Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Doctor Rape-Murder Case

‘হাই প্রেশারের রোগী, যদি কিছু হয়ে যেত!’ এএসআই স্বামীর রুদ্ধশ্বাস দৌড় দেখে শঙ্কিত অনুপের স্ত্রী সন্ধ্যা

কলকাতা পুলিশের চতুর্থ ব্যাটালিয়নের এএসআই অনুপ কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। বাড়ি বালুরঘাটের একটি অখ্যাত গ্রাম বাদামাইলে। বুধবার সকাল থেকেই সে বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড়।

(বাঁ দিকে) কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্ত । স্ত্রী সন্ধ্যা দত্ত (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্ত । স্ত্রী সন্ধ্যা দত্ত (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

প্রদীপ্তা ঠাকুর
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ১১:২৯
Share: Save:

আরজি কর-কাণ্ডে গ্রেফতার সিভিক ভলান্টিয়ারের সূত্র ধরে তাঁকে ডেকেছিল সিবিআই। মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় তলব। কিন্তু সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেখেই দৌড়, দৌড়, দৌড়। পিছনে ছুটেছে গোটা সংবাদমাধ্যম। তা দেখে আরও গতি বাড়িয়েছেন কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) অনুপ দত্ত। দৌড়ে যে তিনি অনভ্যস্ত, তা বোঝা গেল তাঁর দু’বার হোঁচট খাওয়া দেখে। কিন্তু থামেননি অনুপ। দৌড়তে দৌড়তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একেবারে লিফ্‌টের মধ্যে গিয়ে থেমেছেন।

ওই দৃশ্যের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না কেউ। প্রাথমিক ভাবে বিস্মিতই হন সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির মানুষজন। পরে বিষয়টা বুঝতে পেরে হাসাহাসি শুরু হয়। অনুপকে নিয়ে সংবাদমাধ্যম থেকে সমাজমাধ্যমে শুরু হয় রসিকতা। যদিও বাড়ির লোকজন থেকে বালুরঘাটের প্রতিবেশীরা, সকলেই অনুপকে নিয়ে চিন্তিত। তাঁদের এক কথা, ‘‘সাদাসিধে মানুষটা আবার কী করল!’’ আর স্বামীর দৌড় দেখে চিন্তিত স্ত্রী বুধবার বলেছেন, ‘‘উনি খারাপ কিছু করতেই পারেন না! ক্যামেরা, সাংবাদিক দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছেন।’’

মঙ্গলবার ধরলে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে টানা পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের সূত্র ধরে এএসআই অনুপের ছিল দ্বিতীয় দিনের তলব। কিন্তু সিবিআই দফতরে অনুপের দৌড় দেখে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের গ্রামের বাড়িতে বসে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ এবং আশঙ্কায় ভুগছেন স্ত্রী সন্ধ্যা দত্ত। স্বামী কোনও খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, তা ভাবনাতেও আনতে পারেন না তিনি। সন্ধ্যা বলেন, ‘‘ওঁর শরীরটা ভাল নেই। হাইপ্রেশার, সুগারের সমস্যা। (মঙ্গলবার) রাতে কথা হল। মনে করে ওষুধ খেতে বললাম।’’ তাঁর বিশ্বাস, ‘‘উনি এমন কোনও কাজ করতে পারেন না যাতে সিবিআই ওঁকে ডাকতে পারে। কোনও দিন খারাপ কাজের সঙ্গে আপস করেননি। বিভাগীয় তদন্তের স্বার্থেই ওঁকে ডেকেছে বলে মনে হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।’’ স্বামীকে নিয়ে এত আলোচনায় বিরক্ত সন্ধ্যা অভিযোগের সুরে বলেছেন, ‘‘এ সবের কোনও প্রয়োজন ছিল না। মানুষ সব কিছুকেই রং চড়িয়ে দেখতে চায়। যে ভাবে সবাই ওঁকে ঘিরে ধরেছিলেন, তাতে প্যানিক অ্যাটাকে যদি কিছু হয়ে যেত? ক্ষতিটা কার হত? আমারই তো!’’

কলকাতা পুলিশের চতুর্থ ব্যাটালিয়নের এএসআই অনুপ কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন। বাড়ি বালুরঘাটের এক অখ্যাত গ্রাম বাদামাইলে। বুধবার সকাল থেকেই সেই বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড়। টিভিতে অনুপকে ওই ভাবে দৌড়তে দেখে অবাক সকলে। তাঁদের সকলেরই দাবি, ‘পরোপকারী মানুষ অনুপ।’ গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে কলকাতায় যেতে বলেন। আরজি কর মেডিক্যালে কলেজে চেনাজানার সূত্রে সেখানে তাঁদের চিকিৎসা করাতে সাহায্য করেন। সুমিতা সরকার নামে এক আত্মীয়ার কথায়, ‘‘উনি সহজসরল মানুষ। গ্রামে এলে সকলেরই খোঁজখবর করতেন। কারও কিছু হলে বলতেন, ‘আরজি করে যেয়ো। চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দেব।’ আমরা গ্রামের মানুষ তো এত কিছু জানি না। কোথায় লাইনে দাঁড়াতে হয়, কোথায় গেলে টিকিট কাটতে হয়, সে সব বলে দিতেন। ওই ভাবে ওঁকে দেখে খারাপ লেগেছে।’’

কলকাতা পুলিশের কর্মীদের সংগঠন ‘ওয়েলফেয়ার কমিটি’-র ছাতার নীচে ছিলেন আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। এএসআই অনুপ সেই কমিটির সদস্য। সিবিআই সূত্রের খবর, ধৃতের সঙ্গে অনুপের ‘চেনাজানা’ ছিল। মঙ্গলবার সাংবাদিকেরা সে সব নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক ছুটে সিজিও কমপ্লেক্সের লিফ্‌টে ঢুকে যান অনুপ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE