(উপরে) দার্জিলিঙে জিএনএলএফের সভা। (নীচে) কালিম্পঙে লেপচাদের সভায় তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া ও মন্ত্রী গৌতম দেব। নিজস্ব চিত্র।
সমতলে সভা করছেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। সে দিনই পাহাড়ে দু’টি এলাকায় পৃথক সভা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরোধী জিএনএলএফ এবং লেপচারা। দার্জিলিং কেন্দ্রে মোর্চা বিজেপি-র প্রার্থীকে সমর্থন করছে। জিএনএলএফ এবং লেপচারা সমর্থন করছে তৃণমূলকে। বৃহস্পতিবার কালিম্পং স্টেডিয়াম তথা মেলার মাঠে লেপচাদের আয়োজিত জনসভার ভিড় দেখে খুশি তৃণমূল।
বরাবর দেখা গিয়েছে পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ যে দলের হাতে থাকে তাঁরাই লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়। দীর্ঘদিন বাদে এ বার পাহাড়ের ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে প্রচার করছে সমস্ত দলগুলিই। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেপচা এবং তামাঙ্গদের উন্নয়নের জন্য আলাদা বোর্ড তৈরি করে দিয়েছেন। রাই, লিম্বু, মঙ্গরদের মতো অন্যান্য সম্প্রদায়ও সেই আশায় বুক বেঁধেছে। পাহাড়ে ভোট টানতে সেটাই এখন বড় অস্ত্র তৃণমূলের। সেই সঙ্গে জিএনএলএফ-এর সমর্থন পাচ্ছে তৃণমূল। বিজেপি এবং মোর্চা অবশ্য তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে লেপচাদের এ ধরনের সভাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। এ দিনের সভার উদ্যোক্তা ইন্ডিজিনাস লেপচা ট্রাইব্যাল অ্যাসোসিয়েশন ছাড়া দার্জিলিঙে অল ইন্ডিয়া লেপচা অ্যাসোসিয়েশন নামে ওই সম্প্রদায়ের আরেকটি সংগঠন রয়েছে। তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করছে। যদিও ইএলটিএ সংগঠনই বড়।
২০১৩ সালে রাজ্য সরকার মায়েল ল্যাং লেপচা ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করে। সম্প্রতি গঠন করা হয় তামাং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কারচারাল বোর্ড। অন্যান্যরাও অনেকে তাদের জন্য আলাদা উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবি করেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, তাঁরা চান পাহাড়ের সমস্ত জনজাতির অগ্রগতি। তাদের আদিবাসী মর্যাদা দিতে রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে বলা হয়েছে। সুষ্ঠু পানীয় জল সরবরাহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সড়ক-সহ পাহাড়ের উন্নয়য়নের জন্য রাজ্য সরকার সচেষ্ট। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই অনেকবার বার এসেছেন। গৌতমবাবু বলেন, “আগামী ১৩ এপ্রিল তিনি দার্জিলিঙে সভা করবেন। লেপচা, তামাং, ভুটিয়া, রাই সকলকেই সেখানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা ভাইচুংকে পাহাড় থেকে ১ লক্ষ ভোটে এগিয়ে দিন। আমরা তাঁকে রেকর্ড ভোটে জেতাতে চাই।” তবে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির দাবি, এএলটিএ তৃণমূলকে সমর্থন করায় তাদের কোনও সমস্যা হবে না।
রাজ্যে তৃণমূল সরকার তাঁদের সম্মান, ন্যায় দিয়েছে বলে এ দিন সভায় জানান, ইএলটিএ-র সভাপতি দর্জি টি লেপচা। এর পরেই লেপচাদের প্রতি তাঁর ঘোষণা, “কিং চুম ডারমিট মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় পাহাড় এবং লেপচাদের ভালবাসেন। তাঁর জন্য, তৃণমূল প্রার্থীর জন্য আপনারা খুশি মনে ভোট দিন সেই অনুরোধ করছি।” এর পরেই বিজেপি এবং মোর্চাকে আক্রমণ করে জানান, ওদের ইস্তাহারে পাহাড়ের উন্নয়নের কথা, লেপচা ও অন্য জনজাতিদের কথা কোথায় রয়েছে আতস কাচে চোখ দিয়ে খুঁজলেও মিলবে না। ২০০৯ সালে বিজেপি প্রার্থী যে আশ্বাস দিয়েছিল, এ বারও তাদের ইস্তাহারে তাই বলা হয়েছে। সে কারণে সকলেই যেন সাবধান হন। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এ দিনের সভার আয়োজন কোনও রাজনৈতিক দলের টাকায় হয়নি। প্রত্যন্ত এলাকায় যে গরিব পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন তারা নিজেদের খরচে সভায় এসেছেন। তামাংদের প্রতিনিধি তথা তামাং যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় মোক্তার একই সুরে তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দিতে আহ্বান জানান। সভার শেষে ভাইচুং বাসিন্দাদের কাছে যান। তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। ভাইচুং বলেন, “পাহাড়ের শান্তি, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্ররক্ষার জন্যই কাজ করতে চাই। এত দিন পাহাড় নিয়ে মিথ্যার রাজনীতি হয়েছে। এ বার নিজেদের অধিকার আদায় করার সময় এসেছে আপনাদের সামনে।’’
চকবাজারের এ দিনের সভায় সুবাস ঘিসিং অবশ্য ছিলেন না। এ দিন তাদের বক্তারা আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসনের লক্ষ্যে ষষ্ঠ তফসিল এবং পাহাড়ে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল পুনর্গঠনের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy