Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Labourer

পাটাতনের নীচে বসে ১২০০ কিমি

যে ভাবে তাঁরা ফিরেছেন শুনে কপালে চোখ হরিশ্চন্দ্রপুরবাসীর।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

বাপি মজুমদার
হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৭
Share: Save:

সম্বল বলতে শুকনো কিছু খাবার আর জলের বোতল। আর তা নিয়েই দু’দিন ধরে সাড়ে বারোশো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মথুরা থেকে প্রথমে কাটিহার এবং সেখান থেকে হেঁটে শুক্রবার দুপুরে হরিশ্চন্দ্রপুরে ফিরলেন ২৮ জন শ্রমিক। তার পরই অবশ্য নাকা চেকিংয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশ। পথ আটকাতেই কেঁদে ফেলেন ধকলে কাহিল, অবসন্ন নজরুল ইসলাম, হবিবুর রহমানরা। তাঁদের একটাই আর্জি, ‘‘আমাদের আর ফেরত পাঠাবেন না।’’ না, তাঁদের অবশ্য আর ফেরত পাঠানো হয়নি। হাসপাতাল হয়ে এখন তাঁদের ঠাঁই হয়েছে কোয়রান্টিন শিবিরে।

তবে যে ভাবে তাঁরা ফিরেছেন শুনে কপালে চোখ হরিশ্চন্দ্রপুরবাসীর। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ট্রাকে তাঁদের মাথার উপর ছিল কাঠের পাটাতন। পাটাতনের উপরে বস্তা এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে দমবন্ধ না হয়ে যায়। সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার, জলের বোতল। প্রাতঃকৃত্য সারারও উপায় নেই। এ ভাবেই উত্তরপ্রদেশের মথুরা থেকে কাটিহার পৌঁছন তাঁরা ৩৯ জন। সেখানে নেমে যান ১১জন। এরপর কাটিহার থেকে পায়ে হেঁটে হরিশ্চন্দ্রপুরে পৌঁছলেন ওঁরা। তাঁদের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। স্ক্রিনিং করার পর তাঁদের তালগাছি সিনিয়র মাদ্রাসায় কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়। চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাসপাতাল জানিয়েছে, আপাতত কারও কোনও সমস্যা নেই।’’

হরিশ্চন্দ্রপুরের তালগাছি, ছঘরিয়ার বাসিন্দা এই সব শ্রমিকরা মথুরায় নির্মাণ শিল্পের কাজে যুক্ত। একেই কাজ বন্ধ। টাকাপয়সাও শেষ। তাই ১৪ এপ্রিল লকডাউন উঠলে বাড়ি ফিরবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের দিন বাড়ায় মাথায় হাত পড়ে তাঁদের। তাই যে ভাবে হোক বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন তাঁরা।

তাঁরা জানালেন, প্রথমে কয়েকদিন খাবার জুটলেও পরে তা পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপরেই তাঁরা হরিশ্চন্দ্রপুরে তাঁদের পরিচিতদের দ্বারস্থ হন। মথুরার এক পরিবহণ ব্যবসায়ী জানান, এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা পেলে তাঁরা শ্রমিকদের কাটিহারে পৌঁছে দেবেন। এরপর ভাড়ার টাকা চালকের অ্যাকাউন্টে পাঠান পরিচিতেরা। তারপর বুধবার বিকেলে ট্রাকটি তাঁদের নিয়ে রওনা হয়। এ দিন ভোররাতে কাটিহারে নামেন তাঁরা।

নজরুল, হবিবুর জানান, ওখানে থাকলেও মরতে হত। তাই এ ভাবেই নিয়েই রওনা দেন। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওরা ফিরেছেন, এটা স্বস্তির। কিন্তু তা করতে গিয়ে ওঁরা খুব বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Labourer West Bengal Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy