ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখা।
বুধবার রাতে ডুয়ার্সের মেটেলি থানার চালসায় ঘটনাটি ঘটেছে। ধৃত ব্যক্তি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চালসা শাখার ম্যানেজার। অন্যজন স্থানীয় একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। সিবিআই সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের নাম দীনেশ কুমার। ব্যবসায়ীর নাম সমর দেবনাথ। রাতেই চালসার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ধূপঝোরার একটি বেসরকারি রিসর্টে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সারা রাত সেখানেই ছিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার ফের এক দফায় চালসার রাষ্ট্রায়ত্ত শাখায় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে যায় সিবিআই। বেলা ১টায় ধূপঝোরা থেকে অভিযুক্তদের নিয়ে শিলিগুড়ি রওনা হয়ে যায়।
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ম্যানেজার দীনেশ কুমার ব্যাঙ্কের থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে থাকা একটি ওষুধের দোকানে মাঝেমধ্যেই যেতেন। দীনেশবাবু ব্যাঙ্ক ঋণের জটিলতা মিটিয়ে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেবেন বলে জানিয়ে ওই দোকানে ঘুষের টাকা পৌছে দিতে বলতেন বলে অভিযোগ।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযোগ আকারে সিবিআই এর শিলিগুড়ির দফতরে ঋণ গ্রাহকদের কয়েকজন মৌখিকভাবে জানান। বুধবার রাত ৯টা নাগাদ মেটেলির থানার পুলিশকে জানিয়ে ওই দোকানে ফাঁদ পাতে সিবিআই। চালসার মঙ্গলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ স্বরোজগার কর্ম প্রকল্পের ৭০ হাজার টাকা ঋণের জন্যে আবেদনকারীকে দ্রুত ওষুধের দোকানে সাড়ে তিনহাজার টাকা পৌঁছে দিতে বলেছিলেন ম্যানেজার দীনেশ কুমার। ওই যুবককে কাজে লাগিয়েই গত বুধবার রাতে ফাঁদ পাতে সিবিআই। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের নাম করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা জমা পড়তেই দোকান মালিককে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে চালসাতেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা ম্যানেজার দীনেশ কুমারকেও গ্রেফতার করা হয়।
ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ম্যানেজার উমেশচন্দ্র গুছায়েত এবং সহকারী আঞ্চলিক ম্যানেজার ওমপ্রকাশ মিশ্র চালসায় যান। উমেশবাবু এ দিন চালসার শাখায় বসে লোনের যাবতীয় নথি সিবিআই আধিকারিকদেরও দেখান। পরে তিনি বলেন, “৭০ হাজার টাকার যে সুনির্দিষ্ট বিএসকেপি ঋণের ক্ষেত্রে ম্যানেজার অভিযুক্ত হয়েছেন, সেই ঋণ এখনও বিলি হয়নি। তাই দুর্নীতির বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।”
উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বছর ৩৫ এর ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীনেশ কুমার চালসাতেই প্রথম ম্যানেজার পদে কাজ শুরু করেন। ২০১২র জুলাইতে তিনি চালসায় ম্যানেজার হিসাবে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরে কখনও কোন প্রশ্ন ওঠেনি বলেও জানান তিনি। তবে ম্যানেজারের পাশে ব্যাঙ্ক আধিকারিকেরা দাঁড়ালেও চালসার অনেক ঋণগ্রহিতাই ম্যানেজারের গ্রেফতারের বিষয়টি সমর্থনই করেছেন।
চালসার বাসিন্দা দেবায়ন ভট্টাচার্য বলেন, “ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্যে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার চরম অসহযোগিতার স্বীকার হয়েছিলাম। এ দিনের ঘটনা জেনে মনে হচ্ছে ঋণ প্রদানে বড় ধরনের দুর্নীতি চলেছে ব্যাঙ্কে।” এদিকে যে যুবককে দিয়ে ফাঁদ পাতে সিবিআই, তাঁর কথায়, “আমি চারচাকার ঠেলাগাড়িতে ঘুগনি বিক্রি করে রোজগার করি। ব্যবসার পরিকাঠামো বাড়াতেই ছমাস আগে ৭০ হাজার টাকা ঋণের আবেদন করি।” ঋণ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে ম্যানেজার ঘুষ চান বলে তাঁর অভিযোগ। তবে ওষুধ ব্যবসায়ী সমরবাবুর স্ত্রী পরিণীতা দেবীর দাবি, “আমার স্বামী নির্দোষ। উনি কোন ঝামেলায় জড়াতেন না। ব্যাঙ্কের একজন গ্রাহক মাত্র। এর বাইরে ওর সঙ্গে ব্যাঙ্কের কোনই সম্পর্ক নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy