা বা বৈঠকে শৃঙ্খলার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় আবেগ। অনেকে বলেন, যে হেতু কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে মমতা তৃণমূল গড়েছিলেন, তাই তিনি কংগ্রেসের কিছু ‘ঐতিহ্য’ও বহন করে এনেছিলেন। নেতা-নেত্রীর পাশে আলোকবৃত্তের মধ্যে ভিড় করে ছবি তোলানো তার অন্যতম। মমতার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলে যা বাড়তে শুরু করেছিল। আবার অভিষেক গত বছর দলের দায়িত্বে আসার পর যা কমতে শুরু করেছে। তারই ছবি দেখা গিয়েছে সোমবার নজরুল মঞ্চে।

সিপিএম বরাবর এই সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে যে, বৈঠক বা সভায় কে কোথায় বসবেন, সেটা দলীয় শৃঙ্খলা মেনে আগে থেকেই ঠিক করা থাকবে। সেটাই হয়। এখনও। বিজেপির ক্ষেত্রে সভা-সমাবেশে অত কড়াকড়ি নিয়ম না থাকলেও সাংগঠনিক বৈঠক থেকে সাংবাদিক সম্মেলন— সব জায়গাতেই নেতাদের গুরুত্ব অনুযায়ী আসন পূর্বনির্ধারিত থাকে। আবার কেন্দ্রীয় নেতা বা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা। নরেন্দ্র মোদীর সভা থাকলে তাঁর মঞ্চে কে কে থাকবেন, তা আগে থাকতে দিল্লিকে জানিয়ে দিতে হয়। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী দফতরকেও। অনেক সময়ে দিল্লির নির্দেশে তা কাটছাঁটও হয়। তবে সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিও কাজ করে।

কিন্তু তৃণমূল এত দিন তেমন শৃঙ্খলায় ছিল না। দলীয় বৈঠকে আবেগই প্রাধান্য পেত। প্রশাসনিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা মঞ্চে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বসতেন। দলীয় বৈঠকে ‘কাছের এবং গুরুত্বপূর্ণ’ বিচারে কিছু নেতা বা মন্ত্রী মঞ্চে জায়গা পেতেন। যেমন ফিরহাদ হাকিম বা অরূপ বিশ্বাস। কিন্তু সোমবার তাঁরাও মঞ্চে জায়গা পাননি। মমতা ছাড়া অভিষেক এবং বক্সী মঞ্চে ছিলেন পদাধিকার বলে। বক্সী মঞ্চে থাকলেও বক্তৃতা করেননি। প্রথমে বলেছেন অভিষেক। তার পরে মমতা।

এই শৃঙ্খলার ইঙ্গিত মিলেছিল গত ২১ জুলাই ধর্মতলায় শহিদ দিবসের সমাবেশেও। সেই সমাবেশ পরিকল্পনার মূল দায়িত্বে ছিলেন অভিষেক। সে দিনও অতীতের তুলনায় নেতাদের বসার ব্যবস্থা অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। একাধিক মঞ্চে বিভিন্ন স্তরের জন্য বসার ব্যবস্থা ছিল। হুড়োহুড়ি কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। বরাবর ‘দিদি’-র কাছাকাছি থাকতে পারা অনেক নেতার মঞ্চে জায়গা হয়নি। যেমন মুকুল রায়। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক অনেক দিন পরে ডাক পেয়েছিলেন এবং এসেছিলেন শহিদ সমাবেশে। কিন্তু তাঁর আসন ছিল মঞ্চের নীচে সামনের সারিতে।

তবে কিছু প্রশ্ন থাকছে। সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, ‘‘কলকাতায় বলে এটা সম্ভব হল। জেলায় গেলে হবে না। সেখানে অনেক নেতা রয়েছেন, যাঁরা পদে বড় না হলেও স্থানীয় রাজনীতির বিচারে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের মঞ্চে জায়গা দিতেই হবে। রাজনীতিতে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে।’’ তবে অন্য এক নেতা আশাবাদী, ‘‘কলকাতায় যখন হয়েছে, জেলাতেও হবে। হয়তো সময় লাগবে। তবে হবে। এখন দলীয় শৃঙ্খলা আগের তুলনায় বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সোমবারের বৈঠকেও শৃঙ্খলায় গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটা চলতে থাকবে।’’

আবার একই সঙ্গে, এ-ও দেখার যে, মমতা বা অভিষেক নিজেরা যখন জেলাসফরে যাবেন, তখনও কি মঞ্চে কারা বসবেন, তা আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া থাকবে? সকলকে বলতে দেওয়া হবে না? যে নেতারা ভিড় জোটান, তাঁদের মঞ্চে তুলে বক্তৃতা দেওয়ানোটা অ-বামপন্থী রাজনীতির একটা দীর্ঘ দিনের প্রথা। তা হলে কি এ বার ‘নতুন’ তৃণমূলে সেটা ভাঙা হবে?

কিন্তু এটাই কি ‘নতুন’ তৃণমূল? রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘যে কোনও পরিবর্তন মানেই তো নতুন। তবে আমাদের দলে শৃঙ্খলা ছিল না, তা তো নয়। বিচ্যুতি থাকতে পারে। কিন্ত শৃঙ্খলা না থাকলে দল এত বড় হতে পারত না। পর পর তিন বার ক্ষমতায়ও আসতে পারত না। দল যত বড় হয়েছে, তত দায়িত্ব বেড়েছে। ফলে বদল তো আনতেই হবে। কেউ যদি একে নতুন তৃণমূল মনে করে, তা হলে তা-ই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC Abhisek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy