রামঘাটে কাজ বন্ধ। নিজস্ব চিত্র।
চাপের মুখে রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কয়েকদিন আগে আইসির গাড়ি জ্বালানো, বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণের সরঞ্জাম সরানোর ঘটনা ঘটেছে। সেই গোলমালের পরে কাজ বন্ধ রয়েছে। আপাতত কোনও কাজ হচ্ছে না। পরে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যাঁরা গুন্ডামি করছে, যাঁরা পিছন থেকে মদত দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা নয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এগোব।”
গত বুধবার রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির বিরোধিতায় অনশনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ, কংগ্রেস নেতা রাজেশ যাদব-সহ ২৫ জনকে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশির নামে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ আনেন বাসিন্দারা। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি পৃথক ভাবে আন্দোলনে নামে। লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। রামঘাটের শ্মশানের জমি বেসরকারি একটি ট্রাস্টের হাতে রয়েছে। তাদের মধ্যেও দুটি শিবির তৈরি হয়। সেই প্রেক্ষাপটেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে ওই শ্মশানে বৈদুতিক চুল্লির কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হল বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত জানার পরে কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী মানুষের মনের কথা বুঝতে পারেন না। এটা আমরা বরাবরই বলছি। সে জন্য মানুষের আপত্তি সত্ত্বেও শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি করায় অনড় থেকেছেন। প্রতিবাদীরারা চড়, লাঠি, ঘুষি খেয়েছে।” শঙ্করবাবুর দাবি, “মন্ত্রীর এখন ওই এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ধৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত।”
সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “জনমতের কাছে সরকারকে পিছু হটতে হয়েছে। এটা মন্ত্রীর আগেই বোঝা উচিত। এতে হয়তো শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বাসিন্দারা চুল্লির বিপক্ষে ছিলেন না। ওঁরা বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আলোচনা চেয়েছিলেন। সেখানে মারধর, গ্রেফতার করায় এই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।”
তৃণমূলের অন্দরের খবর, মূলত দুটি কারণে আপাতত রামঘাটের কাজ বন্ধ রাখার কথা ভাবতে হয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে। প্রথমত, আগামী ২ ডিসেম্বর ৩ দিনের সফরে উত্তরবঙ্গে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম দিন শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কেই দলীয় সমাবেশ হওয়ার কথা। ফলে, রামঘাট নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে রাশ টানার পক্ষে তৃণমূল নেতাদের একাংশ। দ্বিতীয়ত, আইসির গাড়ি পোড়ানো, এলাকার ২৫ জন গ্রেফতার, শতাধিক বাসিন্দার বিরুদ্ধে মামলা রুজু নিয়ে সরকার বিরোধী মনোভাব ক্রমশ দানা বাঁধছে সেটা আঁচ করেছেন তৃণমূল নেতারা। সে জন্য সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ রেখে নাগরিক কনভেনশন, আলোচনা করে আমজনতাকে পাশে নিয়ে এগোনোর জন্য কিছুটা সময় নিতেই, কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত বলে কয়েকজন নেতার দাবি।
বস্তুত, রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাসের দিন থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। দূষণের অভিযোগ করে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অনুষ্ঠানস্থলে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে আলোচনার সময় মহানন্দ মণ্ডল নামের এক ব্যক্তিকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী চড় মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি কাজে বাধা, মন্ত্রীকে হেনস্থার অভিযোগে মহানন্দবাবু ও কংগ্রেস নেতা রাজেশবাবু গ্রেফতারও হন। পরে তাঁরা জামিন পান। তৈরি হয় নাগরিক মঞ্চ। জলপাইমোড়ে প্রতিবাদ মঞ্চ, ঝাড়ু মিছিলের পর একদল বাসিন্দা প্রকল্পের ইটের পিলারও গুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কাজ বন্ধের দাবিতে শুরু হয় রিলে অনশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy