আগুনে মৃত দম্পতির ছেলেকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।
চম্পাসারিতে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে এক দম্পতি সহ তাঁদের ১২ বছরের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত তদন্ত শেষ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার সকালে চম্পাসারির ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। সেখান থেকে ফেরার পরে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে তিনি ফোন করেন। যে সিলিন্ডার থেকে আগুন ছড়িয়েছে সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা কেন করা হয়নি সে প্রশ্নও তুলেছেন গৌতমবাবু।
পরিদর্শনের পরে মন্ত্রী বলেন, “পুলিশের তদন্ত নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বাজেয়াপ্ত করা সিলিন্ডারের ফরেন্সিক পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে শুনেছি। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলছি। তিনি দ্রুত তদন্ত শেষ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনায় গাফিলতি চিহ্নিত না হলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।” চম্পাসারির ঘটনাতে গ্যাস সিলিন্ডার সরবারহ নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় পুলিশ প্রশাসন এবং গ্যাস সরবারহকারী বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়েও বৈঠক করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। রাস্তা সহ অন্যত্র গ্যাস সিলিন্ডার কী ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে তা নিয়েও সরবারহকারী সংস্থার কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
ওই ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। পুলিশের ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও এ দিন দুপুরে চম্পাসারিতে যান। অশোকবাবুর কথায়, “এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ করছেন বাসিন্দারা। তাই ঘটনাটির উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা গ্যাস সিলিন্ডারও পরীক্ষার ব্যবস্থা করানো হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি মন্ত্রীকে জানাব।”
এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ চম্পাসারির ঢিকনিকাটায় পৌঁছোন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। গত ২ মের আগুনে দরমাবেড়ার ঘরটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে একটি ঘরেই থাকতেন উত্তমবাবু ও স্ত্রী আদরীদেবী। পোড়া বেড়া, পোশাক, বই খাতার পোড়া টুকরো সরিয়ে এলাকাটি আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। এখন বাড়ির চিহ্ন বলতে শুধুমাত্র কংক্রিটের মেঝে। মন্ত্রীকে কোথায় ঘর ছিল তা দেখাতে গিয়েই কেঁদে ফেলে বাবু। মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনাও দেন গৌতমবাবু। বাড়ি হারিয়ে এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে বাবু থাকছে শুনে, তার থাকার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বাবু বলেন, “স্যার বাবা-মা, বোন সকলকে হারিয়েছি। কোথায় থাকব তারও ঠিন নেই। বাবা-মা চেয়েছিল আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাই।” বাবুকে সাহায্য করার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এখন নির্বাচনী আচরণ বিধি চলছে, বেশি কিছু বলতে পারব না। দু’একদিনের মধ্যেই সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, আমার বেতনের টাকা দিয়ে ওর পড়াশোনার সাহায্য করব। ওর কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।’’ গৌতমবাবু শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এসজেডিওকে ওই বাড়িটি নতুন করে তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ দিন চম্পাসারির ঘটনাস্থল থেকে রওনা হওয়ার সময়ে মন্ত্রীকে বাবু বলেন, “স্যার, গ্যাস সিলিন্ডার লিক থাকায় আগুন লেগে যায়। দেখবেন এমন ঘটনা আর কারও সঙ্গে যাতে আর না ঘটে।” মন্ত্রীর আশ্বাস, “সে কারণেই পুলিশকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে বলেছি। কারণ না জানতে পারলে, তার প্রতিকার সম্ভব নয়।” শিলিগুড়ির প্রধাননগরের গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার কর্ণধার বাপি দাস কয়েকদিন আগে জানিয়েছিলেন, মৃত উত্তমবাবু অন্য একজনের সংযোগ ব্যবহার করে গ্যাস সিলিন্ডার নিতেন। তিনি ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। এখনও সেই ব্যবস্থা নিলেন না কেন? তা চাড়া গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেওয়া হয়েছিল কি না? সরবরাহকারী সংস্থা কোন ভ্যানচালকের মাধ্যমে তা কোথায় সরবরাহ করেছিল? তাঁকে চিহ্নিত করে জেরা করা হয়েছে কি? এ সব প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের পড়শিদের অনেকেই। এ দিন এ ব্যাপারে বাপিবাবু বলেন, “পুরো ঘটনাটি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পুলিশকেও বিস্তারিত জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy