(বাঁ দিকে) দিনহাটায় রাজ্য সড়কে অবরোধ। (ডান দিকে) মালদহে জাতীয় সড়কে বচসা। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর সময়ে রান্নার গ্যাস না পেয়ে জাতীয় ও রাজ্য সড়ক বিক্ষোভ দেখালেন গ্রাহকেরা। সোমবার সকালে মালদহে গ্যাস ডিলারের অফিসে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রাহকেরা। পরে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা জাতীয় সড়কও অবরোধ করেন। একই দাবিতে পথ অবরোধ হয় কোচবিহারেও। দু’জায়গাতেই বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘বুক’ করার পরে মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও সিলিন্ডার মিলছে না।
সোমবার সকাল সকাল সাড়ে ন’টা থেকে টানা দু’ঘণ্টা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ ছিল মালদহে। অবরোধের জেরে নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে দূরপাল্লার বাসযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গ্যাস না পেয়ে গ্রাহকেরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।”
গ্রাহকদের অভিযোগ, কেউ ২৫ দিন কেউ বা ৩০ দিন আগে গ্যাসের বুকিং করেছিলেন। সিলিন্ডার না পেয়ে কিছুদিন ধরেই গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। ক্ষোভের আঁচ পেয়ে এ দিন সোমবারের মধ্যে সব সিলিন্ডার সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে গ্রাহকদের দাবি। সেই মতো এ দিন সকালে ৯টা নাগাদ শতাধিক গ্রাহক মালদহ শহরের গ্যাস ডিলারের অফিসের সামনে জড়ো হন। যদিও, এ দিন দোকান খোলেনি বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে সকলকে সিলিন্ডার সরবারহ করা সম্ভব নয় বলেও নোটিশ টাঙানো ছিল বলে গ্রাহকরা দাবি করেছেন। এরপরেই বিক্ষোভ শুরু হয় মালদহে।
অবরোধ সরাতে এসে পুলিশকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। সরোজকুমার দাস, গোপাল গুপ্ত, ছন্দা বসাকের মতো গ্রাহকেরা অভিযোগ করে বলেন, “এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও গ্যাস পাচ্ছি না। কেন গ্যাস পাচ্ছি না তা জানতে গেলেও কোনও উত্তর মেলেনি।” গ্যাস এজেন্সির তরফে দাবি করা হয়, সিলিন্ডার মজুত না থাকার কারণে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এজেন্সির তরফে অশোক দাস বলেন, “সিলিন্ডার মজুত না থাকার কারণে নোটিশ টাঙিয়ে দোকান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে সরবরাহকারী সংস্থা থেকে সিলিন্ডার আসার খবর পেয়েই নোটিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।” যদিও, মালদহে ইন্ডিয়ান অয়েলের ডিপোর ডিপো ইনচার্জ চন্দন বিষয়ীর দাবি, “এখন গ্যাস সিলিন্ডারের কোনও সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত গ্যাস রয়েছে। শুধু মালদহের জন্য নয়, অন্য জেলাতেও সঙ্কটের কোনও কারণ নেই।”
তবে এ দিন একই দাবিতে অবরোধ হয় অন্য জেলাতেও। গ্যাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা কোচবিহারের দিনহাটায় মদনমোহন বাড়ি চৌপথি লাগোয়া মেইন রোডে অবরোধ করেন। ফলে এ দিন সকাল ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা দিনহাটা-কোচবিহার যান চলাচল ব্যহত হয়। রাস্তায় যানজট হওয়ায় পুলিশ এলেও অবরোধ ওঠাতে পারেনি। পরে দিনহাটার মহকুমা শাসক কাজলকান্তি সাহা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানর আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। মহকুমাশাসক বলেন, “সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুজোর আগে বকেয়া বুকিং মিটিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা মত সিলিন্ডার দেওয়ার চেষ্টা হবে।”
গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনহাটায় রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার পেতে প্রতি মাসেই দুর্ভোগে পড়তে হয়। বুকিংয়ের পর অন্তত দু’মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যদিও, বেশি টাকা খরচ করলে সহজেই সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন সকালে পুজোর আগে গ্যাস পাওয়া যাবে না বলে নোটিশ দেখে বিক্ষোভ শুরু করেন লাইনে দাঁড়ানো শতাধিক বাসিন্দা। দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে ভোগান্তি দিনহাটার দীর্ঘদিনের সমস্যা। পুজোর মুখে সেই সমস্যা চরমে উঠেছে।”
গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার এক কর্তা অরুণ সরকার বলেন, “শুধু সেপ্টেম্বরে প্রায় ১০ হাজার চাহিদা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত সিলিন্ডার এসেছে মাত্র ৬ হাজার। পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় সরবরাহ বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছিল।” তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, সপ্তমীর মধ্যে যতটা সম্ভব সিলিন্ডার সরবরাহ করা হবে। সিলিন্ডারের কালোবাজারির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও তিনি দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy