কার্নিভালের র্যালিতে মন্ত্রী গৌতম দেব ও ফিরহাদ হাকিম। পাশেই যানজটে থমকে স্কুলফেরত বাস। শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের জংশন এলাকায়। সোমবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
বেলা দু’টোর সময় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাছ থেকে মিছিল শুরুর কথা ছিল। তা শুরু হয় বেলা ৪ টা নাগাদ। ততক্ষণে হিলকার্ট রোডের ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে ওই রাস্তায় আটকে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষা স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে আসা স্কুলবাস। দু’ঘণ্টারও বেশি আটকে থেকে একসময় ক্লান্তিতে কেঁদে ফেলে খুদে পড়ুয়ারা। কেবল স্কুলপড়ুয়ারাই নয়, শিলিগুড়ি কার্নিভালের মিছিল ঘিরে ভোগান্তির শিকার হলেন বহু বাসিন্দা।
এ দিন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ ববি হাকিম উত্তরায়ণের হোটেল থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সামনে মিছিলে যোগ দিতে আসতে গেলে যান জটে তিনিও আটকে পড়েন। শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের উড়ালপুল দিয়ে তাঁর গাড়ি আনার ব্যবস্থা করতে হয়। তার জন্যও বিভিন্ন স্কুল বাস পুলিশ কমিশনারেটের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। উড়ালপুল থেকে র্যালির সূচনা মঞ্চ পর্যন্ত তাঁর গাড়ি যেতে পারেনি। তাঁকে হেঁটে আসতে হয়েছে। পুরমন্ত্রীর দাবি, “সামান্য সমস্যা হয়েছে। আমি কিছুটা হেঁটে এসেছি।” যান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের ডিসিপি শ্যাম সিংহের সামনেই পুলিশকর্মীরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন। শ্যামবাবু বলেন, “আমরা সঠিক ভাবে সবকিছু করতে চেষ্টা করছি। সোমবার এবং মঙ্গলবার দুই দিন শহরে যান চলাচলে কিছু বিধি নিষেধ করা হয়েছে।”
প্রধাননগর থানার কাছে হিলকার্ট রোডের মুখ থেকে মাল্লিগুড়ির দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকে গলি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। ডিভাইডার দিয়ে আলাদা করা হিলকার্ট রোডে পূর্বদিকের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া সকাল থেকেই। যানজট সামলাতে অনেক স্কুল বাস পুলিশ কমিশনারেটের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। সেখানেই বাসের মধ্যে আটকে থাকে সায়নী ভৌমিক, দেবমাল্য দাসদের মতো কচিকাঁচারা। কদমতলা বিএসএফ স্কুলের পড়ুয়া তারা। সেবক মোড়, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়, হাসমিচক এলাকাতেও শশী সিংহ, নিরঞ্জন মাহাতো, প্রীতম মণ্ডলদের মতো কচিকাঁচাদের নিয়ে আটকে পড়ে স্কুল বাস। দেড় থেকে দুই ঘন্টা যান জটে আটকে থাকতে হয় তাদের। স্কুল ছুটির পর প্রধাননগর এলাকা থেকে মেয়ে স্নেহাকে নিয়মিত অটোতে করে বাড়ি নিয়ে যান মহুয়া সাহা এ দিন ফেরর সময় অটো না চলায় হেঁটেই রওনা হন শক্তিগড় এলাকায় বাড়ি যেতে। মহুয়াদেবী বলেন, “এতদুর হেঁটে যেতে হবে। কখন পৌঁছব? মেয়েকে খাইয়ে আবার গৃহশিক্ষকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।”
বাড়ি ফেরার পথে স্কুল বাসে রাস্তায় আটকে থাকা শ্রীরাম কৃষ্ণ প্রণামি বিদ্যা নিকেতনের প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া প্রীতম, অনিকেত সরকাররা বলে, “খিদে পেয়েছে। স্কুল ছুটির পর এক ঘণ্টা ধরে বাসে বসে রয়েছি।” ” সয়নীদের স্কুল বাস হিলকার্ট রোডে ঢুকতে পারেনি। বর্ধমান রোড এসএফ রোড হয়ে শিলিগুড়ি থানার সামনে বাস পৌঁছয় বেলা সাড়ে ৪টা নাগাদ। এর পর সেখান থেকে দেড়, দুই কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁদের।
আশি ঘর থেকে প্রধাননগরে ২ মাসের অসুস্থ শিশুকে চিকিত্সকের কাছে দেখাতে এনেছেন বাবা-মা সুব্রত সাহা, দীপাদেবী। কোর্ট মোড় থেকে অটো না মেলায় ৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। ফেরার সময় রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে হেঁটে রওনা হন তাঁরা।
মাত্র এক দিন আগে ঘোষণা করেই এ দিন কোর্ট মোড় থেকে বিভিন্ন রুটের অটো চলাচল কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ তা জানা না থাকায় কোর্টমোড়ে অটোর জন্য অনেকেই দীর্ঘ অপেক্ষা করে হেঁটে বা রিকশায় গন্তব্যে রওনা হন। সুব্রত রায়, সীমা ঘোষদের মতো বাসিন্দা। সীমা দেবী কোর্চ মোড় থেকে সমর নগর যাওয়ার অটোর জন্য বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করেন। শেষে না পেয়ে আট, ড়য় বছরের ছেলেদের নিয়ে হাঁটা শুরু করেন। কোর্টমোড়, হাসমিচক, সেবকমোড়, মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ে প্রচুর মানুষ অপেক্ষা করেছেন অটো বা গাড়ির জন্য।
নির্মলা কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রীরা দার্জিলিং মোড়ে এক ঘণ্টারও বেশি আটকে থেকে হিলকার্ট রোড ধরে হাঁটতে শুরু করেন বাড়ির দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy