জল্পনা ছিলই। সেই জল্পনার অবসান ঘটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।
জোর আলোচনা শুরু হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী মাদারিহাটের সরকারি সভায় আজ, মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা হিসাবে ঘোষণা করতে পারেন। নিজেই সে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সোমবার বিকেলে শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “রাজ্য সরকার প্রস্তুত রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থার মতামত, রিপোর্ট প্রয়োজন। আমরা তারই অপেক্ষা করছি। ওঁরা (বিচার ব্যবস্থা) এর মধ্যেই এলাকায় আসবেন।”
আলিপুরদুয়ার পৃথক জেলা এখনই হচ্ছে না জানার পর আশায় বুক বেঁধে থাকা আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা খানিক চিন্তায়। নতুন করে প্রশাসনিক জটিলতায় না জেলা ভাগ পিছিয়ে যায়, সেই আশঙ্কাও করছেন ওই বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, “কবে বিচার ব্যবস্থার লোকজন ঘুরে সরকার কে রিপোর্ট দেবেন আর কবে জেলা ঘোষণা হবে তা তো স্পষ্ট হল না। বিষয়টি ঝুলে গেল বলেই মনে হচ্ছে।” কয়েকজন বাসিন্দা তো বলেই ফেলেন, “পুরোটাই রাজনীতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ভোট আসলেই এলাকায় জেলা ভাগের রব ওঠে। ভোট শেষ তো সব শেষ।”
মানুষের এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার কারণ আছে বলেই মনে করেন আরএসপি-র আলিপুরদুয়ারের পাঁচ বারের জয়ী প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাস। নির্মলবাবু গত দু’দশক ধরে আলিপুরদুয়ারকে পৃথক জেলা ঘোষণা করার জন্য তাঁদের বাম সরকারকে নিয়মিত চাপ দিতেন। যদিও নির্মলবাবুদের বড় শরিক সিপিএমের ‘বাধায়’ ক্ষমতায় থাকার সময় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে কালে ক্ষমতা হারানোর পর অবশ্য বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জেলার যৌক্তিকতা ধূপগুড়ির প্রকাশ্য সভায় মেনে নিয়েছিলেন। নির্মলবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থার এই যুক্তি দিলে তা মানা যায় না। কবে বিচারব্যবস্থার লোকজন আসবেন আর কবে জেলা হবে তা বুঝতে পারছি না। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার নিয়োগ করে অন্তত জেলা ঘোষণা করাই যেতে পারে। সে জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো বাম আমলেই তৈরি রাখা আছে।”
২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এলে জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে আলিপুরদুয়ার জেলা করার কথা বলেছিলেন। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জেলার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোন কোন এলাকা নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠন হবে তা ঠিক করতে দুটি বৈঠকও হয়। সরকারি নথিপত্রও তৈরি হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ দিন গুনতে শুরু করেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী ফালাকাটার জটেশ্বরে এসে নির্বাচনের পর জেলা ঘোষণা হবে বলেও জানিয়েছিলেন। তার পরে আলিপুরদুয়ার পুরসভা ভোটের পর তা হবে বলে তৃণমূল নেতারা প্রচারও করে। সদ্য আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রটিও তৃণমূলের দখলে এসেছে। তাই উত্তরবঙ্গে এসেই এবার মুখ্যমন্ত্রী জেলার ঘোষণা করবেন বাসিন্দা আশা করেছিলেন। তা না হওয়ায় আপাতত তাঁদের অপেক্ষাতেই থাকতে হবে।
আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় অবশ্য বলেছেন, “বিচার ব্যবস্থার প্রতিনিধিরা দ্রুত এসে যাতে রিপোর্ট দেন এবং তাতে জেলা ঘোষণার ক্ষেত্রে যাতে কোনও অসুবিধার কারণ না হয় তা রাজ্য সরকারকে দেখতে হবে।” আর তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি জহর মজুমদারের কথায়, “জেলা বিচারকহীন। জেলায় জেলাশাসক বা পুলিশ সুপার নিয়োগ করে কোনও লাভ নেই। এটা বাসিন্দাদের অন্তত বুঝতে হবে। আমাদের আশা, দ্রুত ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy