Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সুকনা

টুকতে না দেওয়ায় পড়ুয়াদের ভাঙচুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে

পরীক্ষার সময় টোকাটুকি করতে না-দেওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালাল একদল পড়ুয়া। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির সুকনায় একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঘটনাটি ঘটেছে। এ দিন কলেজে প্রথম অর্ধে চতুর্থ বর্ষের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়াদের সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা ছিল।

কলেজে ভাঙচুরের পরে। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

কলেজে ভাঙচুরের পরে। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

পরীক্ষার সময় টোকাটুকি করতে না-দেওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালাল একদল পড়ুয়া। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির সুকনায় একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ঘটনাটি ঘটেছে।

এ দিন কলেজে প্রথম অর্ধে চতুর্থ বর্ষের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়াদের সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা ছিল। পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের কড়া নজরদারিতে টোকাটুকি করতে পারেনি পড়ুয়ারা। ইলেকট্রিক্যাল-সহ কয়েকটি বিভাগে নকলের চেষ্টা করার অভিযোগে কয়েকজনের খাতা দু’আড়াই ঘন্টার জন্য আটকে রাখা হয়। তা নিয়েই পড়ুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। বেলা ১ টা নাগাদ পরীক্ষা শেষ হতেই কলেজের সেন্টার হলে তাণ্ডব শুরু করে তারা। সেখানে অন্তত ৭০ টি ফুলের টব তুলে আছাড় দিয়ে ভাঙে তারা। কিছু টব বাইরের রাস্তায় ছোড়া হয়। কয়েকটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, গ্রন্থাগারের কাঁচের দরজা, কাঁচের টেবিল ভাঙচুর হয়। ওই কাণ্ড দেখে ঘাবড়ে যান শিক্ষকদের অনেকেই। তাঁরা পুলিশে খবর দিতে বলেন।

পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ডিরেক্টর সুকুমার রায় চৌধুরী এ দিন কলেজের অন্যান্য শিক্ষক, আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, “অভিযুক্ত পড়ুয়ারা যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতে ওই পড়ুয়াদের কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কর্তৃপক্ষ তা দেখবে না।” তিনি আরও জানান, ছাত্রদের এ ধরনের বেপরোয়া মনোভাব কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। না হলে কলেজের যে সুনাম আছে, তা ক্ষুন্ন হতে পারে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘প্রতারণা’ করার জায়গা নয়। চতুর্থ বর্ষের সব পড়ুয়াদের অভিভাবককে এসএমএস করে ঘটনার বিষয়টি জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁরা যাতে ছেলেমেয়েদের এই ধরনের কাজে যুক্ত হতে নিষেধ করেন, তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কয়েকজন পুলিশ ঘটনার সময় কলেজ চত্বরে গেলেও, তাঁদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেননি কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে গোলমাল বাড়তে পারে, ওই আশঙ্কা করে নিজেরাই পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নামেন। উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীরা ততক্ষণে সেন্টার হলের নোটিশ বোর্ড, অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র, ‘সাজেশন বক্স’ ভাঙচুর করে। সেন্টার হলে ঢোকার পথে দরজার উপরে থাকা কাঁচ ভেঙে দেয়। হলের বাইরে ‘রিসেপসন’ তথা নিরাপত্তা রক্ষীদের বসার টেবিল, সেখানে রাখা যাবতীয় নথিপত্র, রেজিস্ট্রার খাতা ছিঁড়ে ফেলে। কিছু নথিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাইরে ক্যাম্পাসে থাকা অন্তত ৫টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ভেঙে দেয় তারা। একদল ছাত্র ততক্ষণে মূল ভবন লাগোয়া গ্রান্থাগার ভবনের একতলায় ঢুকে পড়ে। পাথর দিয়ে কাচের দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায়। কয়েক জন শিক্ষক বাধা দিতে গেলে পড়ুয়ারা ধাক্কাও দেয় বলে অভিযোগ। ১৫/২০ মিনিট ধরে তাণ্ডব চলে। বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী এবং অন্যান্য শিক্ষকেরা কোনও রকমে পরিস্থিতি সামলান।

কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন প্রথমার্ধে ইলেকট্রিক্যাল, টেলি কমিউনিকেশন, তথ্য প্রযুক্তি, বিবিএ, বিসিএ, বিটেক, কম্পিউটার-সহ অন্যান্য বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে ৪৮০ জন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা ছিল। ছাত্রছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, হোটেল ম্যানেজমেন্টের বিজনেস ‘ল’ বিভাগ-সহ কয়েকটি বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ঠিক মতো ক্লাস হয়নি। তা ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ‘ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ’ এবং পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য বাইরে যাতায়াত করতে হয়েছে। তাতে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের দাবি, পরীক্ষার সময় যাতে সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ মেলে, সেটাই তারা আশা করেছিলেন। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছিলেন বলে ছাত্রচাত্রীদের একাংশের দাবি। কিন্তু পরীক্ষা হলে কথা বলা দূর অস্ত, ঘাড় ঘোরাতেও দেওয়া হয়নি। তাতে অনেক পড়ুয়াই পাশ করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করছেন।। ডিরেক্টর সুকুমারবাবু ওই সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন। বরং শিক্ষকদের একাংশ পড়ুয়াদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি শুরুতেই না ঠেকানো হলে পরে আরও বাড়বে বলে তাঁরা এ দিন কর্তৃপক্ষের বৈঠকে জানিয়ে দেন।

অন্য বিষয়গুলি:

sukna engineering college cheating rampage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE