Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

অমিতাভ থেকে ছোটা ভীম আকাশ ভরা ‘জাম্বো’ ঘুড়ি

স্কুল থেকে ফেরার পথে রোহন তার মাকে দেখাচ্ছিল, ‘‘মা দেখো কেমন ডোরেমন কাইট উড়ছে।’’ নৈহাটির বাসিন্দা বিদিশা ঘোষও দেখে অবাক হয়েছিলেন। শিল্পাঞ্চলের ধূসর আকাশে ঘুড়ি ওড়ে ঠিকই। কিন্তু তা বলে এমন রঙ-বেরঙের অতিকায় ঘুড়ি কখনও তাঁর নজরে পড়েনি।

ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

বিতান ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

স্কুল থেকে ফেরার পথে রোহন তার মাকে দেখাচ্ছিল, ‘‘মা দেখো কেমন ডোরেমন কাইট উড়ছে।’’ নৈহাটির বাসিন্দা বিদিশা ঘোষও দেখে অবাক হয়েছিলেন। শিল্পাঞ্চলের ধূসর আকাশে ঘুড়ি ওড়ে ঠিকই। কিন্তু তা বলে এমন রঙ-বেরঙের অতিকায় ঘুড়ি কখনও তাঁর নজরে পড়েনি। ঘুড়ি ওড়াচ্ছে যে, সেই আট কি নয় বছরের বালকের তুলনায় ঘুড়িটা আকারে অন্তত তিন গুণ বড়। তাও ওড়ানো যাচ্ছে সহজেই। ফাইবারের লাটাইতে এলইডি স্ট্রিপ লাগানো। লাল-নীল আলো জ্বলছে-নিবছে।

বাজার ধরতে এবারের আকর্ষণ এই ‘জাম্বো’ ঘুড়ি। আগে বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান ছাড়া এমন অতিকায় ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল না। তা ছাড়া কাগজের তৈরি সাবেক বড় ঘুড়ি ওড়াতে অন্তত দু’জন লোক লাগতই। আকাশে তোলা এবং হাওয়ার সঙ্গে যুঝতে কসরতও করতে হত বেশ। এই ঘুড়িতে সে সবের বালাই নেই। নাইলন কাপড়ের এই ঘুড়ি যেমন হালকা, তেমনি মজবুত। বৃষ্টি নামলেও ভিজে নষ্ট হবে না। বরং এর ডিজাইন এমন ভাবে করা যাতে হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোট ঘুড়ির থেকেও ভাল উড়তে পারে। সুতোও প্লাস্টিকের। আকাশে ওড়ার পর শুধু লাটাই ধরে থাকতে হবে। ঘুড়ি উড়বে হাওয়ার সঙ্গে সামাল দিয়ে। এমনকী হাওয়া কমলেও ঝপ করে নেমে আসবে না।

সেই সঙ্গে বদলে গিয়েছে ঘুড়ির সাজ। পেটকাটি চাঁদিয়ালকে বহু দূরে ছেড়ে এসেছে ঘুড়ির এই নয়া দুনিয়া। সেখানে এখন ডোরেমন, মিকি মাউস, ছোটা ভীম, হনুমান, অনেক চরিত্র আঁকা ঘুড়ি। বাদ পড়েনি বলিউডও। প্রায় ১০ ফুটের অমিতাভ বচ্চন, আট ফুটের ক্যাটরিনা কাইফ, সাত ফুটের অনুষ্কা শর্মা, ছ’ফুটের রণবীর কপূরদেরও এখন হামেশাই আকাশে উড়তে দেখা যাচ্ছে।

শ্যামনগর, নৈহাটি, কাঁচরাপাড়ার বাজারে বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এই জাম্বো ঘুড়ি বিক্রি হতে দেখা গেলেও এর আসল বাজার টিটাগড়ের পি কে বিশ্বাস রোডে। সেখানে কথা বলে জানা গেল, নাইলন কাপড়ের জাম্বো ঘুড়ি প্রধানত আসে চিন থেকে। সব থেকে ছোটটার দাম ৫০ টাকা আর বড় ২৫০ টাকা। হাল ফ্যাশনের ছাতায় যে ধরনের প্লাস্টিকের কাঠি ব্যবহার করা হয়, এই ঘুড়িতেও তাই হয়েছে। এ সব জায়গায় ঘুড়ি তৈরির কারখানাও রয়েছে। কারখানায় মূলত কাগজের ঘুড়িই তৈরি হয়। তবে গত বছর দুয়েক ধরে নাইলন কাপড়ের কিছু কিছু ঘুড়িও তৈরি হচ্ছে। ছোটা ভীম কিংবা বলিউডের তারকাদের নকশার ঘুড়ি তৈরি হচ্ছে টিটাগড়ে।

টিটাগড়ের ঘুড়ি বাজারে সার দিয়ে দোকান — জে কাইট, এস কাইট, এম কাইট, কে কাইট। জে কাইটের মালিক মানিক সাউ বলেন, ‘‘এ বছর জাম্বো ঘুড়ি ভাল বাজার ধরেছে। ওই ঘুড়ির সঙ্গে ভাল লাটাই আর ভাল সুতো বিক্রি হচ্ছে।’’ এমনিতেও এখন নাইলন আর প্লাস্টিক সুতোই বেশি বিক্রি হয়। আঠা, কাচের গুঁড়ো দিয়ে সুতো মাঞ্জা দেওয়ার বালাই নেই। যত দামী সুতো, তার জোরও তত বেশি। ঘুড়ির লড়াই তাই এখন অনেকটাই টাকার লড়াই। বড় ঘুড়ি, লাটাই মিলিয়ে প্রায় পাঁচশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ‘‘তবে পঞ্চাশ টাকার লাটাই ঘুড়িও বাজার থেকে উঠে যায়নি,’’ বলেন কে কাইটের মালিক পাঁচু সাউ। সাবেক পাতলা, রঙিন কাগজের বদলে এখন সেলোফেনের ঘুড়ি এসেছে। তার দামও কম। তাতেও ডোরেমন, ক্যাটরিনার ছবি ছাপা থাকে। পাঁচুবাবু বলেন, ‘‘তবে কাপড়ের ঘুড়িগুলোয় চরিত্রগুলো অনেক জীবন্ত। আকাশে উড়লে মনে হয় কাট আউট উড়ছে।’’

নতুন ঘুড়ির টানে বড়রাও অনেকে ফের ফিরে এসেছেন পুরনো নেশায়। স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে ভিড় ঠেলে ঘুড়ি কিনছেন মধ্য চল্লিশের লোকেরাও। কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা অসিত সরকার বলেন, ‘‘এক সময় বাক্স ঘুড়ি উড়িয়েছি বন্ধুরা মিলে। এই জাম্বো ঘুড়ি দেখে আবার শখ চাপল। এত বড় ঘুড়ি উড়লে আকাশটাও ভাল লাগবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE