গত আর্থিক বছরে যে প্রকল্পে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল কোচবিহার, বরাদ্দের অভাবে সেই একশো দিনের কাজ প্রকল্প থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এই জেলায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পে বকেয়ার পরিমাণ ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া বিভিন্ন চালু প্রকল্পের কাজের গতি বজায় রাখতে অন্তত ১০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে জবকার্ডধারী প্রায় দশ হাজার পরিবারের পারিশ্রমিক মেটানো নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলা প্রশাসন। চালু প্রকল্প গুলির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কেনা নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে জেলায়। বরাদ্দের অভাবে প্রকল্পের মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে জেলায়। ইতিমধ্যে তুফানগঞ্জের বালাভূতে মজুরি না পেয়ে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। মাথাভাঙার শিকারপুর এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসেও তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “একশো দিনের কাজের গতি বজায় রাখতে হলে জেলার জন্য এখন ৬০ কোটি টাকা দরকার। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে তৈরি শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে গত আর্থিক বছরে শীর্ষে ছিল কোচবিহার। ওই বছর জেলায় মোট ৫৪ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়সীমার দুই মাস আগেই তা পূরণ করা হয়। ওই আর্থিক বছরে অগস্ট মাস পর্যন্ত জেলায় মোট ২০ কোটি টাকা খরচ হয়। গড়ে আবেদনকারীরা ১৩ দিন কাজ পান। এদিকে চলতি আর্থিক বছরে ইতিমধ্যে ২৪ লক্ষ শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়ে গিয়েছে ৮০ কোটির বেশি। প্রশাসনের হিসেবে এখনও পর্যন্ত গড়ে ১৯ দিন কাজ পেয়েছেন আবেদনকারীরা। যদিও, বিপত্তির সূত্রপাত গত জুন মাস থেকে। সেই সময় থেকে জেলায় প্রয়োজন মতো বরাদ্দ পৌঁছানো বন্ধ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাই কাজের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে প্রশাসনের তরফে স্বীকার করা হয়েছে। ফলে গ্রামগঞ্জে রাস্তা তৈরি, পুকুর খোঁড়া, সংস্কারের মত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যার জেরে জেলায় গোটা প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলার একশো দিনের প্রকল্পের সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অগস্টে সর্বশেষ বরাদ্দ হিসাবে জেলায় ১৩ কোটি টাকা এসেছে, যা চাহিদার সিকিভাগও নয়। সেই সঙ্গে চলতি সেপ্টেম্বরে শ্রমদিবস বেড়ে যাওয়ায় বকেয়ার পরিমাণও বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। মাথাভাঙার শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অনিমা বর্মন (প্রামাণিক) বলেন, “আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮০ লক্ষাধিক টাকা পাওনা হয়েছে। এ নিয়ে বিক্ষোভ বাড়ছে। কবে টাকা পাওয়া যাবে তা জানা যায়নি। ফলে কতদিন একশো দিনের কাজ চলবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে রাজ্যের মাধ্যমে কেন্দ্র বরাদ্দ পাঠায়। জেলায় মোট জবকার্ডধারীর সংখ্যা ৫ লক্ষ ৯১ হাজার। তাঁদের মধ্যে তিন লক্ষাধিক পরিবারের পোস্ট অফিসে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জেলায় প্রকল্পের এমন হাল নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগ, “প্রকল্পের পুরো টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রকল্পে রাজ্য সরকারকে চাহিদামতো বরাদ্দ দিচ্ছে না।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে অবশ্য বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পের বরাদ্দ অন্য খাতে খরচ করেছে বলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy