মা এখন তৃণমূলের নেত্রী। আর মামা হলেন ডাকসাইটে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা। তাই আর মামাবাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠে না নীলাঞ্জনের। সে ইচ্ছেটাও যেন অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। লোকসভা ভোট-ঘণ্টা বাজতে মায়ের সঙ্গেই কলকাতা থেকে ছুটে এসেছেন কোচবিহারে। দিনহাটায় মামাবাড়ির সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে, সেই পথ ধরে হু হু করে গাড়িতেও যাতায়াত করেন তাঁরা। ভোটের প্রচারে। বারবার চোখ চলে যায় বাবুপাড়ার দিকে রাস্তাটায়। যেখানটায় মামা বাড়ি। মন চাইছে না সেখানে যেতে, স্পষ্টতই বলছেন নীলাঞ্জন। দাদু নেই, দিদা নেই মামা অবশ্য থাকেন। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। শুধু তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দূরত্ব। তাই খুব সখ্যতাও নেই। তাই আর যাওয়া হয় না মামাবাড়িতে।
নীলাঞ্জন প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী কমল গুহের নাতি। মেয়ের ছেলে। ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই তাঁর মা ইন্দ্রাণী গুহ (ব্রহ্ম) যোগ দেন তৃণমূলে। বর্তমানে তিনি মহিলা তৃণমূলের রাজ্য সহ সভানেত্রী। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে নীলাঞ্জনও যোগ দেন তৃণমূলে। সেই সময় থেকে ভাই উদয়ন গুহের সঙ্গে ইন্দ্রাণী দেবীর দূরত্বটা বেড়ে গিয়েছে। ইন্দ্রাণী দেবীও এখন যান না ওই বাড়িতে। সল্টলেকের বাড়ি থেকে দিন কয়েক আগে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরবঙ্গে এসেছেন। ভোট প্রচারের জন্য ক্যাম্প তৈরি করেছেন জলপাইগুড়িতে প্রবাল রাহার বাড়িতে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলনেতা মুকুল রায়ের নির্দেশে সেখান থেকে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার শুরু করেছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের ঘাঁটি বলে পরিচিত, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জে দলের নির্দেশে প্রচার করবেন। ইন্দ্রাণীদেবী বলেন, “বাবা-মা নেই। তাই ও বাড়িতে আর যাব কী করতে? আর ভাইয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব রয়েছে। আমি মনে করি কমল গুহের অসমাপ্ত কাজ একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ করতে পারেন। তাই আমাদের সবার তাঁর পাশে থাকা উচিত।” দিদি-ভাগ্নের কথা শুনে খানিকটা আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েন ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, “সম্পর্ক কেউ কোনও দিন মুছে ফেলতে পারে না। যে দিন মনে হবে, ওদের সঙ্গে কথা বলব। দেখা হবে।” আবার বললেন, “তৃণমূলের হয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। প্রচার করছেন। ওঁরা ওঁদের কথা বলবে। আমরা আমাদের। বাকিটা মানুষ বিচার করবে। এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনও জায়গা নেই।”
কমল গুহের এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইন্দ্রাণী ব্রহ্ম। ছোট মেয়ে আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা। ছেলে উদয়নের সল্টলেকের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছেলে থাকেন। তিনি বেশির ভাগ সময় দিনহাটায় পৈতৃক বাড়িতেই থাকেন। এই বাড়িটা ঘিরে আবেগ সকলের। ইন্দ্রাণীর ছেলে নীলাঞ্জনেরও। তাই এক নাগাড়ে বলেন, “ছোট্টবেলায় কত এসেছি। মায়ের হাত ধরে, দাদুর হাত ধরে, মামার সঙ্গেও ঘুরে বেড়াতাম। দিনহাটা শহরের এমন গলি নেই, যা আজ আমার মনে নেই। দাদুর মৃত্যুর পরে আসা হয়নি।” নীলাঞ্জন একসময় ফরওয়ার্ড ব্লকই করতেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা কমিটি সদস্য হন। তিনি বলেন, “দাদুর কাজ করার অদম্য ইচ্ছে দেখেছি। কিন্তু সিপিএম দাদুকে কাজ করতে দেয়নি। এখন তৃণমূল সেই সব কাজ করছে।” তিনি বলেন, “যেখানে যাচ্ছি মানুষ মাকে দেখে বলছে, একদম কমল গুহের মতো ।”
ফব অবশ্য বলছে, সে ছাপ তো উদয়ন গুহের মধ্যে রয়েছে। কমল গুহের পরে তিনিও এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। লড়াই করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy