দেব, মিমি, মনোজ, নুসরতদের দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি থেকে ছাড় মমতার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দলকে সময় দেওয়া বাধ্যতামূলক। সোমবার নজরুল মঞ্চের সভা থেকে দলের সাংসদ-বিধায়কদের স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই সঙ্গেই বিশেষ কয়েক জনকে সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে যোগদানের বিষয়ে ছাড় দেওয়ার জন্য দলের নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে টালিগঞ্জের তিন তারকা এবং বাংলার এক ক্রিকেটার রয়েছেন। রয়েছেন, অসুস্থ ও অশক্ত কয়েক জন জনপ্রতিনিধিও।
তৃণমূল নেত্রীর দেওয়া ছাড়ের তালিকায় রয়েছেন দলের তিন লোকসভা সাংসদ, দেব (দীপক অধিকারী), মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জহান। মমতা সভায় বলেন, ‘‘নুসরত টাইম দেয়নি। ওরা একটু ফিল্ম-টিল্ম করে, দেব, নুসরত, মিমি ওদের একটু রিলাক্সেশন (ছাড়) দিবি।’’ তার পর মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়ার নামও করেন মমতা। কিন্তু এর পরেই মমতা জানান জুন তাঁর কেন্দ্রের জন্য যথেষ্ট সময় দেন।
আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ তথা বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হাও দলের জন্য যথেষ্ট সময় দেননি বলে জানিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘ও অতটা পারবে না। ওকে ইলেকশনে কাজে লাগাব।’’
মমতা জানান, হাওড়ার শিবপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি এখনও জাতীয় স্তরের ক্রিকেটে রয়েছেন। তাই সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি থেকে তাঁকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর এক অভিনেতা, বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ‘যতটা পারবে সময় দেবে’ জানিয়ে মমতা তাঁর সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। এ ছাড়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে সময় দেওয়া থেকে রেহাই পেয়েছেন মথুরাপুরের সাংসদ চৌধুরী মোহন জাটুয়া।
তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, দেব, মিমি, নুসরতের মতো টালিগঞ্জের প্রথম সারির তারকাদের ‘স্টার ভ্যালু’ যাতে অটুট থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই তাঁদের বাড়ি বাড়ি পাঠানোর কর্মসূচি থেকে রেহাই দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সম্ভবত, শত্রুঘ্নের মতোই দেব, মিমি, নুসরতদের ‘তারকা ভাবমূর্তি’কেও ভোটের প্রচারে ব্যবহারেরই পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি থেকে মমতা ছাড় দেননি বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী এবং সাংসদ শতাব্দী রায়কে।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘সিনেমা জগতে ব্যস্ততা’ কম থাকার কারণেই তাঁদের দিদি সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে যুক্ত থাকতে বলেছেন মমতা। এঁদের মধ্যে বীরভূমের তিন বারের সাংসদ শতাব্দীকে এখন অভিনেত্রীর তুলনায় নেত্রীর ভূমিকাতেই বেশি দেখা যায়। ব্যারাকপুরের বিধায়ক তথা পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে সম্প্রতি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাকে সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে ব্যবহার করতে চাইছে দল। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে পূর্ব মেদিনীপুরে বিশেষ নজর দিতে চাইছে দল। নন্দীগ্রাম লাগোয়ে চণ্ডীপুরের বিধায়ক সোহমকে তাই কর্মসূচিতে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে ডাকা দলীয় সভায় সোমবার আগামী দু’মাসের বিশেষ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিছক জনসংযোগ নয়, এই কর্মসূচির লক্ষ্য মা-মাটি-মানুষের জীবনের সঙ্গী হওয়া। সোমবার নজরুল মঞ্চের সভায় ওই কর্মসূচিকে তৃণমূলের ‘কর্মযজ্ঞ’ বলে ঘোষণা করে অভিষেক জানান, এটি বাংলার ১০ কোটি মানুষের জন্য ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে ‘দিদির দূত’।
অভিষেক জানিয়েছেন, আগামী ১১ জানুয়ারি এই ‘দূত’ বা প্রতিনিধিদের মধ্যে যেমন বাংলায় তৃণমূলের সাড়ে তিন লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন, তেমনই থাকবে একটি মোবাইল অ্যাপলিকেশনও। যার কাজ হবে বাংলার ১০ কোটি মানুষ এবং ২ কোটি বাড়ির সমস্যা, অভাব, অভিযোগের কথা দলের শীর্ষ স্তরে এমনকি নেত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর তাই এই কর্মযজ্ঞের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy