ঐতিহ্যশালী স্কুল সুনীতি অ্যাকাডেমির হস্টেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন অভিভাবক। ছাত্রীদের মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও তাঁদের দাবি। হস্টেলের ছাত্রী ও অভিভাবকদের একাংশ আন্দোলনে নামলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট তলব করতেই রাতারাতি আসরে নামতে বাধ্য হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, “এত ঐতিহ্যমন্ডিত স্কুলের হস্টেল নিয়ে যে সব অভিযোগ শুনছি তা বেদনাদায়ক। জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
এর পরেই অভিভাবকদের ডেকে আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। ছাত্রী আবাসের সুপার শ্রাবস্তী মজুমদার অবশ্য দাবি করেছেন, “সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।” স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ছাত্রীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখার নির্দেশ পেয়ে সেই মতো পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “স্কুলের ঐতিহ্যে এতটুকুও ক্ষুণ্ণ হতে দেব না।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ জুলাই ছাত্রী আবাসের একাধিক অনিয়ম ও অব্যবস্থা নিয়ে আবাসিকদের কয়েকজন অভিভাবকের সাক্ষরিত অভিযোগ জেলাশাসকের দফতরে জমা পড়ে। অভিযোগের কপি দেওয়া হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকেও। ছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ঘটনা জানাজানি হতেই ৪ জুলাই রাত থেকে সুপারের মদতে হস্টেলের আবাসিকদের উপরে মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। কয়েকজন ছাত্রী কোনও ভাবে বাইরে বেরিয়ে ফোনে বাড়ির লোকজনকে তা জানিয়ে দেয়। এদিন সকালে একদল অভিভাবক স্কুলের সামনে জড়ো হন। ধীরে ধীরে গোটা কোচবিহারে বিষয়টি চাউর হয়। তখনই সে কথা কানে যায় শিক্ষামন্ত্রীরও।
রাজ আমলের স্মৃতি বিজড়িত কোচবিহারের এই খ্যাতনামা স্কুলের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন গোটা কোচবিহারই। কোচবিহারের সাংসদ রেণুকা সিংহ বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য এতটুকু ক্ষুণ্ণ হতে দেওয়া যাবে না। অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” সাংসদ নিজেও দলের শিক্ষা সেলের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়াও একই কথা জানান। কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডুর কথায়, সুনীতি অ্যাকাডেমির সঙ্গে কোচবিহারবাসীর ভাবাবেগ যুক্ত। তিনি বলেন, “সুনীতির সুনাম বজায় রাখতে সকলকে নজর রাখতে হবে।”
১৩৩ বছরের প্রাচীন ওই স্কুলের প্রাক্তনীরাও অভিযোগের কথা শুনে স্তম্ভিত। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী পল্লবী গোস্বামী বলেন, “আমাদের অনেক সহপাঠী ওই ছাত্রী আবাসে থাকতেন। কখনও এমন অভিযোগ শুনিনি। ছাত্রী আবাস চত্বরেও ঝোপঝাড়, আগাছা তখন দেখিনি।” কোচবিহার ঠাকুর পঞ্চানন মহিলা কলেজের শিক্ষিকা দীপান্বিতা দাশগুপ্তর কথায়, তাঁদের সময় ছাত্রী আবাসের পরিবেশ ভাল ছিল। এই স্কুলের প্রাক্তনীরা অনেকেই দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। দীপান্বিতা বলেন, “নিজের স্কুল সম্পর্কে অপ্রীতিকর তথ্য পেলে তার চেয়ে দুঃখের আর কিছু হয় না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে ও অভিভাবকদের কয়েকজন জানান, হস্টেলের পরিবেশ দ্রুত বদলেছে। এখন অবহেলা অযত্নের ছাপ ফুটে উঠেছে ওই হস্টেলের সর্বত্র। তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষা সেলের কোচবিহার জেলা আহ্বায়ক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “অভিযোগগুলি সত্যি হয়ে থাকলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বিষয়টি ভাল করে তদন্ত করা দরকার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ এই স্কুলের ঐতিহ্য নষ্টের চেষ্টা করছে কি না, তা-ও দেখা দরকার।”
স্কুলের শিক্ষিকাদের আর্জি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সরিয়ে রেখে খোলা মনে স্কুলের ঐতিহ্য বজায় রাখার ব্যাপারে সবার সহযোগিতা দরকার। ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ভূপালি রায়ের প্রতিক্রিয়া, “এমন অভিযোগ ওঠাই কাঙ্ক্ষিত নয়। সেটা সত্যি হলে দুর্ভাগ্যের তো বটেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy