Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
newborn trafficking

পাচারের জন্য রাখা ১০ শিশু উদ্ধার ঠাকুরপুকুরের হোমে, ধৃত মালকিন

বাদুড়িয়ার পর ঠাকুরপুকুর। ‘পূর্বাশা’ নামে ঠাকুরপুকুরের এক হোম থেকে ১০টি শিশুকন্যাকে উদ্ধার করল সিআইডি। উদ্ধার হওয়া শিশুদের বয়েস এক থেকে দশ মাস।

উদ্ধার হওয়া শিশুগুলি।

উদ্ধার হওয়া শিশুগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ১৩:৫৯
Share: Save:

বাদুড়িয়ার পর ঠাকুরপুকুর। ‘পূর্বাশা’ নামে ঠাকুরপুকুরের এক হোম থেকে ১০টি শিশুকন্যাকে উদ্ধার করল সিআইডি। উদ্ধার হওয়া শিশুদের বয়েস এক থেকে দশ মাস। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাখরাহাট রোডের কলাগাছিয়ার ওই হোমে হানা দেয় সিআইডি। হোমের তিনতলার একটি ঘর থেকে ওই শিশুদের উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে হোমের মালিক রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আটক করা হয়েছে হোমের আরও কয়েক জন কর্মীকে।

সিআইডি সূত্রে খবর, এটি একটি মানসিক প্রতিবন্ধীদের হোম। নির্মীয়মাণ ওই বহুতলের এক তলায় মানসিক রোগীদের রাখা হয়। আর এই হোমের আড়ালেই চলে শিশু পাচারের চক্র। তিন তলার যে ঘরে শিশুদের রাখা হয়েছিল, তার অবস্থা দেখেও সিআইডি কর্তারা অবাক হয়ে যান। চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবর্জনা। চরম অস্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশ। হোমেরই এক কর্মী জানান, ১০ নভেম্বর শিশুগুলিকে এই হোমে আনা হয়। শিশুপাচারের অভিযোগে হোমের মালিককে গ্রেফতার করা গেলেও যে মহিলা শিশুগুলিকে পূর্বাশা হোমে নিয়ে আসত তাকে এখনও ধরা যায়নি। তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে সিআইডি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায়ই রাতে গাড়ি করে শিশুদের নিয়ে আসা হত এই হোমে। গাড়ি থেকে বাচ্চাগুলোকে বার করে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হোমে ঢুকিয়ে দেওয়া হত। তবে এই শিশুদের যে পাচারের জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে তা ঘুনাক্ষরেও সন্দেহ হয়নি কারও।

সিআইডি অফিসাররা অনুমান করছেন, বেহালার সাউথ ভিউ নার্সিংহোমের মালকিন ‘বড়দি’ ওরফে পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকেই পূর্বাশা-তে এই শিশুকন্যাগুলিকে নিয়ে এসে রাখা হয়। উদ্ধার হওয়া শিশুদের আপাতত জোকা ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


হোমের মালিক রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুলিশ জানিয়েছে, পূর্বাশা হোমের মালিক ধৃত রিনা বন্দ্যোপাধ্যায় বাদুড়িয়া কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে। যে ভাবে একের পর এক শিশু উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে তাতে গোয়েন্দাদের অনুমান, এই পাচার চক্রের সঙ্গে শহর ও শহরতলির আরও অনেক নার্সিংহোম জড়িত রয়েছে। রাঘব বোয়ালদের ধরতে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।

‘সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’— বছর দুয়েক আগে বাদুড়িয়া ও হাবরার মছলন্দপুরের এই ট্রাস্টটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত জাহাজকর্মীর মেয়ে পলি দত্ত ওরফে উত্পলা ব্যাপারী। ট্রাস্টের ঘোষিত কাজ ছিল প্রতি সপ্তাহে এক দিন অসুস্থ, দরিদ্র মানুষদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া, প্রতি দিন বিকেলে এলাকার দুঃস্থ মেধাবী শিশুদের পড়াশোনা করানো। কিন্তু সেই ‘চ্যারিটেবল’ কাজের পিছনেই চলত শিশু পাচার চক্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভবঘুরে প্রসূতিদের ধরে নিয়ে এসে প্রসব করিয়ে সদ্যোজাতকে চড়া দামে দেশ-বিদেশে বিক্রি করে দেওয়া হতো। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা ট্রাস্টের পাচার চক্রের কথা জানতে পারেন। গ্রেফতার করা হয় উত্পলা ব্যাপারী ও ট্রাস্টের সম্পাদক সত্যজিত্ সিংহকে। এঁদের জেরা করে একের পর এক মাথার নাম বেরিয়ে আসতে শুরু করে।


ঠাকুরপুকুরের ‘পূর্বাশা’ হোম।

এই পাচার চক্রের শিকড় যে কলকাতাতেও ছড়িয়ে পড়েছে সে কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। গত ২১ নভেম্বর বাদুড়িয়ার সোহান নার্সিংহোম থেকে তিন সদ্যোজাতকে উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় নাজমা নামে এক মহিলা-সহ আটজনকে। তাঁদের জেরা করে কলকাতার দু’টি নার্সিংহোমে হানা দেন তদন্তকারীরা। পাচার কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেহালার সাউথ ভিউ নার্সিংহোম থেকে গ্রেফতার করা হয় তুতুল বাগচী ও প্রভা ভৌমিক নামে দুই পদস্থ কর্মীকেও। সেই সূত্র ধরে উত্তর কলকাতার মহাত্মা গাঁধী রোডের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমে বুধবার তল্লাশি চালিয়ে সন্তোষ সামন্ত নামে এক চিকিত্সককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, শহর ও শহরতলির নার্সিংহোমগুলিতে একই কায়দায় শিশু সরিয়ে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হতো।

আরও পড়ুন:
মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসছে শিশুদের হাড়গোড়, কঙ্কাল

—নিজস্ব চিত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

newborn trafficking Thakurpukur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE