বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তির পাশে বসানো হচ্ছে বীরেন কুণ্ডুর মূর্তি। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তির পাশেই বসল কোচবিহার পুরসভার প্রয়াত চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডুর পূর্ণাবয়ব মূর্তি।
সোমবার কোচবিহার পুরসভার সামনে বসানো ব্রোঞ্জের ওই মূর্তির উদ্বোধন করেন পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পুরসভার সামনে বিধানচন্দ্রর মূর্তি ছাড়াও রয়েছে বীর চিলা রায়ের মূর্তি। ওই একই চত্বরে বীরেনবাবুর মূর্তি বসানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। অনেকেই আবার পুরসভার ওই উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছেন। বামেদের অভিযোগ, বিধানচন্দ্রর পাশে রাজ্যের কোনও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি মানানসই ছিল। ওই জায়গায় বীরেনবাবুর মূর্তি বসিয়ে বিধানচন্দ্রকে অসম্মান করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। বিজেপির তরফ থেকেও নিছক রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হয়েছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করেন, ওই মূর্তি ঠিক হয়েছে না ভুল হয়েছে, তার জবাব আগামী পুরসভা নির্বাচনেই দেবেন মানুষ। পুরসভার টাকাতেই ওই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবু থেকে শুরু করে পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য ওই কাজ যুক্তিযুক্ত হয়েছে বলেই মনে করেন। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “বীরেনবাবু চেয়ারম্যান হিসেবে পুরসভায় এত উন্নয়নের কাজ করেছেন, যা মানুষ কখনও ভুলতে পারবে না। শুধু তাই নয়, তিনি সবসময় মানুষের পাশে থাকতেন।” তাঁর কথায়, “হাজার বছরেও এমন সন্তানকে কোচবিহার পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।”
বামফ্রন্টের নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ ওই মূর্তি বসানো ঠিক হয়নি বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “ওই মূর্তি বসিয়ে প্রয়াত চেয়ারম্যানের কতটা সম্মান বেড়েছে জানি না, তবে বিধানচন্দ্রকে অবমাননা করা হয়েছে। যাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের ওই ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল।”
বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন মনে করেন, বীরেনবাবুকেই অপমান করল শাসক দল। তিনি বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহারের শেষ পেরেকটুকু এদিন পুতে দিয়েছে শাসক দল। বীরেনবাবু তাঁর রাজনৈতিক জীবদ্দশায় যাই করে থাকুক না কেন, ওই দু’জনের পাশে তাঁকে বসানো যায় না। এটা তাঁকে অপমান করা হয়েছে।” কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা শ্যামল চৌধুরীর সঙ্গে একসময় গাঢ় সখ্য ছিল বীরেনবাবুর। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “এটুকুই বলি, ওই মূর্তির জবাব আগামী নির্বাচনেই মানুষ দেবেন।”
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় এক মাস আগে ওই সাত ফুট উচ্চতার মূর্তি সাত লক্ষ টাকা খরচ করে বসানো হয়। এতদিন তা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়। এদিন ওই মূর্তির উদ্বোধন করা হয়। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা অভিযোগ করেন, “রাতের অন্ধকারে চুপিসাড়ে ওই মূর্তি পুরসভার সামনে বসানো হয়।” তিনি বলেন, “ওই মূর্তি বসানোর ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানা নেই। বৈঠকে মূর্তি বসানো নিয়ে আলোচনা উঠলে আমরা জ্যোতি বসুর নাম প্রস্তাব করি। সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হবে বলে জানানো হয়। পরে রাতের অন্ধকারে একটি মূর্তি বসানো হয়।”
পুরসভার চেয়ারম্যান দীপকবাবু অবশ্য দাবি করেন, মূর্তি উদ্বোধনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর যুক্তি, “প্রায় ২০ বছর বীরেনবাবু চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থাতেই তিনি মারা যান। শেষ দিন পর্যন্ত শহরের উন্নয়ন করেছেন, তা মানুষ জানেন। সে জন্য বোর্ড অব কাউন্সিলে তাঁর মূর্তি বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।” গত বছরের অগস্টে অসুস্থ হয়ে মারা যান বীরেনবাবু। তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী দীপক ভট্টাচার্যকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় তৃণমূল। দীপকবাবু চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে পুরসভার সামনে প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মূর্তি বসানোর ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy