Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
ঝড়ের ৩৬ ঘণ্টা পরেও মেলেনি সাহায্য

নেতাদের কাছে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ জানালেন দুর্গতেরা

তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও জেলা পর্যবেক্ষকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তেরা। ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডার গ্রামের ওই দুর্গতদের অভিযোগ, রবিবার রাতে ঝড়ের ৩৬ ঘণ্টা পরেও এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের দেখা নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও জেলা পর্যবেক্ষকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্তেরা। ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডার গ্রামের ওই দুর্গতদের অভিযোগ, রবিবার রাতে ঝড়ের ৩৬ ঘণ্টা পরেও এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের দেখা নেই। ক্ষতিপূরণ না মেলার আশঙ্কায় কেউ বাড়িঘর মেরামত করতেও পারছেন না। ত্রাণ পাঠানো নিয়ে অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক চূড়াভাণ্ডারের মেচের বাড়ি গ্রামে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ভাঙারহাট এলাকায় যান দলের জেলা পর্যবেক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী। এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ সামাল দিতে দুপুরে জেলা তৃণমূল সভাপতি দলের কর্মীদের ক্ষয়ক্ষতির ভিডিও রেকর্ডিং করার নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় দলের জেলা পর্যবেক্ষক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সৌরভবাবু বলেন, “জানি না ব্লক প্রশাসনের কর্তারা কী করছেন। ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটবে।” আর চন্দনবাবু বলেন, “গ্রামবাসীরা শুনেছেন, প্রশাসনের লোকজন সমীক্ষা করার আগে যদি ভাঙা ঘর মেরামত করেন তবে ক্ষতিপূরণ মিলবে না, এটা যেন না হয় সে জন্য দলের ছেলেদের বলেছি। আজ, বৃহস্পতিবার প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির ভিডিও রেকর্ডিং করা হবে। সমস্ত তথ্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরে পাঠাব।”

ব্লক প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য উদাসীনতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ময়নাগুড়ির বিডিও সংহিতা তলাপাত্র বলেন, “ত্রাণ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ওঁরা যা চাইছে সেভাবে পাঠানো হচ্ছে। এ দিন নিজে এলাকা ঘুরে দেখে আরও ত্রিপল, শিশুখাদ্য, পোশাক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। এ দিন রাতে অথবা বৃহস্পতিবার সেগুলি বিলি হবে। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ পাঠাতে অসুবিধা নেই।”

প্রশাসনের কর্তারা যে দাবিই করুন না কেন এলাকার বিপন্ন বাসিন্দারা কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাঁরা জানান, প্রশাসনের লোকজন কবে আসবে, সেই ভরসায় খোলা আকাশের নীচেই থাকতে হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে এখনও অবধি কোনও ব্যবস্থাই কার্যত নেওয়া হয়নি। এ দিন তৃণমূল নেতাদের হাতের কাছে পেয়েই তাই ত্রাণের অপ্রতুলতার কথা জানিয়েছেন চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের খোদ তৃণমূূলের উপ-প্রধান বিজয় শর্মাও। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার দিনভর চিত্‌কার চেঁচামেচির পরে রাতে চারশো গ্রাম ওজনের মাত্র চারটি গুড়ো দুধের প্যাকেট পাঠানো হয়েছে। অথচ এলাকায় ১-৫ বছরের মধ্যে অন্তত ৫০ জন শিশু আছে। ওই দুধ কোথায় বিলি করব?” স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মায়া রায়ের অভিযোগ, “প্রশাসনের লোকজন কী করছেন বুঝতেই পারছি না। অবস্থায় কেউ আর মাথা ঠিক রাখতে পারছেন না।”

গত মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে বিপন্ন বাসিন্দাদের অসহায় দশা দেখে ময়নাগুড়ি ব্লক তৃণমূল সভাপতি মনোজ রায় এবং দলের বিধানসভা উপ নির্বাচনের প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারী অভিযোগ করেন, প্রশাসনের কর্তারা ঠাণ্ডা ঘরে বসে ত্রাণ নিয়ে শুধু আশ্বাস দিচ্ছেন। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চক্রান্ত চলছে। এ দিন ওই দুই নেতার পাশে দাঁড়ান দলের জেলার পর্যবেক্ষক সৌরভবাবুও। তিনি বলেন, “ওঁরা ঠিক করেছেন। কাজ না হলে কেন বলবেন না?”

মঙ্গলবার আবার ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কালচিনির দলসিংপাড়া এলাকায়। এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ প্রায় দশ মিনিট ধরে ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় বহু ঘরের চাল। দলসিংপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শম্ভু জায়সবাল জানান, ঝড়ে দলসিংপাড়া চা বাগান, রণ বাহাদুর বস্তি, গোপাল বাহাদুর বস্তি, নয়া লাইন, দলসিংপাড়া বাজার এলাকায় প্রায় আড়াইশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয়া লাইন ও গোপাল বাহাদুর বস্তিতে দুটি আইসিডিএস কেন্দ্রের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। ব্লক প্রশাসনের হিসাবে ঝড়ের দাপটে প্রায় ২০ হাজার সুপারি গাছের ক্ষতি হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

no relief agitation storm victim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE